রহমত ডেস্ক 31 May, 2022 08:40 PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে গণসংহতি আন্দোলন। বৈঠকে বিএনপির কাছে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে সংবিধান সংশোধনসহ ৭ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে।
আজ (৩১ মে) মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশ নেন। তারা হলেন, নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, মুনির উদ্দিন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমি, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ইমরাদ জুলকারনাঈন, বাচ্চু ভুঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, সদস্য মিজানুর রহমান, আলিফ দেওয়ান। বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেয় দলটির মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। এর আগে, গত ২৪ মে মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য ও এর দু’দিন পর ২৭ মে লেবার পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। আগামীকাল বুধবার (১ জুন) বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সঙ্গে সংলাপ করবে বিএনপি।
বৈঠক শেষে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। সাংবিধানিক ক্ষমতার ওপর ভর করে বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। এই সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর বদল দরকার। সেজন্য আমরা সংবিধান সংস্কারের সুনির্দিষ্ট কতগুলো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন- আমরা মনে করি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে। নিম্ন আদালতকে উচ্চ আদালতের অধীনস্থ করতে হবে, সব দিক থেকে; তার নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতিসহ। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি করতে হবে এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করার কোনোরকম তৎপরতা কিংবা কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি। আমরা ৭০নং অনুচ্ছেদের সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা, সকল সাংবিধানিক পদে সাংবিধানিক কমিশনের মধ্য দিয়ে নিয়োগ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদে নিম্ন কক্ষ ও উচ্চ কক্ষ গঠন, প্রদেশ ব্যবস্থা সামনে নিয়ে আসা, সকল অগণতান্ত্রিক আইন বাতিল করা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কিংবা আরপিও এসব আইন যেগুলো জনগণের ওপর নিপীড়নকারী সেগুলোর বাতিল করার কথা বলেছি। দেশে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-ভাষা-লিঙ্গীয় পরিচয় নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সাংবিধানিকভাবে সেই আইন সুরক্ষার প্রস্তাব করেছি। আমরা মনে করি এই সরকার পতনের পরে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র কীভাবে চলবে এ বিষয়ে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুণগত রূপান্তর বা গণতান্ত্রিক রূপান্তর, নতুন একটা গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত তৈরির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন তৈরি হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে এটা স্পষ্টভাবে মনে করি, বর্তমান সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন দরকার। একটা জাতীয় রূপরেখা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে হাজির হলে জনগণ নতুন করে আন্দোলিত হবে। একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারব। সেজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে ঐক্যমত হয়েছি যে, যুগপৎ ধারায় আন্দোলন যার যার অবস্থান থেকে পরিচালনা করতে হবে। সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, এরা প্রত্যেকেই ভোটাধিকারের দাবিতে আজকে নিজেরা আন্দোলন করবেন। একটা জাতীয় ঐক্যের জায়গায় সরকার যেহেতু দাঁড় করিয়ে দিয়েছে- এই জাতীয় আন্দোলন আগামী দিনে সবার নিজের অবস্থান থেকে সাধ্যমত করবেন। এরমধ্যে কীভাবে সমন্বয় গড়ে তোলা যাবে সেই সমন্বিত যুগপৎ ধারার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে একটা কাঠামো, একটা রূপরেখা নিশ্চিতভাবে সামনে আসবে।