রহমত ডেস্ক 19 July, 2022 06:10 PM
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন-ইসির সংরাপে বর্তমান সাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্তকরণ, ইভিএম চালু ও যুদ্ধাপরাধীদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়াসহ ৯ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দল।
আজ (১৯ জুলাই) মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংলাপে অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারসহ অন্য কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আজ সকালে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু দলটি আসবে না বলে জানিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ মুসলিম লীগও সংলাপে অংশ নেয়নি। ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্য ২৯টি দলের সঙ্গেও বসার কথা রয়েছে ইসির।
সংলাপে অংশ নিয়ে লিখিত বক্তব্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বিগত দুটি (২০১৪ ও ২০১৮) নির্বাচনে জনগণের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে ব্যত্যয় ঘটেছে। এ দুটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টিও জনগণের কাছে প্রশ্ন বিদ্ধ ছিল। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাতে তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন। সংলাপে একটি অর্থবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের যেকোনও উদ্যোগকে দলটি সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
দলটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন : ক. দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকে বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকার দৈনন্দিন কার্যাবলি ছাড়া নীতিগত কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। খ. অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধিনস্ত থাকবে। গ. নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নির্বাচন পূর্বে ও পরে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকবে। এই সময়কালে তাদের কোনও অপরাধ ও কর্তব্যে অবহেলার জন্য নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে এবং সরকার তা বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।
২. এনআইডি কার্ড সংশোধন : এনআইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হয়রানির সম্মুখীন হন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সংশোধনকারীদের হয়রানি থেকে রেহাই দেবার ব্যবস্থা করতে হবে এবং হয়রানিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ভোটার তালিকা : ক. ভোটার তালিকা প্রকাশের পূর্বে তা সংশোধনের জন্য আইন অনুযায়ী ভোটের তালিকা প্রকাশ্য স্থানে টাঙ্গিয়ে দেবার বিধান রয়েছে। তার বাস্তবায়ন করতে হবে। খ. যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত কেউ ভোটার হতে পারবে না। হয়ে থাকলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। গ. প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘ. পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী প্রকৃত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করা : ক. প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে যারা যেভাবেই ব্যয় করুক, তা প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় হিসেবে গণ্য হবে এবং তা কোনোক্রমে নির্বাচনি ব্যয়ের সীমানা লঙ্ঘন করবে না। প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় একজন নির্বাচনি কর্মকর্তা এই ব্যয় মনিটর করবেন এবং নির্বাচন কমিশনকে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করবেন। এই রিপোর্টের সঙ্গে প্রার্থীর দেওয়া নির্বাচনি ব্যয়ের বিবরণ মিলিয়ে দেখা হবে। খ. প্রার্থীর নির্বাচনি আয়-ব্যয়ের বিবরণ সর্বসাধারণকে জ্ঞাত করতে উন্মুক্ত দলিল হিসেবে রাখতে হবে এবং প্রচার মাধ্যমকে তা সরবরাহ করতে হবে। যেকোনও ভোটার এ ব্যাপারে তাদের আপত্তি জানাতে পারবে। গ. নির্বাচনি কাজে আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে এবং তা করতে না পারলে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে। ওই বিবরণীয় যথার্থতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘ. ভবিষ্যতে প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নির্বাচনি ব্যয় বহনের ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ নিতে হবে।
৫. নির্বাচনকে সন্ত্রাস পেশী শক্তির প্রভাব ও দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে : ক. নির্বাচনে সকল প্রকার বল প্রয়োগ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা এবং বল প্রয়োগের ঘটনায় শাস্তির বিধান করতে হবে। খ. ফৌজদারি দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং দুর্নীতির দায়ে যেকোনও সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া যাবে না।
৬. নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকদের প্রভাব : ক. নির্বাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার ব্যবহার সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা ও ভোট চাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। খ. ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, মঠ, ওয়াজ ও ধর্ম সভায় প্রত্যক্ষও পরোক্ষ কোনও প্রকার নির্বাচনি প্রচার পোস্টার হ্যান্ডবিল বিলি নিষিদ্ধ করতে হবে। গ. ভোটের দিন সংখ্যালঘু অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তার বিষয়টিকে অতীব গুরুত্ব দিতে হবে।
৭. নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা : ক. পোস্টার, লিফলেট, বেদ্যুতিক, ডিজিটাল, বিজ্ঞাপন, মাইক, নির্বাচন ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়াল লিখন গেট নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আছে, তা ব্যতিক্রমহীনভাবে পালন করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তা এই বিষয়ে নিশ্চিত করবেন। এক্ষেত্রে কোনও আইন ও বিধি ভঙ্গ হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন। খ. নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক নিবাচনি এলাকায় সভার আয়োজন করবে। গ. নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার দিন থেকে সকল দলের কেন্দ্রীয় সমাবেশ, মহাসমাবেশ, র্যালি, জনসভার ব্যয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঘ. নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্বাচনি অফিস ব্যতিরেকে কোনও নির্বাচনি ক্লাব, ক্যাম্প নির্বাচনি প্রচারকেন্দ্র হিসেবে কোনও কাঠামো করা যাবে না। ঙ. রেডিও টিভির সময় সমভাবে বণ্টন করা এবং তার ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। এসব প্রতিটি বিষয়ে নির্ধারন কমিশনের তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং লঙ্ঘনকারীদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।
৮. নির্বাচন ব্যবস্থাকে আধুনিক রূপ প্রদানের জন্য ইভিএম প্রদ্ধতি চালু সময়ের জরুরি দাবি বলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএম) যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে।
৯. সংসদে প্রতিনিধিত্বে ধরন : এদেশে এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা রয়েছে— তা নির্বাচনে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের সহায়ক, তাছাড়া এই ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, ছোট অথবা সম্ভাবনাপূর্ন দল সংসদ প্রতিনিধিত্ব পায় না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচনি এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের বদলে আনুপাতিক প্রতিনিধিদের পদ্ধতি চালু আছে। এই অবস্থা ভোটপ্রাপ্তির হারের ওপর অধিক সংখ্যা নির্ধারিত হয়। নির্বাচন, সংসদ ও গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল এই বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে।