রহমত নিউজ ডেস্ক 01 January, 2023 04:06 PM
গত এক বছরে রাজশাহীতে ৪৬ নারী ও শিশু আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ২৪৫ জন নারী ও শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪৪ জন নারী ও ১০১ জন শিশু রয়েছে। আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১০টি। এছাড়া বছরজুড়ে ২৫ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার, গণধর্ষণের শিকার দুজন, পাচারের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৪টি, ধর্ষণ চেষ্টা ১২টি, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৭ জন। এছাড়া ৩ জন পর্নোগ্রাফি এবং ১৮ নারী ও শিশু নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর ২০২২ সালের নারী ও শিশু পরিস্থিতির তথ্য মতে, ধর্ষণের শিকার ১৪ শিশু ও ১১ নারী। গণধর্ষণের শিকার একজন নারী ও শিশু। ধর্ষণের চেষ্টার শিকার চার শিশু ও ৮ নারী। যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৮ শিশু ও ১৩ নারীর সঙ্গে। শীলতাহানির চেষ্টার শিকার এক নারী। এছাড়া পর্নোগ্রাফির শিকার এক শিশু ও দুই নারী। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৬ শিশু ও ২০ নারী, হত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ২ শিশু ও ৪ নারীর সঙ্গে, আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটিয়েছেন ১ শিশু ও ৩ নারী। অপহরণের শিকার ৯ শিশু ও ১ নারী। এছাড়া নিঁখোজ হয়েছেন ৫ শিশু ও তিন নারী। নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৮ শিশু ও ৪৯ নারী। এছাড়া আত্মহত্যা করেছে ১৮ শিশু ও ২৮ নারী।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাৎসরিক প্রতিবেদনে উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোস্যাল ওয়েলফেয়ার-লফস এমন তথ্য দিয়েছে। লফস রাজশাহীর প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে নিয়মিত নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি প্রকাশ করে।
লফসের নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, অত্র অঞ্চলে নারী ও শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি বিভিন্ন মাত্রায় অবনতি ঘটছে। যৌতুক ও পরকীয়ার কারণে অধিকাংশ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি কিছু টিভি সিরিয়াল পরকিয়াকে উৎসাহিত করছে। এছাড়া পারিবারিক কলহ ও প্রেমঘটিত কারণে হত্যা-আত্মহত্যা ও অমানবিক নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে যা প্রকাশিত হয় না। কোন তথ্য জানা যায় না; এমন বাস্তবতায় ২০২২ সাল গত ২ বছরের করোনা মহামারির মধ্যে সব কিছু স্থবিরতা কাটিয়েছে কিন্তু ঘৃনিত অপরাধ নারী ও শিশু নির্যাতনের কৌশল পরিবর্তন হয়েছে। ধর্ষণ বাড়ছে। সোস্যাল মিডিয়ায় অর্ন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবনতা বাড়ছে। একদিকে বাড়ছে বাল্যবিবাহ অপর দিকে সংসার ভাঙার তালিকা লম্বা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তুচ্ছ ঘটনাতেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ড. আনয়ারুল হাসান সুফি জানান, সার্বিক দিক বিবেচনায় আত্মহত্যার অন্যতম একটি প্রধান কারণ সামাজিক অবক্ষয়। আধুনিকতার উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারিক বন্ধন, সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়েছে। ব্যক্তি বিচ্ছিন্নতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যাত্রা ৫ বছর আগে। এ পর্যন্ত ২১১ জন আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেওয়া শিক্ষার্থীকে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যারা নিজেরাই এখন আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার। রাজশাহীতে ২০২২ সালে আত্মহননকারী ৪৫ ব্যক্তির মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন দুজন। এরা হলেন, ভূতত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া তাবাসসুম ও ২০১৮-১৯ বর্ষের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া দিশা। এছাড়া রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফ ইউনিয়নের বেলঘরিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় সুইটি খাতুন (১৭), দুর্গাপুর উপজেলার পৌর এলাকার দেবীপুর খুলুপাড়া গ্রামের কুলসুম (১৭) টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে না পেরে, কলেজে শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে রাফিউল ইসলাম রাফি (১৮), দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের কিসমত হোজা গ্রামে মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় কলেজ ছাত্র গোলাম রাব্বানী (১৮)।
রাজশাহী নগরীতে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিপাশা ঘোষ মনে করেন, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে নিয়মিত না হলেও অন্তত ৩ মাস, ৬ মাস পরপর যদি কাউন্সিলিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা যায়; তবে আত্মহত্যার এই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। রাজশাহীতে আত্মহত্যামুখী মানুষের প্রকৃত সংখ্যাটা নিতান্তই কম না। একজন মানুষ আত্মহত্যা করার পূর্বে তার শারীরিক ও মানসিক বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আসে, মন খারাপ থাকে, একা থাকতে পছন্দ করে, অন্যদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, হঠাৎ করেই খুব সুস্থ-সতেজ হয়ে ওঠাসহ আরো অনেক লক্ষণ থাকে।
এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: