| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘চাইলাম চমক দিতে, চমক তো হলো না’


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

‘চাইলাম চমক দিতে, চমক তো হলো না’


রহমত নিউজ ডেস্ক     10 September, 2023     11:41 AM    


ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের পালা শুরু হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসজুড়ে নির্মানাধীন বেশকয়েকটি বড় প্রকল্প উদ্বোধনের দিন ধার্য করা হয়েছে। যদিও এসব প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে - ঢাকায় মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ, পদ্মাসেতু রেল প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশ, হযরত শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (কর্নফুলী টানেল)। এছাড়া খুলনা-মোংলা রেললাইন এবং দোহাজারি-কক্সবাজারের রেলপথ উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক একের পর এক বড় প্রকল্প উদ্বোধনের একটা রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটা কৃতিত্ব। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে এটা ভাল সময়, একটা মোক্ষম সময়। এই জিনিসগুলোকে আমরা মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এবং এটা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের একটা কৃতিত্ব। নির্বাচনকে সামনে রেখে তো আমরা মানুষের কাছে যাব। মানুষের কাছে প্রচার করবো উন্নয়নের কথা বলবো, অগ্রগতির কথা বলবো, সমৃদ্ধির কথা বলবো। এটা তো প্রচারের অংশ।

কাজ শেষ না করে উদ্বোধন
ঢাকায় আংশিক চালু হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এখনো কোনো গণপরিবহন চলছে না। অনুমতি নেই সিএনজি ও মোটরসাইকেল চলাচলের। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার-নামা সময় তীব্র যানজটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ফলে এর সুফল এখন দৃশ্যমান হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আংশিক চালু এ রাস্তায় এয়ারপোর্ট যেতে হলে শাহবাগ, কাওরান বাজার বা ফার্মগেট থেকে আসা গাড়িকে বিজয় সরণির নিয়মিত যানজট পার হতে হয়। আবার এয়ারপোর্ট থেকে এসে নামার পরেই বনানী, মহাখালী বা ফার্মগেটে পড়তে হচ্ছে জটলার মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়া এবং পুরো কাজ শেষ না করেই চালু হওয়ার কারণে সংকট থেকেই গেছে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, যানজট দূর করার যে কথাগুলি আমরা বলেছি দেখা যাবে যে সব ডিরেকশনের মানুষগুলি এই কয়েকটা র‍্যাম্প দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে কনজেসটেড অবস্থায় পিক আওয়ারে এটা হিতে বিপরীত হবে। এক্সপ্রেসওয়ে তড়িঘড়ি উদ্বোধন করতে গিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। কাঠামো উদ্বোধন করে ফেললাম কিন্তু সেইফটি কম্প্রোমাইজ করে ফেললাম। ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের যে জায়গায় র‍্যাম্প নেমেছে কাকলীতেই দেখবেন, যে জায়গায় ফুটপাত ছিল সে জায়গায় র‍্যাম্প দিয়ে কিন্তু গাড়িগুলি নামবে। পরের কথা হলো এই পথচারিরা যাবে কোথায়?তাড়াহুড়ো করে উদ্বোধনের কারণে এই কাজগুলি অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনে।

আংশিকভাবে মেগা প্রকল্পগুলোর সুবিধা চালু হলে সেটি নির্বাচনী প্রচারে সুবিধাজনক হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের বড় অবকাঠামো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো নির্মাণকাজ শেষ করেই উদ্বোধন করাটা যুক্তিযুক্ত নয়।

কারণ ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক এম শামসুল হক বলেন, এই যে রাজনৈতিক চমক দেখানোর জন্য উদ্বোধন করা, এগুলি কিন্তু কাউন্টার প্রোডাক্টিভ হয়ে যায়। আমি জানি না সরকার এগুলো একটু বিবেচনায় নিতে পারে। কাজ চলমান অবস্থায় উদ্বোধন করলে সেটার জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। এই ধরনের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। উদ্দেশ্য হলো পুরো প্রজেক্টটাকে বাস্তবায়ন করে জনগণের জন্য আমি দিব। আংশিক উদ্বোধন করে আমি চাইলাম চমক দিতে, চমক তো হলো না। সেই হিসেবে আমি বলবো উন্নয়নের দর্শনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। জনগণের অর্থায়নে, জনগণের প্রজেক্ট যেভাবে করার কথা যে সময়াবদ্ধের মধ্যে করার কথা সেই সংস্কৃতিটা অর্জন করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো পর্যায়ক্রমে দৃশ্যমানও হচ্ছে। তবে সমালোচনা রয়েছে এসব প্রকল্পের ব্যয় তুলনামূলক বেশি এবং অধিকাংশক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন শেষ করা যায়নি। প্রকল্প শেষ না করেই উদ্বোধন কিংবা আংশিক চালু করা নিয়ে যে সমালোচনা সেটি নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের।

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দেখতে হবে সব কিছু মিলিয়ে ভালো কী-না। কাজটিতে সফলতা আছে কী-না। যে কাজটি সম্পন্ন হলো বা সম্পন্ন হওয়ার পথে সে কাজটির সুবিধা জনগণ ভোগ করে কী-না। সেটাই হলো বিবেচনা ব্যাপার। খুব দক্ষতার সাথে সফলতার সাথে সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সে কাজগুলি সম্পন্ন করেছে। এবং সম্পন্ন করতে পারার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। এটা কিন্তু একটা পারফরর্ম্যান্সের ব্যাপার। অনেকেই অনেক কিছু স্বপ্ন দেখে, কাজ শুরুও করতে পারে না শেষও করতে পারে না।