রহমত নিউজ ডেস্ক 19 November, 2022 08:07 PM
অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নতুন করে খেলা শুরু করেছে। মামলা মামলা খেলা। গায়েবি মামলা। কোনো কিছু ঘটে নাই, হঠাৎ বলে দিল, এখানে নাকি নাশকতা হয়েছে। এই নাশকতার মামলার আসামি ১১৪, ২১৪, ৪০০, ৪৫০। জানে কেউ, কিছু হয়েছে কি না? এভাবে ১৪ বছর ধরে তারা এ দেশের মানুষের ওপরে অত্যাচার-নিপীড়নের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। ১৪ বছর ধরে দেশে অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার কি নির্বাচিত? ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে? হয়নি। আর ২০১৮ সালে আগের রাতেই ভোট শেষ। তারপর তারা বলে, “আমরা ভোটে জিতেছি।” বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিল অধিকার আদায়ের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, কথা বলার স্বাধীনতার জন্য। সেই অধিকারগুলো হরণ করার জন্য, চুরি করার জন্য, ডাকাতি করার জন্য, মানুষের স্বপ্নকে খানখান করে দেওয়ার জন্য জনতার আদালতে এই হাসিনা সরকারের বিচার হবে।
আজ (১৯ নভেম্বর) শনিবার সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন লোডশেডিং, সারাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হত্যার প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা আগে বেলা সাড়ে ১১টায় কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। বেলা দেড়টার দিকে মঞ্চে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে ৪টা ৫৮ মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন। বিএনপির প্রথম গণসমাবেশ হয় গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে। এরপর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে (বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ) গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ছাড়া বাকি সব স্থানে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ময়মনসিংহে গণসমাবেশের আগে অঘোষিত ধর্মঘট পালিত হয়; গণসমাবেশের দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল সেখানে। একইভাবে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে গতকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সিলেট জেলায় আজ সকাল ছয়টা থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। এ ধর্মঘট চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তবে ধর্মঘট উপেক্ষা করে অনেকে মোটরসাইকেলে কিংবা সিএনজি অটোরিকশা করে অথবা হেঁটেই সমাবেশে এসেছেন।
শুরুতেই সমাবেশে আগত ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। এ যুদ্ধ আপনাদের মুক্তির যুদ্ধ, অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ। এই সিলেটের মাটি থেকে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সিলেটের যুদ্ধ থেমে থাকেনি। আপনাদের নেতা সাইফুর রহমান বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মুক্ত করতে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। আজকের যে আধুনিক বাংলাদেশ, সেটাও তিনি করেছিলেন। আপনাদের ইতিহাস হচ্ছে গর্বের ইতিহাস, যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস। এ জন্যই আজ বললাম, যুদ্ধ এই পুণ্যভূমি থেকেই শুরু হলো। এই যুদ্ধে অবশ্যই আমরা জয়লাভ করব।
সিলেটের ‘নিখোঁজ’ বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী এখন আমাদের মাঝে নেই। আমরা জানি না, তিনি বেঁচে আছেন, নাকি বেঁচে নেই। তাঁর সন্তান প্রতিদিন তাকিয়ে থাকে, এই বুঝি বাবা ফিরবে। ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাঁর নিখোঁজ হওয়ার পরও দমে যাননি, হেরে যাননি। তিনি এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম চালু রেখেছেন। তাঁকে আমার স্যালুট। এমন ৬০০ মানুষ, ড্রাইভার আনসার আলী, মিনার, জুনায়েদ— সিলেট থেকে তারাও নিখোঁজ হয়ে গেছে। আমাদের ঢাকার সুমন, ইমন সব নিখোঁজ হয়ে গেছে। তাদের মা, বাবা, স্ত্রী, পুত্র—তাঁরা জানেন এরা কোথায়?’
দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি জনতা, যে ভ্যান ঠেলে, ঠেলাগাড়ি চালায়, নৌকায় বইঠা বায়, কৃষিতে ফসল ফলায়, কিন্তু তারা এখন শান্তিতে নাই। গতকালও তেলের দাম আবার বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে, শাক-সবজি-লবণ-ডিম সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমার সেই কৃষক ভাই, কৃষক মা তার ছেলেকে একটা ডিম দিতে পারে না। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল না? কত টাকা? ৭০ টাকা, ৮০ টাকা? তার নিচে আছে? নাই। এই যে ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনা, ৩ কোটি মানুষ বেকার, আমার সামনে যে ছেলেরা আছে, প্রত্যেকে যুবক-তরুণ। তাঁরা প্রত্যেকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন। তাঁরা স্বপ্ন দেখেন চাকরি করবেন, ব্যবসা করবেন, মা-বাবার মুখে কিছু খাবার তুলে দেবেন। কিন্তু এই সরকার তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী, যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও সালেহ আহমদ চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, তাহসীনা রুশদীর ও এনামুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান, সাবেক সংসদ সদস্য নাসের রহমান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন প্রমুখ।