রহমত নিউজ ডেস্ক 14 November, 2022 08:16 AM
রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও টেকসই সমাধানের লক্ষে সৌদি আরবের অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) নগরীর একটি হোটেলে সফররত সৌদি উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই সহযোগিতা কামনা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি এবং সৌদি আরবের পক্ষে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাছির আব্দুল আজিজ আব্দুল্লাহ আল দাউদ নেতৃত্ব দেন। বৈঠক শেষে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীর সম্মানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া মধ্যাহ্নভোজে মন্ত্রীবর্গ অংশ নেন।বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান, বাংলাদেশ পুলিশের মহা-পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নুরুল আনোয়ারসহ স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে সৌদি উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবহিত করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। শুরুতে উভয়েই দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। তারা দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধার লক্ষ্যে সহযোগিতায় সব ক্ষেত্রে এক সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। মক্কা রোড ইনিশিয়েটিভ চুক্তিতে সই করার জন্য আলম সন্তোষ প্রকাশ করেন, যা ঢাকায় হজের প্রাক-ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে জোরদার করবে এবং বাংলাদেশি হজযাত্রীদের পবিত্র যাত্রা সহজ হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সৌদি আরব থেকে আরবীয় অপরিশোধিত তেল কেনার ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ভিসা সহজীকরণ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি, হজ এবং উমরা পালন পদ্ধতি সহজীকরণ সম্পর্কিত দু’টি চুক্তি পৃথক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বৈঠকে উভয় মন্ত্রী নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়, ভিসা সহজীকরণ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, মানব পাচার ও মাদক নিয়ন্ত্রণে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং হজ ও উমরা পদ্ধতি সহজীকরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ গভীর সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্যতার কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে উভয় দেশের সহযোগিতার উপরে গুরুত আরোপ করে দু’দেশের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জবাবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক একটি চুক্তি করার কথা বলেন। উভয় দেশই এতে সম্মত হন।
বৈঠকে উভয় মন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে সিকিউরিটি কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট এবং রুট টু মক্কা সার্ভিস এগ্রিমেন্ট নামে দু’টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ দুটি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের হজযাত্রা সহজ হবে। ফলে, হজযাত্রীরা বাংলাদেশেই তাদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে সরাসরি সৌদি আরবে তাদের নিজ নিজ অবস্থানে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে সৌদি বিমানবন্দরে দ্বিতীয় দফায় কোনো ইমিগ্রেশন কার্যক্রম করতে হবে না।বৈঠকে সন্ত্রাস দমন, মাদক নির্মূল এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে দু' দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশী নাগরিকদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট হালনাগাদ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ হতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সৌদি সরকার ও ‘ওআইসি ’র সহযোগিতা কামনা করা হলে সৌদি প্রতিনিধি দলের পক্ষ হতে এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার দেয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয়।