রহমত ডেস্ক 11 April, 2022 08:58 PM
তাহরিকে খাতমে নুবুওয়্যাত বাংলাদেশের আমীর মুফতি ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী জৌনপুরী বলেছেন, দ্বীন ইসলামের দাওয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা যুগে যুগে নবী ও রাসুলগণকে পৃৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। সর্বশেষে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে নাবীকূলের সম্রাট হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশ্রেষ্ঠ নাবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করে নুবুওয়্যাত ও রিসালাতের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন যার পরে আজ পর্যন্ত কোন প্রকার নবী কিংবা রাসূল অবশ্যই আসে নাই, অবশ্যই এখনো নাই, অবশ্যই কিয়ামত পর্যন্ত আসবে না। এ আকিদা বা বিশ্বাসকেই বলা হয় আকিদায়ে খাতমে নুবুওয়্যাত। ইসলামের মূল ভিত্তি ঈমান ও আকিদা। আর ঈমানের মৌলিক বিশ্বাস খাতমে নুবুওয়্যাতের বিশ্বাস। তাই এই বিশ্বাস ছাড়া কোন ব্যক্তি, গোত্র, সম্প্রদায় কখনই মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ অন্যান্য ধর্মে কিছু প্রথা অনুসরণ করলেই সেই ধর্মের অনুসারী হওয়া যায়। কিন্তু ইসলাম প্রথা সর্বস্ব কোন ধর্ম নয়। তাই ঈমানে সামান্যতম কুফর থাকলে কারো মুসলমান পরিচয় দেয়ার সুযোগ নেই।
আজ (১১ এপ্রিল) সোমবার ইনিস্টিটিশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে তাহরিকে খাতমে নুবুওয়্যাত বাংলাদেশের ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মাওলানা আরিফুর রহমানের সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের আমীরে শরীয়ত আল্লামা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, তাহরিকে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এহসানুল্লাহ আব্বাসী, মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ আব্বাসী, সেগুনবাগিচা মসজিদ-ই-নূরের খতীব মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সুবহানী, বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদের সভাপতি মাওলানা আমীরুল ইসলাম বিলালী প্রমুখ।
ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, কে রাষ্ট্রদ্রোহী তা যদি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচার করা যায়। তাহলে কে কাফের, কে মুশরেক, কে মুসলিম, কে অমুসলিম আল্লাহ্ তায়ালার অবতীর্ণ, মহাসত্যের সর্বোচ্চ মানদ-ে উত্তীর্ন, বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ এবং একমাত্র সংবিধান কুরআনুল কারীম অনুযায়ী কেন বলা যাবে না? যদি রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমান করার অধিকার সংবিধান দিয়ে থাকে তাহলে কে কাফের কে অমুসলিম সেটি প্রমান করার অধিকারও কুরআনুল কারীম দিয়েছে। তাই খাতমে নুবুওয়্যাতের বিশ্বাসকে অস্বীকার করার কারনে কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিঃসন্দেহে কাফের এবং অমুসলিম। তাদেরকে যারা কাফের মনে করবে না তারাও কাফের।
তিনি আরো বলেন, কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিশ্চিতরুপে কাফের এবং অমুসলিম। তারপরেও নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুসলমানদের সম্মান, মর্যাদা ও অধিকারকে নষ্ট করছে। তাই বাংলাদেশের সরকারের উচিত মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার্থে সংবিধানের ২য় অনুচ্ছেদের (ক) ধারা এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতেই হবে। আর যখনই কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে সভা, সেমিনার ও রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হয় তখনই কতিপয় বুদ্ধিজীবীদের ধর্মনিরপেক্ষতার আওয়াজ শুরু হয়। কিন্তু স্মরণ রাখা দরকার ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে অমুসলিম হয়েও মুসলিম পরিচয় দেয়া নেহায়েত ইসলামের সাথে বিরোধিতা, মুসলমানদের সাথে বৈরীতার বহিঃপ্রকাশ এবং অসাংবিধানিক আচরণ। যদি সরকার এই বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে তাহলে মুসলমানদের নিকট ত্বাগুত হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো খাতমে নুবুওয়্যাতের আন্দোলনের ব্যপারে কেন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে তা আমার নিকট একেবারেই অস্পষ্ট। অথচ ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় খাতমে নুবুওয়্যাতের আন্দোলন সবচেয়ে বড় আন্দোলন, খাতমে নুবুওয়্যাতের জিহাদ সবচেয়ে বড় জিহাদ। কেননা হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে এক দিনে ২৪০০ শত সাহাবী শাহাদাত বরণ করেছেন। যারমধ্যে ৭০০ শতসাহাবী কুরআনে হাফেজ ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের পর থেকে যুগে যুগে মিথ্যা নুবুওয়্যাতের দাবীদার আবির্ভাব ঘটেছে মুসলমানগন তরবারী দিয়ে ফায়সালা করেছেন। ১৭৫৭ সালে উপমহাদেশের স্বাধীনতা ইংরেজদেও দ্বারা খর্ব হয়। তার পর থেকে ইংরেজরা এদেশে তাদের অবৈধ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ইসলাম ও মুসলমানের বিপক্ষে চক্রান্ত করে আসে। ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলোকে তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় ইংরেজরা তাদের পা চাটা গোলাম কাদিয়ানের কাজ্জাব মীর্জা গোলাম শয়তান কাদিয়নীকে চক্রান্তে নামায়। ১৯০৮ সালে মীর্জা গোলাম শয়তান কাদিয়নী গজব প্রাপ্ত হয়ে কুখ্যাত জাহান্নামের কুখ্যাত কুকুরে পরিনত হয়। তার অনুসারীরা বর্তমানে কাদিয়ানী সম্প্রদায়। নি:সন্দেহে তারা কাফের এবং অমুসলিম। অতএব তাদেরকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
তাহরিকে খাতমে নুবুওয়্যাতের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট পীর সাহেব জৌনপুরী হুজুরের ৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ১. কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। ২. তাদের সকল প্রকারের ব্যবসায়ী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। কেননা তাদের উপার্জিত অর্থ ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যয় করা হয়ে থাকে। ৩. তাদের সকল প্রকার প্রকাশনা নিষিদ্ধ করতে হবে।