রহমত ডেস্ক 15 February, 2022 07:46 PM
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আফরোজা সুলতানা ইতি (১৮) হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তার বাবা স্কুলশিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।আজ (১৫ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার দুপুরে নীলফামারী প্রেসক্লাবে নিহত ইতির পরিবারের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইতির বাবা। ইতির দাদা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ ও চাচা আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
ইতির বাবা অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে আমার বড় মেয়ে ফারজানা সিরাজের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের জাকারিয়া শাহের ছেলে শহিদ শাহর। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। পারিবারিক কলহের কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। গেল বছরের ১৪ অক্টোবর আমার ছোট মেয়ে আফরোজা সুলতানা ইতিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় শহিদ। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাইনি। এ নিয়ে নিয়ে থানায় অভিযোগও দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে শহিদ। পরে তাদের বাড়িতে মরদেহ দাফনের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে আমরা পুলিশকে জানাই। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে নির্যাতন করে মেরে ফেলার সত্যতা পায় পুলিশ। এ নিয়ে আমি থানায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দিলেও কিশোরগঞ্জ থানার সদ্য বদলি হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আউয়াল আমার অভিযোগ পরিবর্তন করে মামলার এজাহারে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন। ফলে আসামিদের পক্ষ নিয়ে তাদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন ওসি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। জড়িতরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, এ জন্য সরকারের কাছে আকুতি করছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, অপহরণের ৩ মাস পর নীলফামারীর কিশোরঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের পানিয়ালপুকুর গ্রাম থেকে গোপনে দাফনের সময় এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি শহিদ শাহসহ তিনজনকে গাজীপুরের কালীয়াকৈর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।আটকের পর র্যাব জানিয়েছিল, কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের মুসা গ্রামের শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের বড় মেয়ে স্মৃতির সঙ্গে শহিদ শাহর বিয়ে হয়। তারা জয়পুরহাট জেলা শহরে থাকতেন। তাদের ৭ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। পারিবারিক কলহে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে স্মৃতি সন্তানসহ বাবার বাড়ি ফিরে আসে। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি শহিদ শাহ তার সাবেক শ্যালিকা ইতিকে অপহরণ করেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষে থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ ওই সময় অভিযান চালিয়ে ইতিকে উদ্ধার ও অপহরণকারী শহিদকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
৬ মাস পর শহিদ জামিন পান। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর শহিদ পুনরায় শ্যালিকাকে অপহরণ করেন। পরে ইতির বাবা কিশোরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও উদ্ধার করতে পারেনি। এরপর শহিদ ইতিকে নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন। একপর্যায়ে ইতি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন শহিদ। ১৪ জানুয়ারি নির্যাতনের এক পর্যায়ে শহীদ অন্তঃসত্ত্বা ইতির পেটে লাথি মারেন। এতে রক্তক্ষরণ শুরু তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যান শহিদ। কিন্তু পথেই মারা যান ইতি। পরে শহিদ মরদেহ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে গোপনে দাফনের চেষ্টা করলে পুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ইতির বাবা বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।