রহমত নিউজ 21 September, 2024 07:01 PM
শীর্ষ আলেমেদের উপস্থিতিতে “দেশের চলমান পরিস্থিতি : উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের করণীয়” শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ির জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়ায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৪ সাল আমাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর। গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের একটি পট পরিবর্তন ঘটেছে। যার মূলশক্তি ছিল সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। দেশবাসী এক হলে বড় কিছু করা যায়। এ সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার সাথে উলামায়ে কেরামের ঐক্য ছিল লক্ষ্যণীয়। এ পর্যায়ে অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য সংহতিরও নজির সৃষ্টি হয়েছে। এক পর্যায়ে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তারা রাষ্ট্রসহ মৌলিক অনেক পর্যায়ে সংস্কার সাধন করবেন বলে উদ্যোগী হয়েছেন।
মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, এ সংস্কার কাজে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা, সেটা দেখা উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। নতুন গঠিত প্রতিটি কমিশনে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কারে ইসলাম বিরোধী কোনো পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করা না হয়, সেটা পর্যবেক্ষণ করা এবং সংবিধানসহ প্রতিটি কমিশনে উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের অংশীদারিত্ব বহাল রাখা একটি কর্তব্য।
দেশের সর্বস্তরের উলামায়ে কেরামকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ধর্মপ্রাণ মানুষ এখন উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের জন্য অপেক্ষমান। আপনারা এবার বিচ্ছিন্ন না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলে স্থায়ীভাবে জনগণের মনে স্থান করে নেওয়া সম্ভব হবে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় নিঁখুত একটি শক্তি হিসেবে ইসলাম ও মুসলমানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। মনে রাখতে হবে, সর্বাবস্থায় আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত, আকাবিরে দেওবন্দ ও বাংলাদেশের শত বছরের শীর্ষ মুরব্বি উলামায়ে কেরামের মত-পথ, নীতি ও আদর্শ সমুন্নত রাখতে হবে। পরামর্শ সভার আলোচনায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী বলেন, যতদিন কওমি আলেমরা রাজনৈতিক প্রশ্নে এক প্লাটফর্মে না আসবে, ততদিন তাদের রাজনৈতিক মুক্তি হবে না। যারা কওমি আলেমদের আকীদার নয় তাদের সাথে ঐক্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
বেফাকুল মাদারাসিলি আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আমি মনে করি, আমাদের এখন আকীদার ভিত্তিতে ঐক্য হয়ে যাওয়া। পরবর্তীতে বিরোধী কারো সাথে ঐক্য হলে যদি ইসলামের বৃহৎ স্বার্থ হাসিল হয় তখন রাজনৈতিক নেতারা সময় অনুযায়ী ভেবে সিদ্ধান্ত নিবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুফতী রেজাউল করীম বলেন, দেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল এই সময়ে যাত্রাবাড়ির হযরত একটি সাহসী এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছরে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেওয়ার সুযোগ আসেনি। ভিন্নমত তো থাকবেই, কিন্তু পরামর্শের ভিত্তিতেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের যে কোনো সৎ পরামর্শ আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত।
ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলোচক মুফতি মুশতাকুন্নবী বলেন, আজকের এই মজলিস আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূচনা। তরিকতের লাইনে বলি আর উলূমের লাইনেই বলি, আল্লামা মাহমূদুল হাসান সাহেব আমাদের জাতীয় মুরব্বি। তিনি বেফাক ও হাইয়ার ক্রান্তিলগ্নে আমাদের বাঁচিয়েছেন। আমরা যদি আজ তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে আগামীর বাংলাদেশে এই দল উলামাদের সঠিক পথ দেখাবে।
সভায় ৭ দফা প্রস্তাবাবলী প্রকাশ করা হয়:
১। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সংবিধান সংস্কারে ইসলাম বিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না এবং সংবিধানসহ প্রতিটি কমিশনে উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
২। শিক্ষা সংস্কার কমিটিতে ইসলামী শিক্ষাবিদ, কারিকুলাম ও সিলেবাস বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩। সংস্কারের সুযোগে পাশ্চাত্য বিভিন্ন মতবাদ, ট্রান্সজেন্ডার, এলজিবিটিকিউ, উগ্র নারীবাদ, সর্বধর্মবাদ ইত্যাদি অনুপ্রবিষ্ট করা যাবে না।
৪। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান ও মান এবং খতমে নবুওয়াত সমুন্নত রাখার জন্য আইন পাশ করতে হবে।
৫। রাষ্ট্র, সমাজ ও সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির মূল্যায়ন করতে হবে।
৬। বাংলাদেশের যাবতীয় দ্বীনি কার্যক্রমের শরীয়াভিত্তিক বিশ্লেষণ ও দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য আল্লামা মাহমূদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে।
৭। আজকের জাতীয় পরামর্শ সভা থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবাবলীর আলোকে ইসলামী অঙ্গনে ব্যাপক আকারে ঐক্যের রূপরেখা তৈরি করে আল-হাইয়াতুল উলিয়ায় উপস্থাপন করা হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ, ঢালকানগর পীর মুফতী জাফর আহমাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম, জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মানুসুরুল হাসান রায়পুরী, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, ইসলামি আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, মুফতী মুহাম্মাদ আলী, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জমিয়ত মহাসচিব ড. মহিউদ্দিন ইকরাম, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল (নারায়নগঞ্জ), মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গওহরপুরী, মুফতী কেফায়াতুল্লাহ আযহারী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা নুরুল ইসলাম (গাজীপুর), চণ্ডিবর্দি পীর মাওলানা আলী আহমাদ, মাওলানা শওকত হোসেন সরকার, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা, মাওলানা বোরহানুদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আনওয়ারুল হক, মুফতী মাওলানা গোলামুর রহমান, শহীদুল আনওয়ার সাদী, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা রশীদ আহমদ, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মুফতি সোহাইল প্রমুখ।