মূল পাতা রাজনীতি আওয়ামী লীগ হাত তুলে বলুন, আপনি নৌকায় ভোট দেবেন : প্রধানমন্ত্রী
রহমত নিউজ ডেস্ক 04 December, 2022 08:04 PM
খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রোষানল থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। কারণ, যাতে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। যাওয়ার আগে আমি আপনার কাছে একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে আপনি অতীতের মতো আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেবেন এবং আমাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে বলুন, আপনি নৌকায় ভোট দেবেন। জনগণ দুই হাত তুলে তাঁদের সম্মতি জানায়। বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের কাছে এই জন্য যে এই দেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা হবে, শিক্ষা হবে, উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ, সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, আমরা যেন সেইভাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারি। যুদ্ধাপরাধী, খুনি ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দল জামায়াত-বিএনপি বাংলাদেশের মাটিতে যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
আজ (৪ ডিসেম্বর) রবিবার বিকালে বন্দরনগরীর ঐতিহাসিক পোলো গ্রাউন্ডে চট্টগ্রাম মহানগর, আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ইউনিট আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এবং রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন প্রমুখ। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভাটি সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সেগুলোকে তার সরকারের উপহার হিসেবে বর্ণনা করে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব উন্নয়ন প্রকল্প আমার কাছ থেকে পাওয়া উপহার। আওয়ামী লীগই একমাত্র সরকার যারা বন্দরনগরীর ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করার পাশাপাশি ১৫ আগাস্টে যারা শহীদ হন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া চেয়ে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর সেই সাথে আপনাদের সহযোগিতা চাই, এই বাংলার মাটিতে আবার যেন ওই যুদ্ধাপরাধী, খুনির দল ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে আমরা দেব না। কারণ ওই জামাত-বিএনপি খুনির দল, যুদ্ধাপরাধীর দল, জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদ দানকারীর দল। এমনকি আমাকেও তো বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। কাজেই, এরা যেন বাংলাদেশের মানুষের রক্ত চুষে খেতে না পারে আর যেন তারা এদেশে আসতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে খালেদা জিয়া কারাগারে কারণ বিদেশ থেকে এতিমের জন্য যে টাকা এসেছে তা এতিমের হাতে না গিয়ে নিজেরা পকেটস্থ করেছে। জিয়া অরফানেজের টাকা চুরি করেছে বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায় তার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। আর তার ছেলে যে মারা গেছে (আরাফাত রহমান কোকো) সিঙ্গাপুর থেকে তার পাচার করা কিছু টাকা সরকার ফেরত আনতে পেরেছে। অপর সন্তান তারেক রহমানকে কুলাঙ্গার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সে এখন লন্ডনে বসে আছে। এই তারেকই ২০০৭ সালে সেই সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আর কোনদিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে বিদেশে পালিয়েছিল। সে এখন লন্ডনে রাজার হালে থেকে দেশের অভ্যন্তরে তাঁর সরকারের করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যেকোন ধরনের খুন খারাপি, বোমাবাজি তথা নাশকতামূলক কাজ পরিচালনা করে। জিয়া যখন মারা যায় আমরা শুনেছিলোম পরিবারের জন্য তিনি কিছুই রেখে যাননি। একটা ভাঙা সুটকেস ছাড়া কিছু ছিল না। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই কীভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছিল। তারা কি জাদুর কাঠি পেয়েছিল?
