রহমত নিউজ 22 December, 2024 11:07 AM
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আবারও রাজপথের আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। ‘২০২৫ সালের শেষের দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়’-নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছে না দলটি।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। দাবি আদায়ে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সভাসমাবেশের পরিকল্পনা করছে দলটি। উদ্দেশ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ধীরে চলো নীতি’ চাপে রেখে রোডম্যাপ আদায়ের পাশাপাশি নির্বাচনি প্রস্তুতি সেরে নেওয়া।
সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি :
জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী মাস থেকে আস্তে আস্তে মাঠে নামবে দলটি। জানুয়ারির মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না পেলে ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সভাসমাবেশের পরিকল্পনা করছে দলটি।
উদ্দেশ্য, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে নির্বাচনের পথে রাখা। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দ্রুত নির্বাচিত সরকার গঠন করা না গেলে দেশিবিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। এ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে গতকাল সমমনা দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে দলটি। তারা গণমাধ্যমকে বলছে, নির্বাচন নিয়ে তারা সরকারকে সহায়তা করতে চায় এবং সেটা করছেও। এজন্য যৌক্তিক সময় দিচ্ছে। তবে ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ। তা ছাড়া এতদিন নির্বাচনের ওপর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোও আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তারা বলছে, মেয়াদের প্রায় সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও সরকার সুনির্দিষ্টভাবে কী করতে চায়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এটিই দলটির জন্য হতাশার। বিএনপি এ সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না। বিএনপি মনে করে, নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং নির্বাচনমুখী সংস্কারই প্রধানতম সংস্কার হওয়া উচিত।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন মাত্র। তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সেজন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। আশা করি তিনি সংস্কারের সময় ও নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট করে একটি রোডম্যাপ দেবেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি :
দেড় যুগ ধরে টানা ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দীর্ঘ এ সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে সাংগঠনিকভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। এখন দল গোছানোর পাশাপাশি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভোটের মাঠ সাজাচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড। আগামী বছরই নির্বাচন চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে দলটি তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রস্তুতি হিসেবে আসনভিত্তিক প্রার্থী তালিকার খসড়া করা হচ্ছে। এমনকি শরিক দলগুলোর জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ারও প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়, দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করে ত্রয়োদশ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত করছে বিএনপি। আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। নির্বাচনের আগে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাঝেমধ্যে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কেও খোঁজখবর নিচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচনে শতাধিক আসনে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাকে প্রাধান্য দিতে চান তারেক রহমান। এরই মধ্যে বিভিন্ন আসনে তরুণ নেতাদের নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছেন। উপযুক্ত সময়ে তিনি প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ গণমাধ্যমকে হোসেন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষের প্রধান চাওয়া সংসদ নির্বাচন। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকার পরিচালনাকারী দল। বিএনপি গণতান্ত্রিক জনপ্রিয় দল হিসেবে সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।’