রহমত ডেস্ক 31 March, 2022 11:18 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রয়োজনে তিনি তাঁর বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। আমি কক্সবাজারবাসী এবং সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রয়োজনে আমি আমার বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করব। তাঁরা সব বাধা অতিক্রম করে দেশবাসীর জন্য একটি সুন্দর ও উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করে যাবেন। বাংলাদেশের জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করেন না। আমি শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) কক্সবাজারে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ-ইউএনজিএ’র বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের আনুষ্ঠানিক উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘উন্নয়নের নতুন জোয়ার; বদলে যাও কক্সবাজার’ কর্মসূচিতে গণভবন থেকে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কক্সবাজার থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও যুব প্রতিমন্ত্রী মো. এবং ক্রীড়া মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল নিজ নিজ খাতের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন কক্সবাজার প্রান্তে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। অনুষ্ঠানে ‘জোরছে চলো বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি গান "ও জোনাকি, কি সুখে ঐ ডানা দুটি মিলেছো" বাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। কক্সবাজারে মন্ত্রীবর্গ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তার সবচেয়ে কাছের ও প্রিয়জন। কারণ তিনি ১৯৮১ সালে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর বৃষ্টি ও ঝড় উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষকে স্বাগত জানাতে দেখেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ আমার সবচেয়ে কাছের এবং তারাই আমার পরিবার। আমি আপনাদের মধ্যে আমার হারিয়ে যাওয়া বাবা, মা ও ভাইয়ের ভালোবাসা ও স্নেহ খুঁজে পেয়েছি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করেন না। আমি শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করব। সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার ফলে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াবে। আমার ওপর আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাস না থাকলে এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হতো না।জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস হচ্ছে তাদের কল্যাণে কাজ করার জন্য সরকারের চালিকাশক্তি।বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের দিক থেকে এমন অবস্থানে পৌঁছেছে যে, এ দেশকে কেউ পিছনে ঠেলে দিতে পারবে না। এখন, আমরা একটি উন্নয়নশীল জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি এবং তা বজায় রেখে আমাদেরকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন শরণার্থীদের জন্য গৃহীত আবাসন প্রকল্পের কিছু সুবিধাভোগীর সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। তারা উন্নয়নশীল দেশ গড়ার স্থপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। রবার্ট ফ্রস্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার বাবা বাংলাদেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তার দুর্বলতা কী, উত্তরে জাতির পিতা বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। বঙ্গবন্ধু যাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সেই দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। ব্যক্তিগতভাবে তার পাওয়ার কিছু নেই বরং দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানোই তার জন্য সবচেয়ে বেশী মূল্যবান। সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, এখন তার অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়া। বঙ্গবন্ধু তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের কল্যাণে। তাকে তার জীবনে অনেক বাধা এবং আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জনগণের উন্নতির জন্য কিছু করার কাজে তাকে কিছু কিছুই বাধা দিতে পারে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর, মেরিন ড্রাইভ, সড়ক ও রেল অবকাঠামো নির্মাণ। ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও একটি ফুটবল একাডেমি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এবং প্রতিটি এলাকাকে উন্নয়নের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর বাংলাদেশের সেরা বিমানবন্দর এবং পূর্ব ও পশ্চিমের রিফিলিং হাব হিসেবে পরিণত হবে।তার সরকার শুধু কক্সবাজারের উন্নয়নে কাজ করছে না, বরং সারাদেশে উন্নয়ন করা হচ্ছে। সরকার বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা জিতে বিশাল সমুদ্র এলাকা ও সামুদ্রিক সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। জাতির পিতা সামুদ্রিক সম্পদের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫-পরবর্তী সরকার এ লক্ষ্যে কিছুই করেনি। তার সরকার বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য বিপুল সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যস্ততার কারণে কক্সবাজারে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন, তবে তিনি তার সুবিধাজনক সময়ে সেখানে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শীতকালে বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকতে পারিবারিক সফরের কথা স্মরণ করেন, বেশিরভাগ সময় জেলে কাটালেও বঙ্গবন্ধু যখনই সময় পেতেন তখন সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যেতেন।