রহমত ডেস্ক 18 April, 2022 06:17 PM
ইমাম হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানী ও মর্যাদাশালী ব্যক্তি। ইমাম এবং ইমামতি বিষয়টা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মসজিদে নববিতে আখেরি নবি সাইয়্যেদুল মুরসালিন ইমামুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজীবন ইমামের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মসজিদে নববিকে তিনি শুধু নামাজের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং সমাজ উন্নয়নের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি তা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আমরা যদি প্রতিটি মসজিদকে নবিজির দেখানো সেই মসজিদে নববির রোল মডেল রূপে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমাদের সমাজ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে, সমাজে ব্যাপকভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
আজ (১৮ এপ্রিল) সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ ভোজন রেস্টুরেন্টে জাতীয় ইমাম পরিষদ বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইমামদের অবদান’ আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় ইমাম পরিষদের সভাপতি মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া ও সেক্রেটারী জেনারেল মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন সঞ্চালনায় মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে মাওলানা মুজীবুর রহমান হামিদী, জমিয়েতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশের সিনিয়র সহ সভাপতি মুফতি শেখ মুজীবুর রহমান, মহাসচিব ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দীন ইকরাম, মুফতি শাইখ উসমান গণী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আকম আশরাফুল হক, ক্যারিয়ার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতি আফজাল হুসাইন, সবার খবর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গাফফার, মুফতি ইসমাঈল, মুফতি সাইফুল্লাহ নোামানী, মুফতি আব্দুল্লাহ ইদরীস, মুফতি সলীমুল্লাহ খান, মুফতি আল আমিন, মুফতি আমানুল্লাহ বসন্তপুরী, মুফতি জাকির বিল্লাহ, মাওলানা কামাল উদ্দীন নোমানী, মুফতি ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।
তারা আরো বলেন, মসজিদের কমিটি আর মুসল্লিরা মনে করেন অল্প বেতন দিয়ে ইমামকে ঠকিয়ে তারা জিতে যাচ্ছেন। আসলে তা নয় বরং ক্ষতি যা হওয়ার আপনাদেরই হচ্ছে। যিনি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, জান্নাতের আশায় নামাজ পড়েন এ বিষয়টি তিনি কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান লাখ লাখ টাকা খরচ করে ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করেন। কোনো সন্দেহ নেই এটা খুব ভালো কাজ। কথা হল, এক রাত ওয়াজের বিনিময়ে যদি একজন ওয়ায়েজকে লাখ লাখ টাকা দিতে পারেন, তাহলে যে ইমাম সারা বছরই আমাদের পাশে থাকেন, সুখে-দুঃখে যার কাছে গিয়ে দোয়া চাই, তাকে কেন সম্মানজনক কোনো বেতন দিতে পারছি না। তাকে যদি ভালো বেতন দিই তাহলে তিনি যেমন প্রশান্ত মনে নামাজ পড়াতে পারবেন তেমনি আমাদের নামাজও আরও বেশি কবুলিয়াতের যোগ্যতা অর্জন করবে। অনেক মুসল্লিই কাঁচুমাচু হয়ে হুজুরকে বলেন, হুজুর! আপনাকে যোগ্য সম্মানী দিতে পারছি ন। মনে কষ্ট নেবেন না। আরও নানা কথাবার্তা। আসলে এগুলো লোকদেখানো ছাড়া আর কিছুই না।
তারা আরো বলেন, মসজিদের ইমামদের সঠিক মূল্যায়ন করা হলে তেমনি উপযুক্ত প্রশিক্ষিত করে সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারায় তাদের সম্পৃক্ত করে নীতি-নৈতিকতার বিকাশ সাধন করা যেতে পারে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, মাদকাসক্তি নিরসন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মতো সামাজিক অপরাধ দমন, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের মতো জাতীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দ্বারা মানবাধিকার বাস্তবায়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জাতি গঠন এবং একটি আদর্শ সুশীল সমাজ বিনির্মাণে ইমামদের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করা যায়।
সভাপতির বক্তব্যে মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, বাসাবাড়ির ভাড়া, যাতায়াত খরচ ও চিকিৎসা খরচসহ সবকিছুই ঊর্ধ্বমুখী। ধনী, গরিব, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়। কিন্তু ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাসিক সম্মানি ভাতা যুগ-চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য। অনেকের ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতোও নয়। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সব মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।
সেক্রেটারী মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন বলেন, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য বাসা ভাড়া বাবদ একটি মাসিক ভাতা চালু করা এবং মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ দুই ঈদের বোনাস দেওয়া, সমাজে সুবিধাবঞ্চিত, জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত ইমাম মুয়াজ্জিনদের পাশে দাঁড়ানো, মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং নীতিমালা অনুযায়ী ইমামকে পদাধিকার বলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অথবা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে রাখা। এতে শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সিদ্ধান্তের ঘটনা ঘটবে না। এছাড়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কমপক্ষে ইমামের জন্য ফ্যামেলি কোয়ার্টারের ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তিনি।