| |
               

মূল পাতা আরো পাঠকের কলাম দাওরায়ে হাদীসের মাস্টার্স সমমান নিয়ে কওমী আলেমদের চাওয়া-পাওয়া


দাওরায়ে হাদীসের মাস্টার্স সমমান নিয়ে কওমী আলেমদের চাওয়া-পাওয়া


পাঠকের কলাম     23 September, 2024     07:39 AM    


মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী


আলেমগণ যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবে দাওরায়ে হাদীসের সনদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আলেমগণ বলেছেন, আমরা সরকারী অনুদান চাই না, সরকারের বেতন চাই না, চাকুরী চাই না, শুধু দাওরায়ে হাদীসের সনদের স্বীকৃতি চাই। আর তা চাই কওমীর স্বকীয়তা বজায় রেখে। সুতরাং এখানে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণও চাই না। সেভাবেই দাওরায়ে হাদীসের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে অর্থাৎ কওমী মাদরাসার সিলেবাসের উপরে সরকার হস্তক্ষেপ না করে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি দিয়েছে।

কিন্তু স্বীকৃতি পাওয়ার পর এখন আবার অনেকে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে নতুন দায়-দাবীর কথা তুলছেন। তারা ‍প্রদত্ত স্বীকৃতির সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে যোগ-বিয়োগ করছেন যে, এ সনদ দিয়ে কী সুবিধা পাবো বা না পাবো এবং অনেকে এ সনদ দিয়ে তেমন কিছুই হবে না বলে হতাশাও প্রকাশ করছেন।

এখানে বুঝতে হবে, সরকার কওমী শিক্ষাব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে আল-হাইয়াতুল উলয়ার মাধ্যমে কওমীদের হাতে রেখেই সনদের মান মাস্টার্সের সমমান করে দিয়েছে। আর তা দিয়েছে ইসলামিক স্টাডিস ও এ্যারাবিকের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে সরকার যেহেতু জানে যে, কওমী মাদরাসার ইসলামিক স্ট্যাডিস ও এ্যারাবিক বিষয় পাঠদান সন্তোষজনক, তাই সরকার কওমী সিলেবাসের উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বীকৃতি দিয়েছে। এ সনদের মাধ্যমে কওমী আলেমগণ ইসলামী স্টাডিস ও এ্যারাবিকের পর্যায়েই সরকারী কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, যেমন, সরকারী শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামিয়াতের শিক্ষকতা, সরকারী মসজিদের ইমামতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দারুল আরকাম, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা ইত্যাদিকিছু ক্ষেত্র ও প্রজেক্ট, বিবাহের কাজীর চাকুরী প্রভৃতি। 

এমতাবস্থায় যদি কওমী আলেমগণ দাওরায়ে হাদীসের স্বীকৃতির এ ধরনের সুবিধায় সন্তুষ্ট না হন, বরং ইউনিভার্সিটি ও আলিয়া মাদরাসার সমান সরকারী সুযোগ-সুবিধা ও চাকুরী-ব্যবস্থাদি চান, তাহলে তা কীভাবে সম্ভব হবে? কারণ, সাইন্স, আর্স ও কমার্স নিয়ে যারা মাস্টার ডিগ্রী অর্জন করে যে সরকারী পদের জন্য যোগ্য হন, তাদের মতো সেই পদের যোগ্য হতে হলে তো কওমীদেরও সেরকম সাইন্স, আর্স ও কমার্স নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমান অর্জন করতে হবে। আর তখন বর্তমান কওমী সিলেবাস যথেষ্ট হবে না, বরং এ সিলেবাসকে সেই ধাঁচে সাজাতে হবে এবং সেই লক্ষ্য অনুযায়ী সংস্কার করে সরকারের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে। এমনকি তখন কওমী মাদরাসার নিচের লেবেল থেকে উপরের লেবেল পর্যন্ত সম্পূর্ণ শিক্ষাক্রমকে সরকারী আওতায় আনতে হবে এবং দাওরায়ে হাদীসের স্নাতকোত্তর লেবেলের পরীক্ষা ছাড়াও স্কুল-কলেজে ও আলিয়া মাদরাসার মতো কওমী শিক্ষার বিভিন্ন শ্রেণীর পর্যায়েও তথা নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও সরকারীভাবে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এভাবে তখন কওমীর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস ও শিক্ষা-কারিকুলাম সরকারের নির্দেশনানুযায়ী নতুনভাবে প্রণয়ন করতে হবে। যার মাধ্যমে কওমী সিলেবাসে সরকারের হাত পড়বে। মানে তখন কওমীর স্বকীয়তা বজায় থাকা অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

সুতরাং যারা দাওরায়ে হাদীসের সনদের সরকারী স্বীকৃতির পর সরকারী সুযোগ-সুবিধার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলছেন, তাদের এ বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরী। অন্যথায় “কিছু না দিয়ে সবকিছু চাওয়া” তাদের নিকট অযৌক্তিক অলীক কল্পনা গণ্য হতে পারে।


লেখক: আলেম ও সম্পাদক