| |
               

মূল পাতা জাতীয় রাজনীতি নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে খেলাফত আন্দোলনের ৬ প্রস্তাব


নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে খেলাফত আন্দোলনের ৬ প্রস্তাব


রহমত ডেস্ক     03 January, 2022     09:05 PM    


একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপের সপ্তম দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে সার্চ কমিটি গঠনসহ ছয় দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। আজ (৩ জানুয়ারি) সোমবার সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সাথে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে তারা এসব প্রস্তাব পেশ করেন। সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন, দলের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা সানাউল্লাহ, মাওলানা সাঈদুর রহমান, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন ও আলহাজ আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি। এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবগণ  উপস্থিত ছিলেন। সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিং করেন খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন।

নেতৃবৃন্দকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন যাতে গঠন করা যায় সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সুচিন্তিত মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । তাই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলকে জনকল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে হলে পরমত সহিষ্ণুতাসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান। সুস্থ রাজনীতির বিকাশে দল পরিচালনায় নীতি ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। রাজনীতিতে সহমত সংস্কৃতি গড়ে তোলা অপরিহার্য, উল্লেখ করে রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

No description available.

আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন না হওয়া। এতে গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেমন বিপন্ন হয়ে পড়েছে তেমনি বাংলাদেশের ভাবমর্যাদারও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ অব¯হা থেকে উত্তরণের জন্য একটি আমানতদার,শক্তিশালী, সক্ষম, নিরপেক্ষ, দক্ষ ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা আবশ্যক। যে নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হবে এবং তার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটের অবসান ঘটবে। এ জন্য গোটা জাতি এখন তাকিয়ে আছে রাষ্ট্রের অভিভাবক মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যকর ভূমিকার দিকে। আমরা আশা করি বর্তমান দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রস্তাবাবলি সহায়ক হবে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কিত বিতর্কের চির অবসান ঘটবে।

খেলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ দেশ ও জাতির স্বার্থে অবাধ, সুষ্ঠু, অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যে সকল দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি স্থায়ী আইন প্রণয়ন করাসহ ৬ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রস্তাবাবলি :-

১. নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত একটি আইন করার যে নির্দেশনা সংবিধানে আছে, সে অনুযায়ী আজ ৫০ বছরেও কোনো স্থায়ী আইন করা হয়নি। আইন হলে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কখনো বিতর্ক হতো না । নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের অনুপস্থিতিতে সার্চ কমিটি গঠন করতে হচ্ছ্।ে সার্চ কমিটি নির্দলীয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। অতএব দেশ ও জাতির স্বার্থে অবাধ, সুষ্ঠু, অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যে সকল দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি স্থায়ী আইন প্রণয়ন করা সময়ের দাবী।

২. সৎ, নিষ্ঠাবান, যোগ্যতাসম্পন্ন এবং নিরপেক্ষ-নির্দলীয় ব্যক্তির সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা। কমিশনারগণ নীতিগতভাবে আল্লাহ ভীরু, বিজ্ঞ,ক্ষমতাসম্পন্ন, সৎসাহসী ও ন্যায়-নীতি পরায়ন হওয়া অতীব জরুরী। এমন গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আপনার দূরদর্শিতায় সংবিধান মতে কমিশন গঠন করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

৩. নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনে সাধারণত সবাই নতুন থাকেন। তাই নবীন-প্রবীনের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে।

৪. বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মত বাংলাদেশেও যেন নির্বাচন কমিশন বাস্তবেই স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়।

৫. ধর্মবিদ্বেষী, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, কালোটাকার মালিক, অবৈধ সম্পদকে বৈধকারী, খুনি, সন্ত্রাসী ও সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী এবং ঋণখেলাপীদের সাথে জড়িত পরিবারবর্গকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকেও। নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি মেডিক্যাল টেষ্টে মদ, গাঁজা ফেন্সিডিল, হিরোইনসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহনের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলেও তার সদস্যপদ বাতিল করা বাঞ্চনীয়।

৬. নির্বাচন কমিশন কর্র্তৃক রাজনৈতিক দলগুলোর সকল কমিটিতে ৩৩% মহিলা সদস্য রাখা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে যা নারীদের জোর করে রাজনীতি করতে বাধ্য করার শামীল। তাই এই ধারাটি ঐচ্ছিক রাখার আবেদন করছি।

No description available.

গত ২০ ডিসেম্বর প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে সংলাপে বসে রাষ্ট্রপতি হামিদ। এখন পর্যন্ত মোট ১১ টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল ৪ জানুয়ারি সংলাপ হবে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সন্ধ্যা সাতটায়। ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা হবে জাতীয় পার্টি (জেপি) এর সাথে সংলাপ এবং সন্ধ্যা সাতটায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সাথে। ৬ জানুয়ারি গণফ্রন্টের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটির্র (এলডিপি) সাথে সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপের কথা রয়েছে। এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে আলোচনা হবে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এর সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায়। ১০ জানুয়ারি রোজ সোমবার সংলাপ হবে জাতীয় পার্টি (জেপি) এর সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাথে সন্ধ্যা সাতটায়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি 'সার্চ কমিটি'র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।