মূল পাতা আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলার যাত্রীদের ভয়াবহ নির্যাতন : হাঁটুতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, পান করে হয়েছে টয়লেটের পানি
রহমত নিউজ 06 October, 2025 12:48 PM
ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সেনাদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীরা ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, আটক থাকা অবস্থায় ইসরাইলি নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন। ত্রাণ নিয়ে গাজা অভিমুখে যাওয়ার সময় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর থেকে এসব অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়।
অধিকারকর্মীরা বলেন, তাদের হাঁটুতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। তিন দিন তাঁরা কিছু খেতে পাননি। এমনকি টয়লেটের পানি পান করে থেকেছেন।
গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে থাকা মানুষেরা গাজার ওপর আরোপিত নৌ–অবরোধ ভাঙতে চেয়েছিলেন। তাঁরা অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতীকী পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। তবে ইসরাইলি বাহিনী সে নৌযানগুলোকে আটকে দেয় এবং অধিকারকর্মীদের আটক করে। গত বুধ থেকে শুক্রবারের মধ্যে ফ্লোটিলা নৌবহরে থাকা প্রায় ৪৫০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অধিকারকর্মীরা বলেন, তাঁদের হাঁটুতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। তিন দিন তাঁরা কিছু খেতে পাননি। এমনকি শৌচাগারের পানি পান করে থেকেছেন।
ইতালীয় সংবাদ সংস্থা এএনএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল রোববার ইতালির রোমে ফিরে অধিকারকর্মী চেজারে তোফানি বলেন, আমাদের সঙ্গে ভয়ংকর ব্যবহার করা হয়েছে…সেনাদের হেফাজতে থাকার পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমাদের হয়রানি করা হয়েছে।
ইতালির ইসলামিক কমিউনিটিজ ইউনিয়নের সভাপতি ইয়াসিন লাফরাম অধিকারকর্মীদের সঙ্গে মিলানে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করেছে। তারা আমাদের ওপর অস্ত্র তাক করে ছিল। নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ বলে যে রাষ্ট্র দাবি করে, সেখানে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।’ ইতালির স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালীয় সাংবাদিক সাভেরিও তোমাসি গত শনিবার রাতে ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। তিনি বলেন, ইসরাইলি সেনারা আটক অধিকারকর্মীদের ওষুধ দেননি এবং তাঁদের সঙ্গে ‘বানরের মতো আচরণ’ করেছেন।
সাভেরিও তোমাসি আরও বলেন, প্রহরীরা আটক অধিকারকর্মীদের নিয়ে বিদ্রূপ করছিলেন, হাসাহাসি করছিলেন। এই অধিকারকর্মীদের মধ্যে ছিলেন জলবায়ুবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা ও কয়েকজন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা।
ইতালীয় সাংবাদিক লরেনজো ডি’আগোস্তিনো বলেছেন, ‘ইসরায়েলিরা আমার জিনিসপত্র ও অর্থকড়ি চুরি করেছে।’
ডি’আগোস্তিনোকে গত শনিবার ইসরায়েল থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, আটক কর্মীদের ওপর কুকুর লেলিয়ে দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। সেনারা বন্দীদের দিকে বন্দুকের লেজার লাইট তাক করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
ফ্লোটিলা থেকে আটক হওয়ার পর ছাড়া পাওয়া অধিকারকর্মীরা এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, জলবায়ুবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁরা বলেছিলেন, গ্রেটাকে মাটিতে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয়েছে, ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করা হয়েছে এবং মিথ্যা প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
পাওলো ডি মোনটিস নামের আরেক অধিকারকর্মী নিরাপত্তারক্ষীদের খুবই নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
পাওলো ডি মোনটিস বলেন, তাদের (ইসরারাইলি) দিকে তাকাতে দিত না, সব সময় মাথা নত রাখতে হতো। যখন আমি তাকালাম, তখন একজন লোক এসে আমার গায়ে ধাক্কা দিল এবং মাথার পেছনে থাপ্পড় মারল। তারা আমাদের হাঁটুতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেছে।
মালয়েশিয়ার অভিনেত্রী ও গায়িকা দুই বোন হেলিজা হেলমি ও হাজওয়ানি হেলমি বলেন, ইসরাইলি সেনারা তাঁদের সঙ্গে ‘বর্বর’ ও ‘নিষ্ঠুর’ আচরণ করেছেন।
শনিবার ইস্তাম্বুলে পৌঁছে হাজওয়ানি বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে বলেন, কল্পনা করতে পারেন, আমরা শৌচাগার থেকে পানি খেতে বাধ্য হয়েছি? কেউ কেউ খুব অসুস্থ ছিল, কিন্তু তারা (ইসরাইলি) বলেছিল, “তারা মরে গেছে নাকি? যদি না মরে থাকে, তবে তা আমার দেখার বিষয় নয়।” তারা খুব নিষ্ঠুর মানুষ।
হেলিজাও বলেছেন, তিনি কয়েক দিন না খেয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি ১ অক্টোবর খেয়েছি। এরপর আজ প্রথম খাচ্ছি। তিন দিন আমি কিছু খাইনি—শুধু শৌচাগার থেকে পানি খেয়েছি।