| |
               

মূল পাতা ইসলাম আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা এবং আদেশ কি এক?


আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা এবং আদেশ কি এক?


মাওলানা রাদ তানবীর     13 January, 2022     10:31 AM    


আল্লাহ তায়ালার নিকট একমাত্র ধর্ম হলো ইসলাম। একমাত্র ইসলামই আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম। এই ইসলামই শান্তি ও শৃঙ্খলার ধর্ম। বর্তমানে ইসলাম ছাড়া যত ধর্ম আছে সবগুলোই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, 
ان الدين عند الله الاسلام (سورة آل عمران: ١٩)
অনুবাদ: ইসলামই একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিকট (গ্রহণযোগ্য) ধর্ম। (সূরা আলে ইমরান:১৯)

ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারী হলে কিছুতেই নাজাত পাওয়া যাবে না পরকালে। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি ও জাহান্নাম। পরকালে তাদের জন্য নেই কিঞ্চিত পরিমাণ সুখশান্তি। পরকালীন সুখশান্তি শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যই। যে মুসলিমের বুকে বিন্দু পরিমাণ শিরিক থাকবে না সেই শুধু নাজাত পাবে, শুধু সেই জান্নাত পাবে‌। যে মুসলিমের মধ্যে শিরিক নেই, কিন্তু গুনাহ আছে তারাও একসময় নাজাত পাবে, জান্নাত পাবে‌। শিরিকের গুনাহ তিনি কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। শিরিক ছাড়া অন্যান্য গুনাহের কারণে আল্লাহ তায়ালা চাইলে কিছু শাস্তি দিবেন, চাইলে কাউকে পাপ করা সত্ত্বেও ক্ষমার চাদরে টেনে জান্নাতের ফায়সালা করবেন। তিনি রহমান ও রহীম। তাঁর দয়া ও রহমত অপরিসীম। তিনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, 
ان الله لا يغفر ان يشرك به و يغفر ما دون ذلك لمن يشاء (سورة النساء: ٤٨)
অনুবাদ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না, তবে তাহা (শিরিক) ছাড়া অন্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। (সূরা নিসা: ৪৮) 

প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্ষ নিঃসৃত বাণীতে আছে, 
عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه أنه قال: الذي نفسي بيده لو لم تذنبوا لذهب الله بكم و لجاء بقوم يذنبون فيستغفرون الله تعالى فيغفر لهم 
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তোমরা গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে এমন এক জাতিকে নিয়ে আসতেন যারা গুনাহ করে ফেলতো, ফলে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাইতো আর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।

এখন কথা হলো, অনেক অমুসলিম ভাই দাবি করে যে, আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমরা মুসলিম হইনি, হিন্দু হয়েছি, বৌদ্ধ হয়েছি, খ্রিস্টান বা ইহুদি হয়েছি। আল্লাহ আমাদের ধর্ম ও কাজের প্রতি সন্তুষ্ট বলেই আমাদের জন্য তিনি এই ধর্মাবলম্বীদের ঘরে জন্ম দিয়েছেন, আমাদের এই এই ধর্মাবলম্বী বানিয়েছেন, তিনি না চাইলে তো আমরা হিন্দু হতাম না, বৌদ্ধ হতাম না, খ্রিস্টান হতাম না। তেমনিভাবে গুনাহগার ও পাপীদেরও অনেকে একরকম বলে থাকে যে, আল্লাহ চাইছেন বলেই তো আমি চোর হয়েছি, ধর্ষক হয়েছি, ঘুষ নিচ্ছি, গুনাহ করছি, ইত্যাদি। এরকম অনেকেই বলে থাকে। এটা আসলেই একটা ভুল দাবি। এটা আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ ও অপবাদ। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে,
سيقول الذين اشركوا لو شاء الله ما اشركنا و لا آباؤنا ولا حرمنا من شيء كذلك كذب الذين من قبلهم (سورة الأنعام: ١٤٨)
অনুবাদ: যারা শিরক করে তারা অবশ্যই বলে, যদি আল্লাহ তায়ালা চাইতেন তাহলে তো আমরা ও আমদের পূর্বপুরুষরা শিরক করতাম না এবং কোন হালালকে হারাম করতাম না। (আল্লাহ তায়ালা বলেন) তাদের পূর্ববর্তীরাও এভাবেই মিথ্যারোপ করেছে। (সূরা আনআম: ১৪৮)

তাদের এই দাবিটা কিছুতেই সঠিক ও যৌক্তিক হতে পারে না। কারণ এখানে দু'টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় রয়েছে। একটি হলো আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা, আরেকটি হলো আল্লাহ তায়ালার আদেশ। সৃষ্টিজগতে যা কিছু হচ্ছে সবই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় হচ্ছে। ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতেই হচ্ছে, বাট আল্লাহ তায়ালা সবকিছুরই আদেশ করেননি। সবকিছুরই অনুসরণ করতে বলেননি। চুরিটা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতে হয়, বাট চুরি করতে আল্লাহ তায়ালা আদেশ দেননি। নিষেধ করেছেন। ধর্ষণ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতে হয়, কিন্তু তিনি ধর্ষণ করতে নির্দেশ দেননি, বরং নিষেধ করেছেন। খুন, ঘুষ খাওয়া, সুদ দেওয়া-নেওয়া, সব অশ্লীলতা, জুলুম, লুণ্ঠন, ইত্যাদি আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতেই হয়, বাট এগুলোর আদেশ তিনি করেননি। হিন্দুর ঘরে জন্ম হওয়াটা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতেই হয়, কিন্তু তিনি হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে, হিন্দু ধর্মমত মেনে নিতে ও শিরিক করতে আদেশ দেননি, বরং নিষেধ করেছেন। 

সব গুনাহের ক্ষেত্রে একই কথা। নেককাজে যেমন আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা আছে তেমনি গুনাহের মধ্যেও তার ইচ্ছা আছে, বাট গুনাহ করার আদেশ নেই, বরং বারণ আছে। আমাদের তো মানতে হবে তার আদেশগুলো, তাঁর ইচ্ছাগুলো নয়। বান্দার উপর অপরিহার্য হলো, মহান মালিকের আদেশ-নিষেধ মানা, তাঁর আদেশ ও নিষেধকে অনুসরণ করা। তাঁর ইচ্ছার সাথে যুক্ত হওয়া মাখলুকের উচিত নয়। সৃষ্টিজগতে যা কিছু সবই তো তাঁর ইচ্ছাতে হয়। তার সব ইচ্ছাকে মেনে চলা কি সম্ভব? সেটা কি যৌক্তিক? কিছুতেই না। বরং তাঁর আদেশ ও নিষেধগুলোই মানতে হবে। সেগুলোর উপরই চলতে হবে। আরও সহজ করে বলা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা ভালো-মন্দ সবকিছু করারই শক্তি দেন, কিন্তু সবকিছু করার নির্দেশ দেন না। আমাদের মানতে হবে তাঁর নির্দেশ ও নিষেধগুলোই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন।

লেখক : আলেম ও মুদাররিস।