রহমত ডেস্ক 28 August, 2022 08:27 PM
দেশের বাজারে চালের সরবারহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি পেয়ে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি করলেও বন্দর থেকে চাল খালাস করছেন না আমদানিকারকরা।
রোববার (২৮ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিন থেকে এ তথ্য জানা যায়। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ভারতে দাম বাড়ানোয় চাল আমদানি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে, তাই শুল্ক ছাড়ের আশায় বন্দর থেকে চাল খালাস করছে না আমদানিকারকরা। ট্রাক থেকে চাল খালাস না করায় বিপাকে পড়েছেন ট্রাকচালকরা।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমানোয় ও চাল আমদানির অনুমতি পাওয়ায় আমরা চালের এলসি খুলেছি, সেই সঙ্গে ভারত থেকে চাল আমদানি করেছি। কিন্তু আমদানি শুল্ক কমানো ও আমদানির অনুমতি দেওয়ার খবরে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্বের চেয়ে ডলার রেট বাড়ার কারণে চাল আমদানি করে, আমাদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে। যার কারণে আমদানিকারকরা বন্দর থেকে চাল খালাস নিচ্ছেন না, এতে করে বন্দরের অভ্যন্তরে প্রায় দুশতাধিক চালের ট্রাক আটকা পড়েছে।
তিনি আরও জানান, আমদানিকারকরা আশায় আছে হয়তো বা সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেবে। চালের ওপর আরোপিত ২৫ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহার করলে আমদানিকারকরা যেমন লোকসান থেকে বাঁচবে, তেমনি বন্দর থেকে চাল খালাস করে নেবেন। এতে করে বাজারে চালের সরবারহ বাড়ায় দাম কমে আসবে।
চাল আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, ডলার রেটের যে ওঠানামা এখন এক দাম একটু পরে আরেক দাম তাতে করে কত দামে গিয়ে ঠেকবে তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা এক মূল্যে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করছি, আর ব্যাংকে বিল ছাড়তে হচ্ছে বাড়তি মূল্যে। এতে করে চাল আমদানি করে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমদানিকারকরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। তবে তারা কোথায় শুনেছে সরকার চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেবে। এই আশায় চাল খালাস করছেন না। কেউ কেউ চাল খালাস নিচ্ছে, তবে পরিমাণ কম।
ভারতীয় ট্রাকচালক গোলাম রাব্বানি বলেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত চাল নিয়ে স্থলবন্দরে আসা ২১ দিন হয়ে গেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রাক থেকে চাল খালি হয়নি, খালি হওয়ার কোনো নাম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। চালের রেট না কি বেশি, যার কারণে চালের পার্টি দেখতেও আসছেন না।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমানোয় গত ২৩ জুলাই থেকে বন্দর দিয়ে আবারও ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে চাল আমদানির পরিমাণ কম হলেও বর্তমানে চালের আমদানি কিছুটা বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে ৩ থেকে ৫ ট্রাক চাল আমদানি হলেও, বর্তমানে তা বেড়ে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক করে। তবে চাল আমদানি বাড়লেও চাল খালাস হচ্ছে না সেভাবে। খালাস প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হওয়ায় বর্তমানে বন্দরে ২২৭টি ট্রাকে ৯ হাজার ২৭০ টন আমদানিকৃত চাল আটকা অবস্থায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় গত বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি দেশীয় চালের সরবরাহ কমের অজুহাতে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে, সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক ৬২.৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ২৫ ভাগ করে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এতে করে ২৩ জুলাই থেকে বন্দর দিয়ে পুনরায় চাল আমদানি শুরু হয়। -আরটিভি।