| |
               

মূল পাতা ইসলাম খতমে তারাবীহ; একটি অবহেলিত সুন্নাহ!


খতমে তারাবীহ; একটি অবহেলিত সুন্নাহ!


মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী     16 April, 2022     12:06 PM    


তারাবীহ নামায যেমন সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। তেমনি তারাবীহ নামাযে অন্তত এক খতম কুরআন পড়াও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে তারাবীহের সুন্নাত আদায়ে যতোটা যত্নবান হতে দেখা যায়, খতমে তারাবীহের সুন্নাত পালনে ততোটাই উদাশীনতা দেখা যায়। অথচ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ লাগাতার পরিহারকারী কবীরা গোনাহের অপরাধী বিবেচিত হয়। যারাও খতমে তারাবীহ পড়ে থাকেন, তাদের অধিকাংশ এমন দ্রুততার সাথে তিলাওয়াত করেন, যা কুরআন অবমাননার শামিল। ইল্লা মাশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা হেফাজত করুন।

আজকে এক দ্বীনী প্রোগ্রামে যেতে হয়েছিল। ইফতার শেষে দ্রুত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হই। উদ্দেশ্য সময়মত পৌঁছে খতমে তারাবীতে অংশ নেয়া।গন্তব্যে পৌঁছার আগেই তারাবীর সময় হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে যাত্রাবিরতি দেই। একটি থানা শহর। আলিশান মসজিদ। যায়গাটা এমন যেখান থেকে তারাবীহ শেষে আমার গন্তব্যে পৌঁছার গাড়ি পাওয়াটা কঠিন হতে পারে। তবু খতম মিস হবার শংকায় এ রিস্ক নিয়েই গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।

মসজিদে ঢুকে দিলটা খুশ হয়ে যায়। মসজিদ ভর্তি মুসল্লি। টাইলস করা মেঝ। এসি চলছে। ইশার নামায শেষে তারাবীহ শুরু হতেই ভালো লাগা তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখে পরিণত হয়। আমার কল্পনায়ও ছিল না যে, একটি থানা শহরের কেন্দ্রস্থলের এমন আলীশান মসজিদে সূরা তারাবীহ হতে পারে। অথচ কাছাকাছি একাধিক হিফজখানা ও বড় মাদরাসা আছে। ইচ্ছে করলেই হাফেজ পাওয়া যাবে।

তাহলে এমন হবার কারণ কী? কারণ একটাই খতমে তারাবীহের সুন্নাহ আদায়ে অনীহা। অথচ হাফেজ পাওয়ার সুযোগ থাকার পরও খতমে তারাবীহের সুন্নাহ পরিত্যাগ করা একটি মারাত্মক গোনাহের কাজ। যে মসজিদ কর্তৃপক্ষ অনীহাবশত, অলসতা করে এ সুন্নাহ থেকে মুসল্লিদের বঞ্চিত করছে, তারা যেমন গোনাহগার হয়, তেমনি যে মুসল্লিগণ এর প্রতিবাদ করে না, তারাও সমান গোনাহগার। আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

হযরত হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি রমজানে লোকদের (তারাবীর) ইমামতী করে, সে যেন সহজতা অবলম্বন করে। যদি তার কিরাত ধীরে ধীরে হয়, তাহলে যেন এক খতম কুরআন পড়ে। যদি মধ্যম ধরণের হয়, তাহলে দেড় খতম। আর যদি দ্রুত হয়, তাহলে দুই খতম করবে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২২, হাদীস নং-৭৭৬১]

যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির বন্ধুরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবী] নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সেহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরীতে তিন দিনে খতম করতেন। {হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬}।

লেখক : পরিচালক, তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা