মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ 29 August, 2022 02:37 PM
ইসলামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একশ্রেণীর লোকজন বলাবলি করেন, হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ 'তওবার রাজনীতি' করেছেন বলে যে কথাটি প্রচলিত আছে, এর অর্থ হলো, জীবনভর ইসলামী রাজনীতি না করে তিনি যে ভুল করেছেন, জীবনের শেষ প্রান্তে 'ইসলামী হুকুমত' প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে নেমে সেই ভুলের জন্য তওবা করেছেন। আর এটাই ছিল তাঁর 'তওবার রাজনীতি'।
'হাফেজ্জী হুজুরের তওবার রাজনীতি' কথাটির উপরোক্ত ব্যাখ্যা পুরোপুরি ভুল এবং মিথ্যা দাবি। মূলত হাফেজ্জী হুজুর ভোট ও রাজনীতিতে 'তওবা'র কথাটি বলতে শুরু করেছেন ৮১'-র নির্বাচনী প্রচারণার সময়কাল থেকে। তিনি বলেছেন, অযোগ্য, মানুষের হক নষ্টকারী, ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চায় না-এমন শ্রেণীর লোকজনকে এতদিন নির্বাচিত করে আমরা যে ভুল করেছি, সেজন্য ইসলামী হুকুমতের পক্ষের প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাদের তওবা করা দরকার।
নির্বাচনের পর যখন খেলাফত আন্দোলন গঠিত হয় এবং মাঠে ময়দানে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কাজ করতে থাকেন, তখন এই তওবা কথাটিকে আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি বলতেন, ৪৭' সালে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার কথা বলে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল, আজকের বাংলাদেশ সেই পাকিস্তানের জায়গায়/ অংশে/ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত; কিন্তু ইসলামী হুকুমত কায়েম করার ওয়াদা রক্ষা করা হয়নি। এই ওয়াদা ভঙ্গের গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের তওবা করে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হাফেজ্জী হুজুর রহ-এর তওবার রাজনীতির খোলাসা কথা এটাই ছিল। রাজনীতি না করে তিনি পাপ করেছেন এজন্য তওবা করতে রাজনীতিতে নেমেছেন বলে যারা দাবি করেন, তারা ভুল এবং মিথ্যা একটি দাবি করেন।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে জীবনের শেষ প্রান্তে অবতরণের প্রসঙ্গে তিনি যে কথাটি বলতেন, সেটি হলো, আমার পূর্বে আমার মুরুব্বী এবং বড় সাথী ভাইয়েরা এই ময়দানে সক্রিয় ছিলেন (হযরত আতহার আলী রহ, হযরত ফরিদপুরী রহ, প্রমুখ) এজন্য আমি নীরবে নিভৃতে আমার কাজগুলো করছিলাম। রাজনীতির ময়দানে অবতরণের দরকার মনে করি নাই, দরকার হয় নাই। এখন তারা কেউ নাই, এ দায়িত্ব পালনে আমাকে নামতে হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ, হযরত আতহার আলী রহ, হযরত ফরিদপুরী রহ-সহ অগণিত আকাবির আসলাফ-এর মেহনত কবুল করুন এবং জান্নাতে তাদের উঁচু মাকাম দান করুন।
লেখক: আলেম ও সম্পাদক