মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান 24 February, 2023 12:59 PM
রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আসছে পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক।রমজান মাসের আমল ও এবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে যে মাসের সমাপ্তীতে এই মহিমান্বিত মাসের আগমন সেই শা'বান মাসের ও রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত। শা'বান মাসকে রমজান মাসের প্রস্তুতির মাস হিসেবে গ্রহণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ দোয়া করতেন এবং সাহাবীদেরকে ও শিক্ষা দিতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে দোয়া করতেন যে হে আল্লাহ রজব ও শা'বান মাসে আমাদের বিশেষ বরকত দান কর এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের পৌছে দাও।
রমজান মাসের প্রস্তুতীর লক্ষ্যে শা’বান মাসকে বিশেষ গুরত্ব দিতেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ননা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বান মাসের চাঁদের কথা এতো গুরুত্বের সাথে স্বরণ করতেন যা অন্য মাসের বেলায় হতোনা। মাহে রমজানের মর্যাদা রক্ষায় এবং এর হক্ব আদায়ের অনুশীলনের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বান মাসে অধিক হারে রোজা রাখতেন। শা'বান মাসের বৈশিষ্টের অন্যতম হল এ মাসের পঞ্চদশতম রাত যা শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। এ রাতের ও রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। শা'বান মাস হল মাহে রমজানের প্রস্তুতী গ্রহণ করার মাস। তাই রমজান মাসের প্রস্তুতী গ্রহণে শা'বান মাসের ভূমিকা ও গুরত্ব অপরিসীম।
শা’বান মাসের পরিচতি : ইসলামী বর্ষপঞ্জীকায় অষ্টম মাস হল শা'বান মাস। যা রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী মাস শা'বান। এ মাস বড় পূন্যময় ও ফজিলতময়। রমজানের আগমনী বার্তার মাস। রমজানের পূর্ববর্তী নিকটতম মাস হিসেবে এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন রজব মাসে চাষাবাদ করে এবাদতের বীজ বপন কর।শা'বান মাসে তাতে পানি দাও এবং রমজান মাসে এর ফসল আহরণ কর।
শা’বান মাসের নামকরণ : শা’বান আরবি শব্দ। যার অর্থ ছড়িয়ে পড়া,বিস্তৃতি লাভ করা। যেহেতু এ মাসে আল্লাহ তায়ালার অপার অনুগ্রহ ও দয়া বিস্তৃতি লাভ করে জগৎবাসীর উপর এবং মুমিনদের প্রতি এ মাসে তার বিশেষ কৃপার দৃষ্টির শাখা প্রশাখা প্রসারিত হয় তাই এ মাসকে শা'বান নামকরণ করা হয়েছে।এ মাসে যারা রোজা রাখে তাদের জন্য রয়েছে অনেক কল্যান ও বরকত।
শা’বান মাসের গুরুত্ব ও ফযিলত : প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন তোমরা রমজানের উদ্দেশ্যে শা'বান মাসের চাঁদের হিসাব রাখবে।কেননা শা'বান মাসের চাঁদের হিসাব নির্ভুল হলে রমজানের চাঁদের বিষয়ে মতভেদ হবে না। মুয়াত্বা এ ইমাম মালিকে বর্নীত আছে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য মাসের তুলনায় শা'বান মাসের অধিক রোজা রাখতেন।শা'বান মাস এলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় আমলের পরিমান স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ব্যাপকহারে বাড়িয়ে দিতেন এবং সকলকে অধিক নেক আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন রমজান হল আল্লাহর মাস, কেননা রমজান মাসের রোজা রাখাকে তিনি ফরজ করেছেন। আর শা'বান মাস হল আমার মাস,অর্থাৎ এ মাসে রোজা ইত্যাদি নফল কাজ আমি সুন্নাত করেছি।তাই শা'বান মাস হল পরিত্রাণকারী আর রমজান মাস হল মোচনকারী। পুরো শা'বান মাস জুড়ে আল্লাহর বান্দাহ গণদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পূন্য ও সওয়াব অর্জনের সুবর্ন সুযোগ।আল্লাহর সন্তুষ্টিকামী মুমিনদের জন্য আবশ্যক হল সমগ্র মাসকে তারই এবাদতে মনোনিবেশ করা।
লেখক : নাজিমে দারুল ইকামাহ, জামিয়া কোরআনিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা ও কারিগরি শিক্ষালয় কাজীপাড়া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া