| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন বেফাকে ভালো ফলাফলের জন্য ‘সানাবিয়্যাহ উলইয়া’র শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রস্তুতি নিবে


বেফাকে ভালো ফলাফলের জন্য ‘সানাবিয়্যাহ উলইয়া’র শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রস্তুতি নিবে


মুফতি কামরুল ইসলাম     14 February, 2022     07:25 PM    


আলহামদুলিল্লাহ, বৈশ্বিক মহামারী মরণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারির মাঝেও আমাদের কওমী মাদরাসাগুলো খোলা ছিল। অল্প অল্প করে, ধীরে ধীরে আমরা ১৪৪২/৪৩ হিজরী শিক্ষাবর্ষের বেফাক বোর্ড কর্তৃক সিলেবাস শেষ করতে পেরেছি। মাহে রজব শুরু হয়ে গেল। কেন্দ্রীয় পরীক্ষা অতি সন্নিকটে। এ এক মাসে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও সফলতা অর্জনের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। সময় একদমই নষ্ট করা যাবে না। তবে যে পক্রিয়ায় চেষ্টা-সাধনা করলে বা যে পদ্ধতি অবলম্বন করে মেহনত করলে পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করতে পারবে, নিন্মোক্ত তার কয়েকটি টিপস পরীক্ষার্থীদের উপকার্থে তুলে ধরা হলো।

* নিজামুল আওক্বাত তৈরী করা। (খেয়ার চলাকালীন সময়ে কোন কিতাব কখন পড়বে তা রুটিন করে নেগরান উস্তাদকে অবহিত করবে, যাতে নেগরান উস্তাদ সে রুটিন মোতাবেক তোমার নেগরানী করতে পারে।)

* রিপোর্ট খাতা তৈরী করা। ( দৈনন্দিন কোন কিতাব থেকে কতটুকু অধ্যয়ন করেছ তা রিপোর্ট খাতা লিখে রাখবে এবং মুশরিফকে দেখাবে, যাতে তিনি সেখান থেকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চাইলে নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করতে পারেন এবং তোমাকে সুপরামর্শ দিতে পারেন।)

* বিগত বছরগুলোর বেফাকের প্রশ্নপত্র দেখে সে অনুপাতে নিজের অধ্যয়নকে বিন্যস্ত করে দৈনন্দিন কিতাব মুতালাআ করবে।

* প্রতিদিন প্রত্যেক কিতাব থেকে ১টি করে প্রশ্নের উত্তর আরবী ভাষায় লিখে নিজের মুশরিফকে দেখাবে এবং যে ভুলগুলো তিনি চিহ্নিত করে দিবেন তা শুধরিয়ে নেবে।

* প্রত্যেক কিতাবের কম্পক্ষে দুই তৃতীয়াংশ অবশ্যই হল করবে, তবে কিতাবগুলো সহজে আয়ত্ত করার নিমিত্তে নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো কার্যকরি সহায়ক হবে মনে করি;

১. শরহে বেকায়া কিতাব :

ক. মূল ইবারত হল করার পাশাপাশি সংক্ষেপে প্রত্যেক অধ্যায়ের মৌলিক বিষয়গুলো যেমন, আভিধানিক অর্থ, পারিভাষিক অর্থ, আরকান, শারায়েত, সুনান, ওয়াজিবাত ইত্যাদি ভালোকরে মুখস্থ করবে।

খ. মুসান্নিফ রাহমাতুল্লাহি আলাইরি বিষয়ভিত্তিক দীর্ঘ আলোচনার পর “মুখতাসার বেক্বায়া”-র ইবারত উল্লেখ করে সংক্ষেপে উক্ত আলোচনার যে ইতি টেনেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটি ভালোকরে আত্মস্থ করবে।

গ. ইখতিলাফ বিশিষ্ট মাসআলাসমূহ চিহ্নিত করে ইমামদের মতামত ও মতের স্বপক্ষে দলীল ইত্যাদি বিষয়গুলা ভালোকরে ইয়াদ করবে।

২. মুখতাসারুল মা‘আনী কিতাব :

ক. উক্ত কিতাবের খুতবাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় খুতবাটি পরিপূর্ণরূপে আয়ত্ত করবে। বিশেষভাবে ইবারতে গুচ্ছিত তাশবীহ ও ইসতেয়ারার সংজ্ঞা, প্রকার এবং সেগুলো ইবারতে কিভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলো তা ভালকরে বুঝে নিবে।

