শেখ আশরাফুল ইসলাম 01 September, 2024 08:47 PM
২০১৩ সালে গুম হন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমীর ছেলে আবু হানিফা নোমান। তারপর দীর্ঘ ১১ বছর ঘুরেছেন থানা থেকে থানা। মামলা নেওয়া হয়নি পুলিশ। উল্টো পুলিশ তাকে তিরস্কার করেছে।
অবশেষে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর ছেলেকে ফিরে পেতে মামলা করতে পারলেন মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে তিনি রহমত নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, আমার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার তীব্র আকাঙ্খা ছিল তার মধ্যে। সে কওমি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করে ঢাকা আলিয়ার আলিম পরীক্ষার্থী।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তৎকালীন আইজিপি শহিদুল হক, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর,তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালক, মুহাম্মাদ মোখলেছুর রহমান, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমদ, তৎকালীন ডিবি প্রধান মনিরুল হকসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সন্তান নিখোঁজ হওয়ার পর থানা থেকে থানা ঘুরেছি, অথচ মামলা না নিয়ে কর্তব্যরত অফিসার তিরস্কার করেছে।
বদলে যাওয়া প্রেক্ষাপটে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচারি হাসিনার পতন হয়েছে। তাই আশা করছি আমরা আমাদের সন্তানকে ফিরে পাব। অতি দ্রুত আমরা আমাদের সন্তানের খোঁজ চাই।
রহমত নিউজের হাতে পৌঁছেছে মামলার এজহার। সেখানে বলা হয়, “বিগত ১০/০৮/২০১৩ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় আমার সাবেক ঠিকানার বাসা হতে তার মামা মাওলানা শরীফুল ইসলাম, পিতা-আছির উদ্দিন, সাং- বাড়ী নং- ৩৪, রোড নং- ১/এ, ব্লক নং- জে, বারিধারা, ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। সে উক্ত তারিখের পূর্বেও উল্লেখিত তার মামার বাসায় অনেকবার যাতায়াত করেছিল এবং মাঝেমধ্যে সেখানে অবস্থান করত। তখন গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে তাকে শিবির সন্দেহে হুমকী দেয় বলে গত ২৬/০৭/২০১৩ তারিখ আমাকে জানায়। বাসা থেকে যাওয়ার পরে ঐ দিন অর্থাৎ গত ১০/০৮/২০১৩ ইং তারিখ সে ফোন না করায় আমি সন্ধ্যা ১৯.০০ ঘটিকার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল নং-০১৭৬০৫৫৭৪০৬ এ কল করলে তার মোবাইল ফোনটি বারবার বন্ধ পাওয়া যায়। এতে আমি ও আমার স্ত্রী সঙ্গীয় সাক্ষী শামছুন নাহার বিচলিত হয়ে পড়ি। তৎক্ষণাৎ আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নিতে থাকি। অনেক খোঁজাখুজির পরও তার কোনো হদিস না পাওয়ায় আমি উপরোক্ত সাক্ষী শামছুন নাহারকে নিয়ে গুলশান থানায় উপস্থিত হয়ে সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে কর্তব্যরত অফিসার আরো খোঁজ করার কথা বলে আমার সাধারণ ডায়েরী এন্ট্রি করতে অস্বীকার করেন। তারা আমাকে উক্ত সাধারণ ডায়েরী এন্ট্রি করতে অস্বীকার করার বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নাই।”
“অতঃপর বিগত ১৫/০৮/২০১৩ ইং তারিখ আমি উপরোক্ত সাক্ষীসহ আমার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনকে নিয়ে তদ্বিষয়ে এজাহার দায়ের করতে হাজারীবাগ ও গুলশান থানাসহ ডিএমপির অফিসে গেলে কেউ আমার এজাহার গ্রহণ করেন নাই এমনকি আমার ইতোপূর্বে লিখিত ডায়েরীও এন্ট্রি করতে সম্মত হন নাই। এতে আমার মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নেয় যে, আমার উপরোক্ত ছেলে ভিকটিম আবু হানিফা নোমান আলীকে উপরোক্ত আসামীগণের নিদের্শে এবং অন্যান্য আসামীগণের সহযোগিতায় ও যোগসাজসে আমার ছেলেকে অপহরণ ও গুম করে হত্যার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। উক্ত গুম ও খুন বাণিজ্যে উপরোক্ত আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে আমার ছেলে আবু হানিফা নোমান আলীকে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বেআইনীভাবে আটক করে খুনের উদ্দেশ্যে গুম ও অপহরণ করায় অপরাধ সংগঠিত করেছেন।”
“উক্ত অপরাধের সাথে উল্লেখিত আসামীগণ ছাড়াও তৎকালীন আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাসহ গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআই এর সদস্যরা জড়িত মর্মে আমার বিশ্বাস। পরবর্তীতে আমার ছেলেকে দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানে খুজাখুজি করিয়া এবং আমার আত্নীয় স্বজনদের সাথে পরামর্শ করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হইল ।”
হাজারীবাগ থানায় মামলা দায়েরের সময় মাওলানা আহমদ আলী কাসেমীর সঙ্গে ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সহ-অর্থসম্পাদক মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, অনলইন অ্যাক্টিভিস্ট মাওলানা রুহুল আমি সাদী (সাইমুম সাদী), ঢাকা মহানগরীর হেফাজতের দায়িত্বশীল মাওলানা সানাউল্লাহ খান, হেফাজেতের লালবাগ জোনের দায়িত্বশীল মাওলানা ফরিদ আহমেদ হেলালী, হাজারীবাগ জোনের দায়িত্বশীল মাওলানা হাবিব মাদানী প্রমূখ।