সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 25 January, 2021 04:06 PM
পরিবেশ বিপর্যয়, দূষণ আর শোষণে প্রকৃতি আর প্রাকৃতিক ঐতিহ্যগুলো এখন বিপন্নের পথে। দেশে গ্রাম-বাংলার এমনই এক ঐতিহ্য সকালের টাটকা খেজুর রস। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে গাছ, হারিয়ে যাচ্ছে রস। ফলে আগের মতো আর রসও পাওয়া যায় না দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তৈরিও হয় না খেজুরের গুড়।
মাটির নানা গুণাগুণ ও প্রকৃতিগতভাবে সীতাকুণ্ডের খেজুর রসের স্বাদ ও ঐতিহ্য সেই আদিকাল থেকেই। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে খেজুর রসের সেই স্বাদ, মৌ মৌ গন্ধ ও ঐতিহ্য এখানে আর অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। স্বাদ অনেক আগে থেকেই চলে গেছে। এভাবে ঐতিহ্য হারিয়ে এটি আস্তে আস্তে সীতাকুণ্ডবাসীর কাছ থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে কয়েক বছরের মাথায় এটি এলাকাবাসীর কাছে রূপকথার গল্প হিসেবে পরিগণিত হবে বলে মনে করেন অনেকেই।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খেজুর গাছ আবাদি জমির কোনো ক্ষতি করে না। সড়কপথ, পতিত জমি, ক্ষেতের আইল, পুকুর পাড়, বাড়ির আঙ্গিনায় খেজুর গাছ লাগানো যায়।
সীতাকুণ্ড উপজেলার আনাচে-কানাচে পথ-ঘাট, মাঠ প্রান্তর সর্বত্রই সারি সারি প্রচুর খেজুর গাছ চোখে পড়ত। একেবারেই অযত্ন ও অবহেলায় জন্মাত এসব গাছ। শীত এলেই এসব খেজুর গাছকে ঘিরে শুরু হতো নানা আয়োজন। চারদিকে শুরু হতো উৎসবের আমেজ। একেবারে শীতের শুরুতেই শত শত গাছি পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তাদের দা তৈরি, দড়ি ও মাটির কলস কেনাসহ গাছ পরিষ্কারে লেগে যেত। গাছিরা দড়ি কোমরে পেঁচিয়ে ধারালো দা ও মাটির কলস হাতে খেজুর গাছ কাটার উদ্দেশে এখানকার পথ প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো, কাক ডাকা ভোরে ঠিল্লা (কলস) ভর্তি কাঁচা রস কাঁধে নিয়ে বাড়ি বাড়ি দৌড়ানো ছিল পরিচিত দৃশ্য। বাড়ির বউ-ঝিদের সেই রস জ্বাল দেওয়া, পরে এসব রস দিয়ে মুখ রোচক নানা স্বাদের পিঠাপুলি, পায়েস তৈরি, খুব ভোরে ভাপা পিঠা গ্রাম্য ভাষায় ধুঁই পিঠা বানানোর ধূম, হাড় কাঁপানো শীত সকালে উনুনের পাশে বসে বাড়ির সবার খুব আয়েশে রস দিয়ে এসব পিঠা খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলত। আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীসহ নতুন বেয়াই বাড়িতে লাই ভর্তি করে এসব পিঠা আর রস পাঠানোর দৃশ্য দেখে মন ভরে যেত।
সীতাকুণ্ড উপজেলার কোনো পাড়া বা গ্রামে শীতে খেজুর রসের সেই জৌলুস আগের মতো নেই বললেই চলে। খেজুর গাছ রক্ষায় উদ্যোগের অভাবসহ নানা প্রতিকূলতায় এসব এলাকা হতে খেজুর গাছ বিলুপ্তি ঘটছে। গত কয়েক বছর থেকে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে সরকারের তরফ থেকে কাঁচা রস না খাওয়ার প্রচারে সেইটুকুও নিঃশেষ হয়ে গেছে।
-জেড