রহমত ডেস্ক 29 April, 2022 04:05 PM
পবিত্র জুমাতুল বিদা। আজ রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হলো পবিত্র জুমাতুল বিদা। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দেশ-জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনায় দোয়া করেন মুসল্লিরা।জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমাতুল বিদা উপলক্ষে নামাজের পর বিশেষ মোনাজাত হয়। নামাজের আগে জুমাতুল বিদার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরে দেশ-জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের রক্ষায় দোয়া করা হয় এবং ঈদে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। এদিন মসজিদে মসজিদে আজানের আগে থেকেই মসজিদে ভিড় করতে শুরু করেন মুসল্লিরা। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেয়ে মসজিদ চত্বরে ও রোদের দাবদাহ উপেক্ষা করে সড়কে জায়নামাজ পেতে নামাজ আদায় করেন অনেকে। রমজান মাসের শেষ জুমার দিন মুসলিম বিশ্বে ‘জুমাতুল বিদা’ হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারো বাংলাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এটি পালিত হলো।
রাজশাহী : রাজশাহীর মসজিদ গুলোয় ছিল মুসল্লিদের উপচেপড়া ভীড়। আজানের পর থেকেই মসজিদ গুলোর দিকে মুসল্লিরা যেতে থাকেন। অল্প সময় মসজিদের ভেতর ভরে যায়। সব মসজিদে ছিল ঠাই নেই অবস্থা। মসজিদ আঙ্গিনার বাইরে বাড়তি জায়নামাজের ব্যবস্থা করতে হয়। মসজিদ ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তায় গড়ায় জামাত। হযরত শাহমখদুম রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাজার সংলগ্ন মসজিদ, সাহেব বাজার বড় মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ, রাজারহাতা মসজিদ, রাজশাহী কলেজ মসজিদ, আরডিএ মার্কেট মসজিদসহ সব মসজিদ ছিল মুসল্লীতে ভরা। অতিরিক্তি জায়নামাজ ও সামিয়ানা টানিয়ে নামাজের ব্যবস্থা করতে হয়। সাহেব বাজার বড় মসজিদের বাইরে প্যান্ডেল টানানো হয়। অসহনীয় গরম সহ্য করেই মুসল্লিরা নামাজে শরীক হন। নামাজের শেষে প্রচন্ড তাপদাহে আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। রমজানের শেষ জুমা হিসাবে মুসলিম উম্মাহর কাছে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। জুমার দিনের স্বতন্ত্র ফজিলত অনেক বেশি। রমজানের প্রতিটি জুমা ফজিলত ও তাৎপর্যের দিক থেকে অনন্য। রমজান ও রোজার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মাঝে তাকওয়া বা খোদাভীতি যোগ্যতা অর্জন করানো। গরমের মধ্যেই নামাজ শেষে কবরস্থান গুলোয় ভীড় করেন জিয়ারতকারীরা।
চট্টগাম : রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমায় নগরীর মসজিদগুলোতে মুসল্লির ঢল নামে। নামাজ শেষে মোনাজাতে চোখের পানিতে পবিত্র রমজানকে বিদায় জানিয়েছেন নগরবাসী। জুমার আজানের আগেই মসজিদমুখী হন মুসল্লিরা। আজানের পর মসজিদগুলোতে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রায় প্রতিটি মসজিদে নামাজের কাতার মসজিদ ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তপ্ত সড়কে নামাজ আদায় করেন অনেকে। কয়েকটি এলাকায় জুমার নামাজ চলাকালে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সব শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষ এক কাতারে সামিল হয়ে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে ইমাম ও খতিবগণ দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করেন। নামাজের আগে খতিবগণ যাকাত, ফিতরার ফজিলত ও ঈদের দিনের করণীয় বর্ণনা করেন। নগরীর ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, হযরত শাহ আমানত খান দরগাহ মসজিদ, এনায়েত বাজার শাহী জামে মসজিদ, ধনিয়ালাপাড়ার বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, পাঠানটুলি চট্টেশ্বরাই গায়েবি মসজিদ, ফিরিঙ্গি বাজার জামে মসজিদ, মুরাদপুর মসজিদে বেলাল, বহদ্দারহাট জামে মসজিদ, মেহেদিবাগ সিডিএ আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, কাজির দেউড়ি জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, সিজিএস কলোনী জামে মসজিদ, জাম্বুরি মাঠ জামে মসজিদ, বন্দরটিলা হযরত আলী শাহ জামে মসজিদসহ নগরীর বেশিরভাগ মসজিদে ছিল মুসল্লির উপচেপড়া ভিড়।
বরিশাল : মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরবারে পানাহ ও রহমত কামনা করে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে পবিত্র জামাতুল বিদা পালিত হয়েছে। রমজান মাসের শেষ শুক্রবারের এ জুমা নামাজে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মসজিদগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেশীরভাগ মসজিদেই আজানের আগেই বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী প্রবেস করে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ আদায় ও জিকিরে মগ্ন ছিলেন। এছাড়াও বরিশালের চরমোনাই দরবারে, পিরোজপুরের ছারছিনা দরবার, ঝালকাঠীর নেসাবাদের কায়েদ ছাহেব হুজুরের দরবার, বরগুনার মোকামিয়া দরবার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে হজরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছাহেবের দরবার শরিফ মসজিদেও জামাতুল বিদার নামাজে বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী অংশ নেন। এছাড়া বরিশাল মহানগরীর চকবাজার জামে এবাদুল্লাহ মছজিদ, কেন্দ্রীয় জামে কসাই মসজিদ, বায়তুল মোকাররাম মসজিদ সহ নগরীর বিভিন্ন মসজিদেও হাজার হাজার মুসুল্লীয়ান জামাতুল বিদার জামাতে শরিক হন। এদিক বৃহস্পতিবার রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতেও দক্ষিণাঞ্চলের মসজিদ সমুহে মুসুল্লীয়ানগর রাতভর এবাদত বন্দেগীতে অংশ নেন। এ উপলক্ষে বরিশালের জামে এবাদুল্লাহ মছজিদে খতমে তারাবী ছাড়াও কিয়ামুল লাইলের নামাজেও বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী অংশ নেন।
খুলনা : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এবং ইহকাল ও পরকালের মুক্তি কামনায় আজ শুক্রবার বিভাগীয় শহর খুলনায় পবিত্র জুমাতুল বিদা পালিত হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদা হিসেবে প্রতিবছর পালন করেন মুসলমানরা। রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখা আর ইবাদত-বন্দেগির অংশ হিসেবে এদিন নাজাত প্রার্থনা করেন সবাই। জুমার আজানের পর খুলনার টাউনহল জামে মসজিদ, বায়তুন নুর জামে মসজিদ, বায়তুস শরফ মসজিদ, পিটিআই মসজিদ, ডাকবাংলো মসজিদসহ সব মসজিদে নামাজে আজ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের বাড়তি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। জুমাতুল বিদার খুতবায় উচ্চারিত হয় ‘আলবিদা, আল বিদা, ইয়া শাহর রামাদান। অর্থাৎ বিদায়, বিদায় হে মাহে রমজান। নামাজ শেষে খুলনাসহ গোটা দেশ ও জাতির সুখ, সমৃদ্ধি, কল্যাণ ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি এবং কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দোয়া করা হয় বছরের বাকি দিনগুলোতে যেন পাপ ও অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকা যায় সেজন্য। নামাজ আদায়ের পর মহানগরীর টুটপাড়া. বসুপাড়া, গোয়ালখালি কবরস্থানে বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।