| |
               

মূল পাতা জাতীয় এবারও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, যা হতাশাজনক : টিআইবি


এবারও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, যা হতাশাজনক : টিআইবি


রহমত নিউজ     14 December, 2023     09:00 PM    


তফসিল ঘোষণার আগের ও পরের পরিস্থিতি বিবেচনায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায় তা এবারও হবে না, যা চরম হতাশাজনক। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে দেশে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি এসব কথা বলে। বিবৃতিতে জানানো হয়, টিআইবির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৪৫ জন সদস্য সংস্থার বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় সদস্যরা দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস, হয়রানি, হামলা ও মামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধসহ স্বাধীন মত ও চিন্তা প্রকাশের চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন টিআইবির সাধারণ পর্ষদে সদস্যদের নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রকৌশলী প্রফেসর ড. এ কে এম ফজলুল হক।

সভা শেষে এক ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও জনসাধারণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে এমন প্রত্যাশা ছিল। তবে তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায় তা এবারও হবে না, যা চরম হতাশাজনক। জনগণের ভোটের অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে দেশে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে মত দেন সদস্যরা। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে জাতীয় ঐকমত্যভিত্তিক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের আহ্বান জানান সদস্যরা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতিতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করায় দেশের গৌরবময় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার প্রয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি মহামারির রূপ নিয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত অর্থ পাচার ও ঋণ খেলাপির সংস্কৃতি এতটাই প্রকট যে, প্রতিবছর নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ঘটনা রোধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না, উল্টো দেশে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতির এ জাতীয় সর্বগ্রাসী ভয়াল গ্রাস থেকে পরিত্রাণ পেতে সব প্রকার করুণা, অনুকম্পা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সবার কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান সদস্যরা। যে সুনির্দিষ্ট অভীষ্ট নিয়ে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, একাধিক আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুদকের ক্ষমতা হ্রাস করে তা অর্জনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা হয়েছে বলে গভীর হতাশা প্রকাশ করেন টিআইবির সদস্যরা। সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট ২০১৮; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২; আয়কর আইন ২০২৩ এর যে সব ধারা দুদকের ক্ষমতাকে খর্ব করেছে, তা অবিলম্বে সংশোধন করার জোর দাবি জানান তারা।

টিআইবির সদস্যরা মনে করেন, সরকারের দায়িত্ব হলো, অর্পিত ভূমিকা পালনে গণমাধ্যম যেন বাধার মুখে না পড়ে এমন উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময়ে দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যাগত তথ্য উপস্থাপন করে অন্তঃসারশূন্য আত্মতৃপ্তিলাভের চেষ্টা করতে দেখা যায়। অথচ নানাপন্থায় গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানি, হামলা ও মামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধসহ স্বাধীন মত ও চিন্তা প্রকাশের চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর তড়িঘড়ি করে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিপরিষদ খসড়া ‘‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’’ নীতিগতভাবে অনুমোদন করায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন সদস্যরা। প্রস্তাবিত এই আইন প্রণয়নের সব কার্যক্রম নির্বাচন পরবর্তী সময় পর্যন্ত স্থগিত রেখে যথা সময়ে সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে অনুমোদিত খসড়ায় বিদ্যমান ক্রটিসমূহ সংশোধন সাপেক্ষে প্রণয়নের আহ্বান জানান তারা।  একইসঙ্গে, পোশাক-শ্রমিকদের জীবনমান, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত নিম্নতম মজুরি শ্রমিকদের প্রত্যাশা ও দাবি এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয় ঘোষণাপত্রে।  পাশাপাশি একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিপূর্ণ, পক্ষপাতহীন, প্রতিযোগিতামূলক এবং দুর্নীতিমুক্ত ক্রয়ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ই-জিপির সুযোগ কাজে লাগাতে উপাত্তনির্ভর বিশ্লেষণ ও তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়াকে জোরদার করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান টিআইবির সদস্যরা।