মূল পাতা আন্তর্জাতিক ভারতে নারী ও মুসলমানদের উপার্জন কম কেন?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 15 September, 2022 04:04 PM
ভারতে নারী, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়, নিম্নবর্ণ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাকরির বাজারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একই অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পুরুষের তুলনায় কম বেতন পায় নারী। একইভাবে কম বেতন পায় মুসলিম ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের ঘটনা ভারতে প্রায়ই ঘটে। দেশটিতে বছরে হাজারো নারী ভ্রূণ হত্যা করা হয়। দেশটির জনসংখ্যায় নারী-পুরুষের আনুপাতিক হারও বৈষম্যমূলক। জন্মের পর থেকেই নারীরা বৈষম্য, সংস্কার, সহিংসতা, অবহেলার শিকার হয়। সারা জীবন ধরেই এমনটা চলতে থাকে। এ ছাড়া ভারতে শ্রমশক্তিতে লিঙ্গবৈষম্য প্রকট। দেশটির শ্রমশক্তিতে নারীদের সংখ্যা কম। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের নতুন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিবিসিতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
অক্সফাম ইন্ডিয়াস ডিসক্রিমিনেশন রিপোর্ট ২০২২ এ নারীদের কম বেতনের জন্য সামাজিক পরিস্থিতি ও চাকরিদাতাদের সংস্কারকে দায়ী করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন আরও বলছে, চাকরির বাজারে অন্য প্রান্তিক সম্প্রদায়ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অক্সফামের প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলছেন, প্রতি মাসে গড়ে পুরুষেরা নারীদের তুলনায় ৪ হাজার রুপি বেশি আয় করে। মুসলিমদের তুলনায় অমুসলিম ৭ হাজার রুপি বেশি আয় করে। নিম্নবর্ণ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ অন্যদের তুলনায় ৫ হাজার রুপি কম আয় করে।
অক্সফাম ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও অমিতাভ বেহার বলেছেন, একই যোগ্যতা থাকলেও পরিচয় বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে কর্মীদের প্রতি ভিন্ন আচরণ করা হলে সেটিকে শ্রমবাজারে বৈষম্য বলা হয়। শুধু শিক্ষা বা কাজের অভিজ্ঞতার কারণে নয় সামাজিকতার কারণে নারী কর্মীরা বৈষম্যের শিকার হন। গবেষকেরা ২০০৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে চাকরি, বেতন, স্বাস্থ্য, কৃষিঋণ বিষয়ক সরকারি তথ্য পর্যালোচনা করেছেন। পরিসংখ্যানের সাহায্যে তাঁরা বৈষম্যের বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন। ভারতের সমাজব্যবস্থায় বৈষম্য বাড়ার কারণ কেবল সামাজিক বা নৈতিক নয়। অর্থনৈতিকও। বৈষম্যের এই হার সামাজিক অবনতির ইঙ্গিত দেয়। বৈষম্যমুক্ত ভারত গড়তে সরকার, রাজনৈতিক দল, নীতিনির্ধারক ও সুশীল সমাজের একসঙ্গে কাজ করা উচিত বলছেন বেহার।
ভারতের সরকারি তথ্য বলছে, ২০২০-২১ সালে শ্রমশক্তির মাত্র ২৫.১ শতাংশ ছিল নারী। ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় এই হার খুব কম নয়। ২০০৪-০৫ সালে ভারতে শ্রমশক্তিতে নারীর হার ছিল ৪২.৭ শতাংশ। সে তুলনায় শ্রমশক্তিকে নারীর হার অনেকটা কমে গেছে। ভারতের গতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়ও শ্রমশক্তিতে নারীদের এই হার উদ্বেগের বলেছে অক্সফাম। গত কয়েক বছরে করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমশক্তিকে নারীদের হার কমতে পারে বলে মনে করছে অক্সফাম। লকডাউনের সময় চাকরির বাজারে সংকটের অনেক নারী কর্মহীন হতে বাধ্য হয়েছেন।
অক্সফামের ওই প্রতিবেদন বলছে, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের আরেকটি বড় কারণ হতে পারে শিক্ষিত নারী সংসারের গৃহকর্মের দায়িত্ব ও সামাজিক অবস্থানের কারণে চাকরি করতে অনিচ্ছুক থাকে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে পুরুষদের সমান বা তাদের চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও নারী চাকরি করেন না। অনেক বছরেও এই পরিস্থিতিতে কোনো বদল আসেনি। চাকরি পেতে, জীবিকা ও কৃষিঋণে সামাজিকভাবে অবহেলিত দলিত সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার হয়। করোনা মহামারির প্রথম কয়েক মাসে মুসলিমদের মধ্যে বেকারত্ব সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ পৌঁছায়।