মূল পাতা আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধাপরাধ হয়েছে : হিউম্যান রাইট ওয়াচ
রহমতটোয়েন্টিফোর ডেস্ক 28 July, 2021 03:56 PM
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গত মে মাসে গাজা সঙ্ঘাতের সময় ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এবং ফিলিস্তিনি গ্রুপ যে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে তার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ সংঘঠিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান।
এক তদন্তের পর মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর তিনটি বিমান হামলায় যে ৬২ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে তার আশপাশে কোথাও সামরিক লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, গাজায় তারা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলকে লক্ষ্য করেও ৪,৩০০টি রকেট ছুঁড়েছে যা বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচার হামলাতেই পরিণত হয়েছে।
১১ দিনের লড়াইয়ে গাজায় কমপক্ষে ২৬০ জন এবং ইসরাইলে ১৩ জন নিহত হয়।
জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, গাজায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১২৯ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, ২০০ জন উগ্রবাদী ছিল। তবে গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস বলেছে, তাদের ৮০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তদন্তে ইসরায়েলের চালানো তিনটি হামলার উপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ওই হামলাতেই সবচেয়ে বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহতের ঘটনা ঘটে :
১. বেইত হানুন, ১০ মে :
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র চারটি বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে পড়লে সেখানে আটজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে যে ফিলিস্তিনি একটি রকেটের কারণে ওই বিস্ফোরণ হয়েছিল।
২. শাতি শরণার্থী শিবির, ১৫ মে :
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বোমা একটি তিন তলা ভবনে আঘাত হানলে তা ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ওই সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছিল যে ভেতরে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে তারা এরকম কারো উপস্থিতি সম্পর্কে জানতেন না।
৩. গাজা সিটি, ১৬ মে :
প্রতিবেদনে বলা হয়, আল-ওয়াহদা স্ট্রিটের কাছে সিরিজ বিমান হামলায় তিনটি বহুতল ভবন ধ্বংস করা হয়। এতে অন্তত ৪৪ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে যে তারা জঙ্গিদের ব্যবহৃত সৃড়ঙ্গকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল এবং ভবন ধসে পড়ার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'তিনটি ঘটনাস্থলের কোনটির আশেপাশেই স্পষ্টত কোনো সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছিল না' এবং 'যে হামলা নির্দিষ্ট কোনো সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে উদ্দেশ্য করে করা হয় না তা বেআইনি।'
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার জন্য সব ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দরকার হলে হামলার আগেই সতর্কতা জারি করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্রকে উল্লেখ করে বলা হয়, 'তারা বিশেষভাবে সামরিক লক্ষ্যবস্তু লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছিল' এবং 'সংঘাতে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের ক্ষতি কমাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টাও করেছিল তারা।'
তারা আরো বলতে চাইছেন যে সামরিক বাহিনী 'সামরিক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকা বেসামরিক লোকদের আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল।'
মঙ্গলবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ 'শুধু আগে থেকেই নাকচ করে দেয়া অভিযোগগুলোর দিকেই বার বার নজর দিচ্ছে। কিন্তু তারা হামাস এবং অন্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে না যারা বসত-বাড়ি, মসজিদ ও স্কুল রয়েছে এমন এলাকায় গিয়ে হামলা চালাচ্ছে।'
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে ফিলিস্তিনি গ্রুপের সদস্যরা ইসরাইলি শহর ও উপশহরগুলোর দিকে নির্বিচার রকেট নিক্ষেপ করে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে বা নির্বিচারে হামলার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে।
হামাস এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিল যে 'ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে গণহত্যা সত্ত্বেও তারা বেসামরিক নাগরিকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টাও করেছে।' সূত্র : বিবিসি
/জেআর/