| |
               

মূল পাতা জাতীয় রেল দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে : রেলমন্ত্রী


রেল দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে : রেলমন্ত্রী


রহমত নিউজ ডেস্ক     07 September, 2023     02:26 PM    


রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এ রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল করবে। আর আগামী বছরের জুন মাসেই যশোর পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এর মাধ্যমে মোংলা পোর্টকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহারের জন্য রেলপথকে কাজে লাগিয়ে খরচ ও সময় কমবে। এর মাধ্যমে এ রেল যোগাযোগ অর্থনৈতিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। খুলনায় যেসব ট্রেন চলছে সেগুলোকে এই রেল যোগাযোগের সঙ্গে যুক্ত করা হলে মোংলা পোর্টকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সেটি আরো বেশি প্রসারিত হবে। এই রেলপথকে কাজে লাগিয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের সময় ও খরচ কমবে। ঢাকা থেকে খুলনার যে দূরত্ব তা অর্ধেকে নেমে আসবে।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুরে ভাঙ্গা স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে ট্রেনটি ভাঙা স্টেশনে পৌঁছায়। এর আগে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ১০টা ৭ মিনিটে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশনের পথে রওনা হয়। বেলা ১১টা ২৬ মিনিট ট্রেনটি এ সেতুতে ওঠে, পার হয় ১১টা ৩৪ মিনিটে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু পাড়ি দিতে পরীক্ষামূলক ট্রেনটির সময় লেগেছে মাত্র আট মিনিট। পরীক্ষামূলক হওয়ায় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে ট্রেনটির। যাত্রী পরিবহন পুরোদমে শুরু হলে আরো কম সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচল আগামী ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে।

রেলমন্ত্রী বলেন, যাতায়াত, মালামাল পরিবহনে অনেক সুবিধা পাবে মানুষ। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এই অঞ্চলের মানুষ। কলকাতার সঙ্গে যারা ব্যবসা বাণিজ্য করে তাদেরকে আর বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে মালামাল পরিবহন করতে হবে না। ঢাকা যশোর রেলপথ পুরোপুরি চালু হলে ঢাকা থেকে সরাসরি এই পথ ব্যবহার করা যাবে। ঢাকা থেকে যশোর ১৭২ কিলোমিটারের রেল লাইনের মধ্যে আজ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রায়াল রান করলাম। এটা প্রস্তুত হয়েছে সেটা দেখলাম। আমাদের সাথে যাত্রী হয়ে সাংবাদিকরা এসেছেন। আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। রেলের ডিজি, সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টদের যারা এই প্রকল্পের জন্য নিরলস কাজ করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এর আগের কোনো সরকার রেল নিয়ে কাজ করে নাই। প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালে রেল মন্ত্রণালয় গঠন করে রেলের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। রেল নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা মোটা দাগে, আমরা সমগ্র জেলায় রেল সংযোগ পৌঁছে দেব। ভাঙা স্টেশন অত্যন্ত আধুনিক এবং আইকনিক বিল্ডিং দিয়ে তৈরি হবে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে পরীক্ষামূলক ট্রেনে ওঠার আগে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এরপর সকাল ১০টা ৭ মিনিটে কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ভাঙ্গা রেল স্টেশন অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে পরীক্ষামূলক ট্রেন যাত্রায় আরো উপস্থিত আছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। পরীক্ষামূলক এ যাত্রায় সবকিছু পর্যবেক্ষণ করবেন রেলওয়ে ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে শুরু হচ্ছে রেল যোগাযোগ। এ রেল যোগাযোগ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এ রেল লাইন উদ্বোধনের ফলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জীবনযাত্রা সহজ হবে। এর সুফল সারা দেশের মানুষ পাবে।

প্রথমবারের মতো ঢাকা-ভাঙ্গা পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য বুধবার ঢাকায় প্রবেশ করে ট্রেনটি। এর আগে ট্র্যাক কার ও মালবাহী ট্রেন পদ্মা সেতু অতিক্রম করলেও এবারই প্রথম যাত্রী বহনের ট্রেনটি প্রবেশ করেছে রাজধানীতে। আর আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এ রেলপথের উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের নির্বিঘ্নে ও সাশ্রয়ী ভাড়ায় চলতে পারবে। এর মাধ্যমে পদ্মা পাড়ের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে। যদিও যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। এ লক্ষ্য ঠিক করে এগুচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এ রুট দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া হয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সঙ্গেও যুক্ত হবে এ রেলপথ। ফলে এসব অঞ্চলে কম খরচেই পণ্য ও যাত্রী চলাচল করতে পারবে ঢাকার সঙ্গে। এর আগে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেছেন, পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথ উদ্বোধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০ অক্টোবর সময় দিয়েছেন। সেদিন একটি সুধী সমাবেশও অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর থেকে এ পথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে একটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প কার্যালয় থেকে ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত আসে। এ ট্রেন ঢাকা পর্যন্ত আনা হতে পারে। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের অধীনে চীন থেকে ১০০ নতুন কোচও কেনা হয়েছে। নতুন কোচ দিয়েই ট্রেন চালু করা হবে। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের সময় সব স্টেশন এবং পুরো সংকেত ব্যবস্থা হয়তো চালু করা যাবে না। শুরুতে তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকবে। স্টেশনগুলো হচ্ছে মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর। মুন্সিগঞ্জের নিমতলা স্টেশনটিও চালুর চেষ্টা চলছে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এ প্রকল্পে তিন অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ চলমান। প্রথম অংশের ঢাকা-মাওয়া অংশে অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ অংশে রেললাইন নির্মাণ শতভাগ হয়ে গেলেও নতুন চার স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি রয়েছে ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর দুই ব্রিজের। আর দ্বিতীয় অংশ মাওয়া-ভাঙ্গার কাজের অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ব্যালাস্টেড ট্রাক ও সিগন্যালিংয়ের কাজ বাকি। নতুন চার স্টেশনের দুটির নির্মাণ শেষ, বাকি দুইটি। এছাড়া এ অংশের সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে আগামী বছরের জুনে উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। এ অংশে রেললাইন নির্মাণ প্রায় ৯৯ শতাংশ হয়ে গেলেও নতুন নয় স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি রয়েছে ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর একটি ব্রিজের। এসব কাজের সঙ্গে এ অংশে সবচেয়ে বেশি কাজ বাকি রয়েছে সিগন্যালিংয়ের কাজ, রেলপথ নির্মাণ শেষ হলেই এ কাজ শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্প নির্মাণ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।