মূল পাতা আন্তর্জাতিক ‘তাইওয়ানেও আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরোধিতা করতে বেইজিং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 16 October, 2022 01:49 PM
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, হংকংকে বিশৃঙ্খল এলাকা থেকে সুশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে বেইজিং। তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধেও বড় সংগ্রাম চালাচ্ছে চীন। হংকংয়ের মতো তাইওয়ানেও আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরোধিতা করতে বেইজিং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সক্ষম। তাইওয়ান সমস্যা সমাধান করা চীনা জনগণের ওপর নির্ভর করছে, চীন কখনোই তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের অধিকার ত্যাগ করবে না। তবে দ্বীপটিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চেষ্টা করবে।
আজ (১৬ অক্টোবর) রবিবার ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ঐতিহাসিক কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি একথা বলেন। বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস শুরু হয়েছে এবং প্রতি পাঁচ বছরে একবার এই কংগ্রেস হয়ে থাকে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্স বলছে, ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেলের মতো তাইওয়ানকে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং। মূলত একই কৌশল চীন হংকংয়েও ব্যবহার করে। তবে তাইওয়ানের মূলধারার সকল রাজনৈতিক দল সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জনমত জরিপ অনুসারে এটির প্রায় কোনো জনসমর্থন নেই।
তাইসরকারের তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও চীন গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে তার নিজস্ব এলাকা হিসেবে দেখে থাকে। তবে চীনের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে তাইওয়ানের দাবি, শুধুমাত্র দ্বীপের জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে। মূলত তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। তার ওপর গত আগস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ানে সফর উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। এর জেরে পেলোসির সফরের পরপরই তাইওয়ানের চারপাশে বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। সেসব মহড়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। যদিও তা সীমিত পরিমাণে এবং মহড়ার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে চীনের সশস্ত্র বাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে বেইজিংয়ে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন সবসময় তাইওয়ানের জনগণকে ‘সম্মান করে, যত্ন করে এবং উপকৃত করে’ এবং তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও এগিয়ে নিতে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাইওয়ান সমস্যার সমাধান করা চীনা জনগণের নিজস্ব কাজ এবং এটি চীনা জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ আন্তরিকতা এবং সর্বোত্তম প্রচেষ্টার সাথে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের সম্ভাবনার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর ওপর জোর দিচ্ছি। তবে আমরা শক্তির ব্যবহার ত্যাগ করার এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার ছাড়বে না। তাইওয়ানে বহিরাগত শক্তির ‘হস্তক্ষেপ’ আটকানো এবং তাইওয়ানের বিশাল জনগণের বিপরীতে ‘খুব অল্প সংখ্যক’ স্বাধীনতা সমর্থকদের আটকাতেই এই বিকল্প হাতে রাখা হয়েছে। জাতীয় পুনর্মিলন ও জাতীয় পুনরুজ্জীবনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে এবং মাতৃভূমির সম্পূর্ণ পুনর্মিলন অবশ্যই অর্জন করতে হবে। এটি অবশ্যই অর্জন করতে হবে!
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে। তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার রেখেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।