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী হত্যা এবং প্রায় ৫শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া-রা পারে কেবল মানুষ হত্যা করতে। এর কারণ হিসেবে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর যারা এদেশে গণহত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ চালিয়েছিল তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই তারা এগুলো করছে। অন্যদিকে অওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে। বিএনপি জানে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই, তারা নির্বাচন চায় না, তারা চায় সরকার উৎখাত করে এমন কেউ আসুক, যারা একেবারে নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। এটাই তারা আশা করে, তারা জনগণের তোয়াক্কা করে না। ওরা ভোটে যেতে চায় না। জিয়াউর রহমান যেমন জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। ওদের ধারণা ওই ভাবেই তারা ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ। বোধ হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদলেহনের দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা শহর নাকি দখল করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে। অথচ পরাজয় নিশ্চিত জেনে এই ১০ ডিসেম্বর থেকেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে, ইত্তেফাকের সাংবাদিক শহীদ সিরাজুদ্দিন হোসেনকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আমি তাদের বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়া ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। আর ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বলেই তাকে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। জনতার মঞ্চ করেছিলাম আমরা। খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। দেড় মাসও যায়নি, খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সে কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত। জনগণের ভোট যদি কেউ চুরি করে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ওরা তা ভুলে গেছে। বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে মানুষ খুন করা। বিএনপি'র দুইটা গুণ আছে, ভোট চুরি আর মানুষ খুন, ওইটা পারে। বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা, মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করার জবাব একদিন খালেদা জিয়া-তারেক জিয়াকে দিতে হবে, এর হিসেব একদিন জনগণ নিবে।
ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অপপ্রচার চলছে অভিযোগ করে গুজবে কান না দিয়ে সকলকে বাস্তবতা বিচার করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান ও মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সর্বনাশ করা এটাই কি বিএনপির জামাত শিবিরের কাজ। নাকি তাদের সাথে চোরের সখ্যতা আছে, চোরকে চুরি করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। আমরা কষ্ট করে রিজার্ভ বাড়ালাম। দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় আসি তখন রিজার্ভ মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আমরা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা বাংলাদেশে বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। রিজার্ভের টাকা মানুষকে দিয়েছি, ওষুধ কিনেছি, ভ্যাকসিন কিনেছি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করিয়েছি। জনগণের কথাই আমরা ভাবি, তাদের কল্যাণেই কাজ করি। এখনও ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আমাদের আছে। সরকার খাদ্য উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে এবং বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যে কষ্ট পেতে তাঁর সরকার দেবে না, সরকার গবেষণা করে ফলমূল, তরিতরকারি, মাছ ও মাংসের উৎপাদন বাড়িয়েছে। তারপর কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ক্ষতি হলে তাঁর সরকার বিদেশ থেকে এনে হলেও স্টক ঠিক রাখে আপদকালীন ব্যবস্থার জন্য। ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর করে দিয়েছি, একটি মানুষও ঘরহীন থাকবে না। বাড়ির ধারে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি যেখানে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনা পয়সায় দেয়া হয়। পাশাপাশি, সারাদেশে ৫৬০টি মসজিদ কাম কালচারাল সেন্টারের মাধ্যমে মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি এবং ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে সেখানে ওরা মানুষকে কি দিয়েছে? কয়েকদিন আগে সারাদেশে ১০০টি সেতু, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, বাজার করে দিয়েছি। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আমরা কাজ করেছি।
প্রায় ৩৪ বছর আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় পুলিশের গুলির ঘটনা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘এরশাদের সময়ে ওই গুলির ঘটনায় দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাকে খালেদা জিয়া রেহাই দিয়েছিলেন। তার মানে হয়ত ওই গুলির ঘটনায় খালেদা জিয়াও জড়িত ছিল।’ চট্টগ্রামের উন্নয়নে কর্ণফূলী নদীর তলদেশে টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ আগামীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ফোর লেন থেকে থিক্স লেন করে দেয়ার পাশাপাশি সেখানে মেট্রো রেল করার জন্য সমীক্ষা হচ্ছে, ভায়াবল হলে তা করে দেয়া হবে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার আছে, সেই আইন জাতির পিতা করে গেছেন। আমরা সেই সমুদ্র জয় করেছি। আজ সেগুলো আমাদের কাজে লাগছে। কিন্তু, বিএনপি এই আইন ও অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়নি। কেননা, জিয়ার জন্ম কলকাতায় আর পড়াশোনা করেছে করাচিতে, এরপর সে সেনাবাহিনীতে আসে।