| |
               

মূল পাতা জাতীয় নিজেকে কখনই প্রধানমন্ত্রী ভাবি না, জনগণের সেবক মনে করি : প্রধানমন্ত্রী


নিজেকে কখনই প্রধানমন্ত্রী ভাবি না, জনগণের সেবক মনে করি : প্রধানমন্ত্রী


রহমত নিউজ ডেস্ক     15 May, 2023     08:49 PM    


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারিরা সর্বদা জনগণের সেবা করতে বাধ্য। তাই, আমি চাই, আপনারা (নতুন কর্মকর্তারা) জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করুন। বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমি নিজেকে কখনই প্রধানমন্ত্রী ভাবি না। আমি নিজেকে জনগণের সেবক মনে করি। তাদেরও সেবা করাই আমার একমাত্র দায়িত্ব।নতুন কর্মকর্তাদের তৃণমূলে গিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

আজ (১৫ মে) সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১২৭তম, ১২৮তম ও ১২৯তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সার্টিফিকেট প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী- জয় বাংলা (১২৭তম), রঙিন বাংলাদেশ (১২৮তম) ও গর্বিত বাংলাদেশ (১২৯তম) শীর্ষক তিনটি স্মারক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) তত্ত্ববাবধানে সম্পন্ন একটি গবেষণাপত্রের মোড়ক উন্মোচণ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মমিনুর রশিদ আমিন। এ সময় বিসিএস প্রশাসন একাডেমির ওপর একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

গত ১৪ বছর ধরে সরকার পরিচালিত দেশের অব্যাহত উন্নয়নের ধারা কোনোভাবেই যাতে ব্যাহত না হয় সেই লক্ষে দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-বিসিএস ক্যাডারের নতুন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের (বিসিএস কর্মকর্তাদের) আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। কারণ, গত ১৪ বছর ধরে আমরা দেশের যে উন্নয়ন করেছি, তা কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।নবীন অফিসারদের ১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা কল্পনা করতে বলেন। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা ও ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার এবং অন্যান্য খাতে বাংলাদেশ কি পরিবর্তিত হয়নি? বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন কর্মকর্তাদের দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময়ে দেশে ৯ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল এবং দেশ স্থিতিশীলতার সাথে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। একাত্তরের পরাজিত শক্তি আবারও দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি দেশে পরিণত করতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষে এই কাজ আরো তরান্বিত করতে নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  

শেখ হাসিনা বলেন, বিসিএস কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন, যাতে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারে ও সামাজিক হুমকি থেকে দূরে থাকতে পারে। মানুষ যাতে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে পারে তা নিশ্চিত করুন। কারণ, এসব হুমকি সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। আপনাদের এ বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা উচিত। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই, অপচয়ও বন্ধ করতে নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে কঠোরতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে-যাতে করে আমরা আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারি।’ নতুন কর্মকর্তাদের ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই কর্মকর্তাগণ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নেবেন।২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৪ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সরকার দেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা ২৯ বছর (১৯৭৫-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৮) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি কর্মকর্তাদের তাদের সকল স্তরের কাজে সততা বজায় রাখতে এবং দেশ ও জনগণকে ভালোবাসতে বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের সব সময় সততা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার সাথে চলতে হবে। আপনাদের দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’সরকারি চাকরিজীবীদের ভুলে গেলে চলবে না যে- তাদের বেতন-ভাতা আসে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক ও গণমানুষের পকেট থেকে।  আমাদের সব বেতন-ভাতা আসে সেই টাকা থেকে, যা দেশের জনগণের কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়। তাই, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সকলের কর্তব্য। এই বিষয়টি আপনাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে। মানুষের সেবা করা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু যে কতটা সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন- তা জানতে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’,  ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ১৯৪৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর লেখা বইয়ের ভলিউম পড়ার জন্য নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি পড়ারও আহ্বান জানান।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করা। সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর দেয়ার জন্য আশ্রায়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সারাদেশে আবাসন প্রকল্প ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করা এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে দুস্থ মানুষকে সর্বাত্মক সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে করেন, যাতে করে বাংলাদেশে কোন খাদ্য সংকট দেখা দিতে না পারে।