| |
               

মূল পাতা ইসলাম শিশুদের জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরী


শিশুদের জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরী


মাওলানা রাদ তানবীর     22 January, 2022     03:52 PM    


সন্তান আদর্শবান হউক, সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জল হউক প্রতিটি পিতা-মাতাই এই কামনা করে। প্রত্যেক মা-বাবাই চায় তাদের সন্তান হোক মানবতার কাণ্ডারী, উন্নত চরিত্রের অধিকারী। মা-বাবারা চায় তাদের সন্তান হোক আলোকিত, হোক আলোর মিনার, তারা নিজেরা হোক আদর্শবান এবং অন্যদের আদর্শেও পবিত্র সুবাস যুক্ত হোক তাদের সন্তানদের কারণে। কিন্তু অসতর্কতায় পিতা-মাতা নিজেরাই বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেই চাওয়া বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। নিজেদের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও অসাধু সিদ্ধান্তের কারণে অধরাই থেকে যায় তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। সন্তানের ব্যাপারে পিতা-মাতার এই আসাধু ও দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তগুলোর একটি হলো অনৈসলামী ও অর্থহীন নামনির্বাচন।

শিশুদের নাম তার ভবিষ্যত জীবনের কাজকর্মে বড় প্রভাব ফেলে। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। মনে করুন , একটি ছেলের নাম "পল্টু" আর একটি ছেলের নাম "আব্দুল্লাহ"। দেখবেন এদের চরিত্র ও আচার-ব্যবহার অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন হবে। ধরে নেই তাদের কেউ'ই পড়া-লেখা করেনি। এরপরও আব্দুল্লাহ ছেলেটির ব্যবহার ও চরিত্র এতটা উগ্র হবেনা যতটা হবে পল্টু নামের ছেলেটির। অথবা ধরে নেই, পল্টু উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছে। আর আব্দুল্লাহ মোটামুটি ক্লাসসমূহ পড়েছে । এরপর উভয়ের'ই চাকুরি হল কোনো প্রতিষ্ঠানে। তখন দেখা যাবে পল্টু সবসময় বিভিন্নভাবে কাজে ফাঁকি দেয়, বিভিন্ন দুর্নীতিতে লিপ্ত, অনেক অপরাধ সংঘটিত হয় তার দ্বারা কর্মক্ষেত্রে। প্রতিষ্ঠানের নীতি লঙ্ঘনে লিপ্ত থাকা হয় তার অভ্যাস। এসবে সে বেশ সিদ্ধহস্তও আর আব্দুল্লাহ কাজ সমাধা করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে! অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা তার একটুও ভালো লাগে না। সবসময় প্রতিষ্ঠানের নীতিরক্ষায় থাকে সচেতন ও মনোযোগী। কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি হক পালন পূরণ করে দিল থেকে আল্লাহ তায়ালাকে সামনে রেখে।

মোটকথা, একজন পল্টু থেকে সাধারণত সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রকাশ পাবে অন্যায়, অশ্লীলতা, জুলুম, দুর্নীতি, ইত্যাদি। আর একজন আব্দুল্লাহ বা আব্দুর রহমান থেকে সমাজ পাবে সুস্থ নীতিবোধ, উৎকৃষ্ট স্বভাবগুণ, মানবিক আচার-ব্যবহার ও ন্যায়পরায়নতা। একজন নান্টুর দ্বারা একটি সমাজ ও পরিবারে আসতে পারে অশৃঙ্খলা ও অশান্তি। ফলে সমাজ পৌঁছতে পারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর একজন মুহাম্মাদ বা মুহাইমিন দ্বারা সমাজ ও পরিবারে ফিরে আসতে পারে শৃঙ্খলা ও শান্তি। এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অন্যায়ের ঘটনাগুলো ঘাঁটলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বিষয়টি।

তাছাড়া একজন রুচিশীল ব্যক্তি কিছুতেই গ্রহণ করবে না বল্টু , নান্টু , জন্টু , রনি ইত্যাদি নামসমূহ। পক্ষান্তরে মুয়াজ , মিকদাদ , আব্দুল্লাহ , আব্দুর রহমান , আহমদ, উমর, মুহাম্মদ, আদনান , আম্মার , সালমান ইত্যাদি নামসমূহ সুস্থ রুচিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের নিকট খুব সহজেই অগ্রাধিকার পাবে। শর্ত এই একটাই। সুস্থ রুচি থাকা।
-
আমাদের অনেক মুসলিম মা-বাবা সন্তানের নাম নির্ধারণে অনেকটা আধুনিকতার শিকার। কিছু কিছু নাম তো একদম হাস্যকর। একটি ঘটনার উল্লেখ করি। প্রায় ১০ বছর আগের ঘটনা। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার চারিতলা নামক গ্রামে আমার ছোট ফুফুর বাড়ী। সেখানে বেড়াতে গিয়ে একটি ছেলে পেলাম "জিপটন" নামে। নামটা শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন। একটি মুসলিম ছেলের নাম এমন হতে পারে! মা-বাবা সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে এতটা উদাসীন হতে পারে! অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
من حق الولد على الوالد ثلاثة: يحسن اسمه و يعلمه الكتابة و يزوجه إذا بلغ
অনুবাদ: পিতার উপর সন্তানের তিনটি অধিকার রয়েছে। তার সুন্দর নাম রাখবে এবং লেখাপড়া শিখাবে আর প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিয়ে করাবে। (আল হাদীস)
سموا أولادكم أسماء الأنبياء و أحسن الأسماء عبد الله و عبد الرحمن 
অনুবাদ: তোমরা তোমাদের ছেলেদের নাম রাখ নবীদের নামে। আর সবচেয়ে উত্তম নাম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। (আল হাদীস)
-
তো বন্ধুরা! আমরা অনেকেই হয়ত বিয়ে করে সন্তানের বাবা-মা হয়ে গিয়েছি বা অনেকের বিয়ের কার্য সদ্য সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। তো রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সন্তান দিলে তাদের জন্য ইসলামী নাম নির্বাচন করবো। নিজে ভালো নাম গ্রহণ করতে সক্ষম হলে তো ভালোই। নিজে না পারলে আলেমদের দ্বারা এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন!!