রহমত ডেস্ক 07 July, 2022 06:36 AM
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিয়ে সরকারের সাফল্য ও আত্মতৃপ্তির বয়ান ইতোমধ্যেই দুঃসংবাদে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে ব্যাপক লোডশেডিং চলছে। জনজীবন দুর্ভোগে অতিষ্ঠ। খোদ রাজধানীতে লোডশেডিং অস্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে চিকিৎসাশিক্ষা ও শিল্প কারখানাসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চলছে। বিদ্যুতের অভাবে সেচযন্ত্র বন্ধ থাকায় মৌসুমের আবাদসহ বিরূপ প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক উৎপাদনে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়লেও বিতরণ ও সরবরাহ সক্ষমতা বাড়েনি। বিদ্যুতের এ বিপর্যয় দ্রুত নিরসনের সম্ভাবনাও নেই। বুধবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুর রব বলেন, সরকার এখন অফিস, দোকান, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধসহ উৎপাদন উপকরণের সাশ্রয়ের যে নতুন বয়ান দিয়ে যাচ্ছে, তাতে জনগণ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিদ্যুতের অপচয়, অপ্রয়োজনীয়তা এবং কোথায় সাশ্রয় করা যায়, তা চিহ্নিত করে সরবরাহ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থাৎ ২ দশমিক ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েও জনগণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারেনি। দক্ষতার অভাব, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করতে না পারলে এ খাতে দেনার পরিমাণ আরও বাড়বে। এসব দায় অবশ্যই সরকারকে বহন করতে হবে। দেশের সক্ষমতার ৫৮ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা যা কোনোক্রমেই জাতীয় স্বার্থের সহায়ক নয়। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যেটুকু বিদ্যুৎ কেনা হয়, তার দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পড়েছে, যা বিস্ময়কর। সিস্টেম লসের নামে বিদ্যুতের মূল্য পুনরায় ৫৮% বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। যেকোনো দিন বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে, যা জনজীবনকে আরও বিপর্যায়ের দিকে ঠেলে দেবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি খাতে কম মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে বেসরকারি খাতে অধিক মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়কে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি বিশেষ করে কয়লা ব্যবহার বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণার পরও বাংলাদেশে অপরিকল্পিতভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, এমনকি জ্বালানির উৎস বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা নতুন করে কয়লা খাতে বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য এটি বড় দুঃসংবাদ। ফলে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা চরম ঝুঁকিতে পড়বে। বিদ্যুৎ খাতের তুঘলকি কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে হবে ও অধিক ব্যয় বহুল রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। তাই স্থল ও সমুদ্রভাগে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের প্রশ্নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, জ্বালানি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। প্রযুক্তি দ্রুত বদল হচ্ছে সুতরাং স্বল্প মেয়াদের চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব যুগোপযোগী পরিকল্পনা নিতে হবে। জাতীয় স্বার্থে বিদ্যুৎ খাতের আমূল সংস্কার করে জনগণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।