| |
               

মূল পাতা জাতীয় এনএসআই-ডিজিএফআইয়ের নিয়ন্ত্রণেই হয়েছিল রাতের ভোট : সাবেক সিইসি


এনএসআই-ডিজিএফআইয়ের নিয়ন্ত্রণেই হয়েছিল রাতের ভোট : সাবেক সিইসি


রহমত নিউজ     03 July, 2025     12:07 PM    


একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পরপরই দিনের ভোট রাতে করার বিষয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা হয়। প্রায় সাত বছর পর নির্বাচনের সেই অনিয়মের বিষয়টি তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা নিজে আদালতের কাছে এ বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা ।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার তৎকালীন কর্মকর্তাদের ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনব্যবস্থাটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল বলে আমি পরে বুঝতে পারি। নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে আমি বিশ্বাস করি যে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়ম হয়েছে। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় ভোট গ্রহণ হয়েছে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সরাসরি হস্তক্ষেপে দিনের ভোট রাতে করাসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। তখন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল বলে তিনি পরে বুঝতে পারেন।

জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল সিএমএম মো. জিয়াদুর রহমান।

দিনের ভোট রাতে করার অভিযোগে বিএনপির এক নেতার করা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় গত ২২ জুন গ্রেপ্তার হন নূরুল হুদা। গ্রেপ্তারের পরদিন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। সেই বিতর্কের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এরপর দুই দফায় তাকে আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

নূরুল হুদা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, দলের নেতা-কর্মী, নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন।

জবানবন্দিতে সাবেক সিইসি বলেন, আমি মনে করি, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করে প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করে দিনের ভোট রাতে গ্রহণ করেছে এবং অস্বাভাবিকভাবে কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় শতভাগ ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সাবেক সিইসি ২০১৮ সালের ভোটের অস্বাভাবিক ফলাফলের তথ্যও উল্লেখ করেছেন জবানবন্দিতে। তিনি বলেন, নির্বাচনের পর আমি রেজাল্ট শিট দেখে জানতে পারি যে অনেক কেন্দ্রে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়ে, যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আরও শুনেছি যে অনেক কেন্দ্রে রাতে ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার ভর্তি করা হয়। রাতেই ভোট দেওয়া হয়ে যায়।

এই কাজে কারা জড়িত ছিলেন, সেটাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবে তাদের কর্মী বাহিনী, দায়িত্বে থাকা পুলিশ, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এই কাণ্ড ঘটেছে বলে আমি মনে করি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী। আমি বিশ্বাস করি, আমি বা আমার কমিশনের লোকদের অন্ধকারে রেখে এই অরাজক পরিস্থিতি ও ভোটের অনিয়ম করা হয়েছিল।