মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রহ.-এর স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা মাহফিল সম্পন্ন
রহমত ডেস্ক 30 December, 2021 07:06 PM
নূরানী তা’লিমুল কুরআনেোর্ড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল কুরআন আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রাহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবন-কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা ও স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা মাহফিল সম্পন্ন হয়েছে। আজ (৩০ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা ও প্রকাশনা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্মারকগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন করে লেখক, সাহুত্যিক মাওলানা যাইনুল আবিদীন বলেন, বাবাকে ভালোবাসেন এমন সন্তান অনেক আছে, কিন্তু বাবার মিশনকে ধারণ করেন এমন কম। আল্লামা বেলায়েত রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সন্তানেরা বাবার মিশন ধারণ করেছেন। এসময় তিনি স্মারকগ্রন্থ নিয়ে ৩টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। ১. বছরে একদিন নুরানী মাদ্রাসাগুলোতে স্মারকগ্রন্থকে সামনে রেখে শায়খুল কুরানকে নিয়ে আলোচনা ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। শিশুদের জন্য শায়খুল কুরানের পরিচিতির জন্য আলাদা গ্রন্থ লেখা ব্যবস্থা করা। ২. শায়খুল কুরআন নামে ফাউন্ডেশন তৈরি। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পত্রিকার স্মরণীয় বরণীয় পাতায় লেখা পাঠানো। আন্তর্জাতিক প্রকাশনাগুলোতে পাঠানোর চেষ্টা করা। ৩. সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ক্যাম্প করে নুরানী শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া।
লেখক, সাহিত্যিক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ বলেন, আরব থেকে এতো দূরে বাংলাদেশে কুরান শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শায়খুল কুরান। তিনি যা শুরু করেছিলেন এটা যুগান্তরকারী পদক্ষেপ ছিল। যে সময় তিনি এই কাজ শুরু করেছিলেন তখন বাংলাদেশে এমন কাজ হয়নি, পরবর্তীতে কুরান শিক্ষার সুবিধার্থে অনেক কাজ হয়েছে, তবে তিনি যা করেছেন এটা ছিল মৌলিক। কিংবদন্তীতূল্য এই মনিষীকে কয়েকভাবে প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব বলেন, আল্লামা বেলায়ত রাহমাতুল্লাহি আলাইহি গত শতাব্দির মুজাদ্দিদ ছিলেন। স্মারকের কাযের সাথে সম্পৃক্ততা নিজের জন্য সৌভাগ্যের। এসময় স্মারকের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে সাধুবাদ জানান তিনি।
স্মারকগ্রন্থ নিয়ে নুরানী বোর্ডের প্রশিক্ষক মাওলানা আবু বকর বলেন, আল্লামা ক্বারী বেলায়েত হুসাইন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বেঁচে নেই তবে তার আদর্শ এখনো রয়ে গেছে। এখানে এসে আলোচনা শুনে চলে যাওয়া মানে অনুষ্ঠান সার্থক নয়, বরং তার আদর্শ বাস্তবায়ন করাই অনুষ্ঠানের স্বার্থকতা। দেশ,গ্রামে নুরানীর শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। কাজের মাধ্যমে আমরা দেখিয়ে দিব হযরতের হাজারো শাগরেদ তৈরি হয়েছে সারাদেশে।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন আহমদ গহরপুরী বলেন, আমরা নিজে এই স্মারক গ্রন্থ পড়বো, অন্যদের পড়তে দিব, প্রজন্মের কাছে এই স্মারক গ্রন্থ পৌছানোর চেষ্টার মাধ্যমে মাহফিল সার্থক হবে। শিশুদের উপযোগী করে আল্লামা বেলায়েত রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জানানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বেফাকের পক্ষ থেকে সিলেবাসে আকাবিরদের জানানোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
সাংবাদিক মাওলানা মাসউদুল কাদির বলেছেন, শাইখুল কুরআন যেই কার্য বিবরণী রেখে গেছেন, এর চর্চা দীর্ঘদিন চলতেই থাকবে। আমাদের যেই আকাবিররা চলে গেছেন তাদেরকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ এই স্মারক গ্রন্থ।সর্বস্তরে আকাবিরদের পরিচিতি ছড়িয়ে দিতে হবে, সামাজিক মাধ্যম, ইউটিউবের মাধ্যমে আজকাল মানুষ এমন কিছু জানছে যা জ্ঞানের মত কিছু নয়, তাই বরেণ্য আলেমদের জানার সুযোগ করে দেওয়া উচিত ।
এতে উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মুহাম্মদপুরের মুহতামিম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রির্সাচ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি আবুল হাসান শামসাবাদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ- একাংশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী,মুসা আল হাফিজ, ঢাকা টাইমসের বার্তা সম্পাদক জহির উদ্দীন বাবর, মুফতি শেখ আব্দুর রাজ্জাক আল হুসাইনী, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি মাওলানা মনীরুল ইসলাম, মুফতি ওয়ালি উল্লাহ, মাওলানা শহিদুল্লাহ, মাওলানা হারুনুর রশিদ, মাওলানা আবু মুরতাজা মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) শাইখুল কুরআন আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রহ. এর স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ভোলাসহ নানা প্রান্ত থেকে আনা হয়েছে আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রহ. কে নিয়ে স্মৃতিকথা। তাতে প্রকাশ পেয়েছে আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রহ. সম্পর্কে দেশ বরেণ্য আলেম ওলামার মূল্যায়ন। দীর্ঘ তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম, চেষ্টা সাধনার ফল আজকের এই স্মারকগ্রন্থ। পুরো স্মারকগ্রন্থটি সম্পাদনা ও সমন্বয়ের কাজ করে সবাত্মক সহযোগিতা করেছেন অগ্রজপ্রতীম লেখক বন্ধুবর জহির উদ্দিন বাবর। তিনিই স্মারকগ্রন্থটির প্রধান সম্পাদক। এতে মাঠ পর্যায় থেকে লেখা সংগ্রহের কাজ করেছে- হাসান আল মাহমুদ, কাউসার লাবীব, আমিন আশরাফ, মোস্তফা ওয়াদুদ, আবুল ফাতাহ কাসেমী, ইশতিয়াক সিদ্দিকীসহ আওয়ার ইসলাম টিম।