| |
               

মূল পাতা ফিচার কৃত্রিম হাত আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিলেন ময়মনসিংহের যুবক


কৃত্রিম হাত আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিলেন ময়মনসিংহের যুবক


বিশেষ প্রতিনিধি     29 September, 2021     07:22 PM    


জন্ম থেকে যাদের হাত নেই কিংবা দুর্ঘটনায় যারা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়েছেন কিংবা শারীরিকভাবে অক্ষম এমন মানুষের জন্য ব্যতিক্রমী কৃত্রিম হাত আবিষ্কার করেছেন ময়মনসিংহের সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ। মানবসেবার উদ্দেশেই কম খরচের যান্ত্রিক এ হাত আবিষ্কার করেছেন তিনি।

সাদ্দামের আবিষ্কৃত কৃত্রিম হাতের সাহায্যে মোবাইল ফোন ও রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবহার করা যাবে। ১০ কেজি পর্যন্ত ওজনের জিনিস উত্তোলন করা যাবে। অন্যের সাহায্য ছাড়া চামচের মাধ্যমে খাবার খাওয়া যাবে।  লেখাও যাবে কৃত্রিম এই হাত দিয়ে।

এ ছাড়া যেসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হাত দিয়ে করা সম্ভব নয়, যেমন— বিদ্যুতের সুইচ-ফ্যান মেরামতের কাজ কিংবা যে কোনো ইলেকট্রিক পণ্য মেরামতের কাজ করা যাবে কৃত্রিম হাতের সাহায্যে।

কৃত্রিম এই হাত তৈরির কারণ সম্পর্কে সাদ্দাম  বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, যাদের হাত নেই তাদের জন্য কিছু একটা করা দরকার। সেই মানবিক চিন্তা থেকে আমার এ উদ্যোগ। পঙ্গু-প্যারালাইজড রোগী, যারা হাত নড়াচড়া করতে পারেন না, তাদের জন্য এই ডিভাইস কাজে লাগবে।  এ ছাড়া বাজারে যেসব কৃত্রিম হাত পাওয়া যায়, সেগুলো খুব একটা কাজ করে না। আবার যেসব হাত কাজ করে, সেগুলো কিনতে খরচ বেশি হয়।  তাই আমি কম খরচে এই হাত তৈরি করেছি, যেটি মানবকল্যাণে ব্যবহার হবে।

এই হাতের ব্যবহার সম্পর্কে সাদ্দাম জানান, ছোট্ট একটি ডিভাইসের সাহায্যে সহজেই হাতটি শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে দেওয়া হবে। যার কব্জি নেই, সেই মাপে হাত বানিয়ে কব্জিতে ডিভাইসটি বসিয়ে দেওয়া হবে।  যার কনুই পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন, তার জন্য সেই মাপমতো হাত তৈরি করে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দেওয়া যাবে। ওই ডিভাইসটির সাহায্যে নির্দেশনা নেবে হাত এবং সেই অনুযায়ী কাজ করবে।

তিনি দুই ধরনের হাত আবিষ্কার করেছেন। রোবটিক হাত এবং হাইব্রিড হাত।
রোবটিক হাত তৈরি করতে খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। আর হাইব্রিড হাত তৈরি করতে ৫ হাজার টাকার মতো। নিজের আবিষ্কৃত রোবটিক ও হাইব্রিড হাতের মেধাস্বত্ব পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে সাদ্দাম বলেন, মেধাস্বত্ব পাওয়ার পর আমি হাতগুলো সরবরাহ করব।

এর পাশাপাশি জন্ম থেকে হাত নেই অথবা দুর্ঘটনায় হাত হারিয়ে ফেলেছেন এমন ১০০ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে কৃত্রিম এই হাত দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে সাদ্দামের। অসহায় এই মানুষগুলো হাইব্রিড হাতের সাহায্যে দৈনন্দিন কাজ করতে পারলে তার পরিশ্রম সার্থক হবে বলে জানান সাদ্দাম।

কথা বলে আরও জানা গেছে, সাদ্দাম উদ্দিন আহমদের এটিই প্রথম উদ্ভাবন কিংবা আবিষ্কার নয়; এর আগে তিনি হ্যাকপ্রুপ লেজার টকি উদ্ভাবন করেন। এর মাধ্যমে তার ছাড়াই কথা বলা যাবে দূর-দূরান্তে। তবে এ ক্ষেত্রে লাগবে আলোর সাহায্য। আলো যতদূর পৌঁছাবে, হ্যাকপ্রুপ লেজার টকির সাহায্যে ততদূর তার ছাড়াই নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।

এই ডিভাইস আবিষ্কারের ফলে ঝড়ঝঞ্ঝা, সাইক্লোনকবলিত এলাকার লোকজনের উপকার হবে।  ঝড়-সাইক্লোনের পর ওইসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও টেলিফোন লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে অথবা পাহাড়ি এলাকা যেখানে নেটওয়ার্ক দুর্বল, সেখানে এই ডিভাইসের সাহায্যে সহজে যোগাযোগ করা যাবে। যারা গভীর সাগরে মাছ ধরতে যান, তাদের ক্ষেত্রে যোগাযোগে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তার আবিষ্কারে রয়েছে— রোবট ট্রলি, যেটি রিমোট দিয়ে পরিচালিত হবে। করোনাকালে তিনি এটি আবিষ্কার করেছেন। রিমোটের সাহায্যে পরিচালিত এই ট্রলি এক ঘর থেকে অন্য ঘরে খাবারসহ জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দেবে।

এ ছাড়া পানি ঠান্ডা করার পাত্র আবিষ্কার করেছেন সাদ্দাম।  চার্জারের সাহায্যে মোবাইল থেকে চার্জ দিয়ে পানি ঠান্ডা করা যাবে।

উল্লেখ্য, তরুণ গবেষক সাদ্দাম উদ্দিন আহমদের জন্ম ময়মনসিংহে। পড়ালেখা করেছেন ভারতের বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ব্যাচেলর ডিগ্রি করে দেশে ফিরে কাজ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে সপরিবারে থাকেন ঢাকার ওয়ারীতে। চাকরি করছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

/ডব্লিওএ/জেআর/