রহমত ডেস্ক 31 March, 2022 10:54 PM
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা বিচার সেবার মানোন্নয়নে বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তথা বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য হতে মুক্তি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান হিসেবে দেখতে চাইলে সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই। সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের হলেও, বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। সে কারণেই নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর কালবিলম্ব না করে বঙ্গবন্ধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বাতিঘর স্বরূপ বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ কোর্টকে তিনি সাংবিধানিকভাবে বিশেষ মর্যাদার আসনে স্থান দেন।
আজ (৩১ মার্চ) বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টে এনেক্স ভবনে আধুনিক ও নান্দনিক ‘বিজয়-৭১’ ভবন উদ্বোধন পলক্ষে সুপ্রিমকোর্টের জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। স্বাগত বক্তৃতা করেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার। উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীবৃন্দ। বর্তমান সরকার সুপ্রিমকোর্টকে আরো আধুনিক ও নান্দনিক করতে ১২তলা এই ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নেয়। সুপ্রিমকোর্টের এনেক্স এক্সটেনশন ভবন ‘বিজয়-৭১’ নির্মাণে সরকার বরাদ্দ দেয় ১৫৮ কোটি চার লাখ ২২ হাজার টাকা। এনেক্স ভবনের পশ্চিম পাশে ১৮ হাজার ১৩৪ বর্গমিটার জায়গায় নির্মিত হলো এ ভবন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে অনন্য বাতিঘর প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সুহৃদ আন্তরিকতায় এবং সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, প্রশাসন ও আইনজীবীগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিকশিত হয়ে আজ শক্তিশালী ও সুমহান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে ন্যায়বিচারের বাণী। অবদান রাখছে সামাজিক শান্তি, সমতা ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সাফল্য নির্ভর করে মূলত সেই প্রতিষ্ঠানের সততা, কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা এবং সেবার মানের ওপর। এই বাস্তবতার নিরিখেই সরকার বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টসহ গোটা বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা এবং বিচার সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ও করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠার একেবারে গোড়ার দিকে ফিরলে দেখতে পাই, ১৯৭২ সালে হাইকোর্ট বিভাগে মাত্র ১০ জন এবং আপিল বিভাগে ৩ জন বিচারক নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট যাত্রা শুরু করেছিল। আজ গর্বের সাথে বলতে হয় ১৯৭২ সালের ১৩ জন বিচারকের বিপরীতে বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের ৯৪ জন বিচারক নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, ২০০১ সালে এনেক্স ভবন উদ্বোধন করার পূর্বে সুপ্রিমকোর্টে মাত্র ২৭টি এজলাস কক্ষের ব্যবস্থা ছিল এবং তা ছিল সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠন করলে তাঁর পিতার হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠানে তিনি ৩৫টি এজলাসের সংস্থান সম্বলিত এনেক্স ভবন নির্মাণ করে দেন এবং ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে তা স্বয়ং তিনিই উদ্বোধন করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আজ ‘বিজয়-৭১’ নামে যে ভবন উদ্বোধন করা হলো সেখানেও অতিরিক্ত ৩২টি এজলাসের ব্যবস্থাসহ বিচারপতিগণের জন্য ৫৬টি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত চেম্বারের সংস্থান রাখাসহ বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিগণের আবাসন সমস্যা নিরসনের লক্ষে তাঁর সরকার ২০১৭ সালে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার কাইরাইলে ২০তলা বিশিষ্ট বিচারপতি ভবন নির্মাণ করে দেয়, যেখানে রয়েছে ৩৫০০ বর্গফুটের ৭৬টি ফ্লাট। এ ভবন নির্মাণের ফলে বিচারপতিগণের দীর্ঘ দিনের আবাসন সমস্যারও নিরসন হয়। আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট প্রবর্তণও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তার ফসল। করোনার মহামারির সেই মহাআতঙ্কের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ ও দিক নির্দেশনা, সুপ্রিমকোর্টের নিরলস পরিশ্রম, আইনজীবীগণের সহযোগিতা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা খুবই তাড়াতাড়ি ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করতে পেরেছিলাম।