রহমত নিউজ 06 April, 2024 11:24 AM
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত কামরাঙ্গীরচর থানায় কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সিবিডি) প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে সর্বস্তরের কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেছেন।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বাদজুমা তিন ওয়ার্ডে তিনটি বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
৫৭ নং ওয়ার্ডে মিছিলে নেতৃত্ব দেন হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর পুত্র আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, ৫৬ ওয়ার্ডে মুফতী সুলতান মহিউদ্দিন, ৫৫ নং ওয়ার্ডে কমিশনার আলহাজ নুরে আলম সিদ্দিকী। বিক্ষোভ মিছিল শেষে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তিনটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
৫৭ নং ওয়ার্ডে হাজী সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, কামরাঙ্গীরচরে ২০ লক্ষাধিক লোক বসবাস করে, ২২ হাজারের বেশি ভবন রয়েছে , অসংখ্য কল কারখানা, শত শত মসজিদ মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উন্নয়নের নামে এগুলো উচ্ছেদ করতে আমরা দেব না। আমরা কামরাঙ্গীরচরের জনগণের পাশে আছি, শেষ পর্যন্ত থাকবো ইনশাআল্লাহ। হাফেজ্জী হুজুরের স্মৃতি বিজড়িত এই কামরাঙ্গীরচরকে নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র বরদাশ করা হবে না।
মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, কামরাঙ্গীরচর আমাদের জন্মভূমি, আমাদের সারা জীবনের অর্জন, এটাই আমাদের ঠিকানা। রক্ত দেবো তবুও কামরাঙ্গীরচরের ভিটা ছাড়বো না।
৫৫ নং ওয়ার্ডের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কাউন্সিলর আলহাজ নূরে আলম চৌধুরী বলেন, আমরা যেখানে থাকতে পারব না সেই উন্নয়নে আমাদের কোন লাভ নেই। শত বৎসরের ঐতিহ্য বিলীন হয়ে যাবে তামরা কিছুতেই মেনে নিব না।
৫৬ ওয়ার্ডের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মুফতী সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, উন্নয়নের নামে কামরাঙ্গীরচর বাসির উপর জুলুমের সিদ্ধান্ত আমরা কিছুতেই মেনে নেবো না, ১৯৭১ এ জুলুমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে প্রয়োজনে কামরাঙ্গীরচর রক্ষায় আবার যুদ্ধ হবে। তবু কামরাঙ্গীরচর ছেড়ে অন্যত্র যাবো না।
সমাবেশে বক্তাগণ মেয়রের দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মেয়র তাপশ আমাদের প্রতিনিধি হয়েও আমাদের কথা না ভেবে জোরপূর্বক উন্নয়নের নামে আমাদের উপর এ প্রকল্প চাপিয়ে দিতে চান আমরা তা কিছুতেই মেনে নেবো না।
বক্তারা আরও বলেন, আমাদের এই কামরাঙ্গীরচরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সিবিডি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেব না। যদি এই কারণে আমাদের জেল হয়, রক্ত ঝরে তবুও আমরা আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবো। এই লড়াই আমাদের লড়াই, এই লড়াই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই।
তারা বলেন, আমাদের এই প্রতিবাদ সরকার ও মেয়রের বিরুদ্ধে নয়। ডিএসসিসির ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের আজকের প্রতিবাদ। এখানে যদি সিবিডি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তাহলে ১৮ থেকে ২০ লাখ মানুষের মহাসংকট তৈরি হবে। অনেকে পথে বসে যাবেন, অনেকে সব হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যাবেন। তখন, আমাদের এই নাজুক পরিস্থিতির দায়িত্ব ডিএসসিসি, মেয়র বা দায়িত্ববান কেউ কি নিবেন?
তারা আরও বলেন, আমাদের আজকের প্রতিবাদ টিকে থাকার জন্য, এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াই, এই লড়াইয়ে শুধুমাত্র আমাদের আবেগ জড়িত। কেন না, এই মাটির সাথে মিশে আছেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। আমাদের দাদা, মা,বাবা, চাচা, জেঠা ও বন্ধুবান্ধব কামরাঙ্গীরচরের মাটির সাথে মিশে আছেন। একদিন আমাদেরকেও এই মাটির সাথে মিশে যেতে হবে। এমনকি একদিন আমাদের সন্তানরাও এই মাটির সাথে মিশে যাবে।
উপস্থিত বক্তারা বলেন, ডিএসসিসি হয় এই প্রকল্প বাতিল করবেন, নতুবা আমরা সবাই কামরাঙ্গীরচরের মাটিতে আত্মহতি দেব। কারণ, আমরা নিরুপায় আমাদের আর কোনো পথ নেই। আমরা অনেকদিন থেকে সিবিডি প্রকল্প বাতিল করার জন্য মেয়রের কাছে আবেদন ও অনুরোধ করে আসছি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত আমাদের এই অনুরোধ গ্রহণ করার কোন আলামত দেখতে পারিনি।
বক্তারা আরও বলেন, অতি সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় মেয়র সাহেব ও ডিএসসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, কামরাঙ্গীরচর ভৌগোলিকভাবে একটি আদর্শ নগর। এখানে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তুললে পুরো ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। নাগরিকদের জীবনমান উন্নত হবে। এমনকি, কামরাঙ্গীরচরকে সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তুলতে চান।
তারা বলেন, আমরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় এটাও শুনেছি। মূলত পুরো কামরাঙ্গীরচরে সিবিডি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য উচ্ছেদ করা হবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য যতটুকুই জায়গা প্রয়োজন, ততটুকুই জায়গাই অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ায় আমরা স্বস্তিবোধ করতে পারছি না। কেন না, আমরা চাই না কামরাঙ্গীরচরের একটি বাড়িও ভেঙে ফেলা হোক। প্রকল্পের প্রয়োজনে বাসিন্দাদের ক্ষতি না করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হোক। এটি মেয়রের প্রতি আমাদের আহ্বান ও অনুরোধ। প্রয়োজনে কামরাঙ্গীরচরের অবকাঠামো ও রাস্তাঘাটের আরও উন্নয়ন করলে ভালো হয়।