খ. বালাগাতের মূল মাসায়েল “তালখীস”-এর ইবারত থেকে বুঝার চেষ্টা করবে এবং যতসম্ভব তালখীসের ইবারতগুলো সংক্ষেপে মুখস্থ করে নিবে।

গ. কিতাবে উল্লেখিত সকল কবিতা এক জায়গায় একত্রিত করে সেগুলোর শুদ্ধ তাশকীল, তরজমা ও موضع استشهاد ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালোকরে আত্মস্থ করবে।

৩. নূরুল আনওয়ার কিতাব :

ক. “কিতাবুল্লাহ” অংশে উসূলে ফিক্হের যত পরিভাষা আছে তা ঐ বিষয়ের ওপর সংক্ষেপে লেখা যে কোন কিতাব (যেমন, مبادي الأصول বা মাওলানা আব্দুল হাফিজ সাহেবের লিখিত أشرف التحريرات في تعريف المصطلحات) হতে প্রত্যেক পরিভাষার সংজ্ঞা ও উদাহরণগুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করবে।

খ. কিতাবের খুতবা পরিপূর্ণরূপে আয়ত্ত করবে এবং আল-মানারের মাসআলা বুঝার জন্য নূরুল আনওয়ার কিতাবের যতটুকু ব্যাখ্যা প্রয়োজন ততটুকু ভালোকরে মুখস্থ করবে।

গ. কিতাবে উদাহরণসরূপ বর্ণিত কুরআন-হাদীসের সকল নসূস নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে সাজাবে এবং সে হিসেবে তা আয়ত্ত করবে। ১. بيان المسئلة ২. اختلاف الأئمة ৩. أدلة الخصم ৪. أدلة الأحناف ৫. الجواب عن أدلة الخصم ৬. ترجيح الراجح

৪. সিরাজী কিতাব :

ক. আসহাবে ফারায়েযের সকল হালত, তাসহীহ ও রদ-এর সকল উসূল মিছালসহ মুখস্থ করবে।

খ. المسئلة المنبرية - المسئلة الأكدرية সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বাহাস যেমন, موانع الإرث ـ عصبة ـ حجب ـ عول ইত্যাদি আলোচনাগুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করবে।

গ. দৈনিক কম্পক্ষে ১টি করে মাসআলা/অংক করে সিরাজী কিতাবের উস্তাদকে দেখাবে। এর জন্য মাওলানা আব্দুল হাফিজ সাহেবের লিখিত “ التمارين المشقية للمسائل الفرضية ” দেখা যেতে পারে।

৫. তরজমাতুল কুরআন মাজীদ :

ক. প্রথমত সকল আয়াতের তরজমা ভালকরে আয়ত্ত করবে।

খ. শানে নযূল বিশিষ্ট আয়াতগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর শানে নুযূল ভালোকরে মুখস্থ করবে।

গ. হল্লে লুগাতের ক্ষেত্রে শব্দটি فعل হলে, তার সীগাহ, বাহাস, বাব, মাদ্দা, জিন্স ইত্যাদি বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে। আর اسم হলে واحد ـ جمع ـ مصدر ـ مشتق ـ جامد নির্ণয় করার পর তার তারকীবগত অবস্থান কী তাও জানতে হবে।

৬. মাকামাতে হারীরী কিতাব :

ক. প্রথমত সকল ইবারতের শুদ্ধ তাশকীল ও সুন্দর তরজমা ভালোকরে আয়ত্ত করবে।

খ. একবচন শব্দগুলোর বহুবচন আর বহুবচন শব্দগুলোর একবচন কী? তা ভালোভাবে জেনে নিবে।

গ. তৌফিক অনুযায়ী ألفاظ مفردات এর হল / তাহকীক মুখস্থ করবে।

পরিশেষে বলব, মাহে রজবের মূল্যবান সময়গুলোকে অযথা নষ্ট না করে সর্বদা কুতুব বীনীতে নিজেকে মশগুল রাখবে। পাশাপাশি মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করবে, তিনি যেন তোমার ওপর সুস্থতার নে’মত বহাল রাখেন এবং পরীক্ষায় সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দেন।

আরো পড়ুন : সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান; ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, আশরাফাবাদ, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা