রহমত নিউজ 31 August, 2023 11:48 AM
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া সব মামলা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা ১৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা। একই সঙ্গে সাংবাদিকসহ এই আইনের মামলায় আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ওয়েবসাইটে ১৯ সংস্থার এই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাগুলো হলো— অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল; আর্টিকেল নাইনটিন (দক্ষিণ এশিয়া); এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন; বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া; ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট; সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন; কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে); কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস; ফোরাম ফর ফ্রিডম এক্সপ্রেশন, বাংলাদেশ; ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড; আইএফইএক্স; ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ); ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে); ইন্টারন্যাশনাল ওমেন’স মিডিয়া ফাউন্ডেশন; পেন আমেরিকা; পেন বাংলাদেশ; পেন ইন্টারন্যাশনাল; রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতপ্রকাশের কারণে যাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে সেসব মামলা বাতিল করা। একই সঙ্গে এসব মামলায় যাঁদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। সংবাদ প্রতিবেদন–সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আইনি পদক্ষেপ ভয় দেখানোর শামিল, যা একটি স্বাধীন গণমাধ্যমের কার্যক্রমকে রুদ্ধ করে। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয় উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ বা যাঁদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে, তাঁদের কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনভাবে বাংলাদেশের সব জাতীয় ও স্থানীয় ঘটনার সংবাদ প্রকাশের ক্ষমতা থাকা উচিত। বিশেষত, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণমাধ্যমের এই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনগুলো। তবে এই আইনের বদলে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তারা। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি দমনমূলক ধারা থাকছে, যেগুলো আগে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, নাগরিক স্বাধীনতাসহ স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারকর্মীদের কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ই–মেইলে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমদকে চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে সংবাদ প্রকাশের জেরে আরটিভির ঢাকা কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজারবাগ দরবার শরিফ ও এর নেতা শাকেরুল কবিরের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে অধরা ইয়াসমিন ও তাঁর সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা হয়। চিঠিতে বলা হয়, এই সংবাদ ঘিরে তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন দরবার শরিফের সদস্যরা। একই সঙ্গে অধরার ওই সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া ডি আকরামুল আহসান কাঞ্চন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধেও তদন্ত বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।