রহমত নিউজ ডেস্ক 26 August, 2023 03:38 PM
বাংলাদেশে আসছে সাধারণ নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা কী হবে? এনিয়ে রাজনীতিতে চলছে নানা অনুমান ও বিশ্লেষণ। ভরত কি বরাবরের মতোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ নেবে নাকি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে? বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যেখানে বলা হয়েছে - বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে তাদের ও পরিবারের সদস্যদের আমেরিকার ভিসা মিলবে না।
এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থানের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। কারণ, ভারত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। শেখ হাসিনার সরকারের উপর চাপ কমাতে ভারত কী ধরণের ভূমিকা নেয় সেটির দিকে অনেকের দৃষ্টি রয়েছে। নির্বাচন বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এক্ষেত্রে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত কী ভূমিকা নেয় সেটি প্রভাব ফেলে তাতে সন্দেহ নেই। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্ক থাকায় ভারতের অবস্থান কী হয় সেটিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পরেও ভারত আওয়ামী লীগ সরকারকে জোরালে সমর্থন দিয়ে গেছে। ভারতের সমর্থনের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব বিগত দুটি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রকাশ্যে জোরালো আপত্তি তোলেনি।
ভারত একটা দলের বন্ধু
সম্প্রতি ভারতের একটি পত্রিকায় খবর এসছে যে শেখ হাসিনা সরকারের 'পক্ষ নিয়ে' যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনীতিক বার্তা দিয়েছে ভারত। ভারত সত্যিই এ ধরণের বার্তা দিয়েছে কী না সেটি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নিশ্চিত করা যায়নি। কিন্তু এ খবর প্রকাশের পর বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া এসেছে। নির্বাচনকে ঘিরে যখন মার্কিন ভিসানীতিসহ বিভিন্ন তৎপরতাকে স্বাগত জানালেও ভারতের অবস্থান নিয়ে খবর প্রকাশিত হবার পরে বিএনপিতে আপত্তি দেখা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে দিল্লীর সবশেষ তৎপরতা এবং অতীতের ভূমিকা সামনে আনেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর ঢাকা সফর এবং জাতীয় পার্টির তৎকালীন নেতা এইচ এম এরশাদের সাথে বৈঠকের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সুজাতা সিং বলে নাই এরশাদরে যে আপনি যদি নির্বাচনে না যান বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। এ সপ্তাহেই তো একটা প্রেসনোট দিল পররাষ্ট্র দপ্তর ভারতের যে যথাসময়ে সংবিধান মতো বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। উনি এ কথা বলে কেন? একথা এদেশের সরকারই বলতেছে, ওনার বলার দরকার কী? এরপরেও কী আর বলতে হবে কিছু? বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত ভারসাম্য রক্ষা করছে না, গণতান্ত্রিক দেশের সাথে সারা বিশ্বের সাথে ভারত একই সুরে কথা বলবে। এটাই আমার ধারণা ছিল। তাইলে হয়তো বা আমাদের দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফেরত পাইতে সহজ হইতো। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না হয়ে শুধু একটি দলের বন্ধু হয়েছে। তারা একটা দলের বন্ধু। একজন ব্যক্তির বন্ধু। এ অবস্থানটা কোনোভাবেই জনগণের জন্য কাম্য না। ভারত তো চায় আজীবন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক, যেভাবে খুশী, এটা তো সুস্পষ্ট।
ভারত গণতন্ত্রের বাইরে কথা বলে নাই
অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এক ধরনের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের অবস্থান সরকারি দলের জন্য অনেকটা স্বস্তির বলেই মনে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমেরিকা বৃহৎ শক্তির অংশ এবং ভারতও এখন কারো চাইতে কম যায় না। ভারত তো গণতন্ত্রের বাইরে কথা বলে নাই, কাজেই এইটা নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তিত হওয়ার কী আছে? যারা নির্বাচন ছাড়া অন্য খেলা খেলে, তাদের কথা আমরা বরং সন্দেহের চোখে দেখব। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ভারত নিয়ে এই মুহূর্তে সন্দেহের কোন কারণ দেখছি না। অনর্থক উদ্বিগ্ন হওয়ার বা বিচলিত হওয়ারও কোনো কারণ দেখি না। বা এতে বাড়তি উৎফুল্ল হবারও কোনো কারণ দেখি না।বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এই বাস্তবতা কেউ অস্বীকার করবে না ভারতও অস্বীকার করবে না এবং আমরাও এটা মাথায় রাখবো যে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। কোনো কিছুই দেশের স্বার্থের বাইরে না বা উর্দ্ধে না এবং দেশের মানুষকে বাদ দিয়ে না।
ভারত ছাড়া সম্ভব নয়
নিকটতম প্রতিবেশি এবং নানা স্বার্থের কারণে বাংলাদেশের শাষন ক্ষমতায় কারা আছে সেটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা, এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের চিন্তা ভাবনা ও কৌশল থাকা স্বাভাবিক বলেও মনে করা হয়। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, নিকটতম প্রতিবেশি হিসেবে নানা কারণে ভারতের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটা বাস্তব যে বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে ভারতের একটা স্বার্থ থাকতেই পারে। কারণ তারা নিকটতম প্রতিবেশি এবং তিন দিকেই ভারত বেষ্টিত। সেখানে ভারত চাইবেই যে বাংলাদেশে যে সরকারে থাকুক তাদের সাথে একটা সুসম্পর্ক থাকুক। সীমান্তের বিষয় আছে, আইনশৃঙ্খলার বিষয় আছে এবং কৌশলগত বিষয় আছে। এসব বিষয় নিয়ে ভারতের যেমন স্বার্থ আছে, বাংলাদেশেরও স্বার্থ আছে। এ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ভারত তার নিজস্ব রাজনৈতিক কারণে এবং কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের বিষয়ে চিন্তা করতে পারে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে গেলে ভারতকে শত্রু ভেবে এখানে রাজনীতি করা বা ক্ষমতা চালানো সম্ভব নয়। এর রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক - দুটো কারণ রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটা সিদ্ধান্ত নিল যে তারা পেয়াজের ওপর ট্যাক্স বসাবে এর মধ্যে কিন্তু বাংলাদেশে পেয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এমনকিছু বিষয় আছে যেটা আমরা প্রতিবেশি দেশের কাছে নির্ভরশীল হয়ে যাই।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগের বিষয়টি গোপন কিছু নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ে কিংবা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ পর্যায়ের সফরগুলোতেও দলীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক আলোচনাও হয়ে থাকে। এবার নির্বাচনের আগে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভারত সফর করেছেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার তাগাদা আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ভূমিকা নেয় সেদিকেই দৃষ্টি সব রাজনৈতিক দলের।