| |
               

মূল পাতা জাতীয় অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা নিয়ে কী করছে আইন মন্ত্রণালয়, বিএনপি কী বলছে


অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা নিয়ে কী করছে আইন মন্ত্রণালয়, বিএনপি কী বলছে


রহমত নিউজ ডেস্ক     23 October, 2023     09:50 AM    


শনিবার (২১ অক্টোবর) ঢাকায় আইনজীবীদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৩ সালে যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, সেগুলো বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ দেওয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, পুরনো মামলাগুলোর দ্রুত বিচারে সক্রিয় হতে সরকারের আইন কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।আমরা বিচার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে আমি আমার আইন কর্মকর্তাদের বলেছি, যাতে তারা আইন অনুযায়ী এগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তিতে আরও উদ্যোগী হয়। যাতে করে বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়। আমরা বিএনপি বা কোন দল হিসেবে দেখছি না।

তবে, মামলা দ্রুত বিচারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করে রবিবার (২২ অক্টোবর) ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রী বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার সরাসরি ফরমায়েশ করে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা আদালত ব্যবহার করছে।

মির্জা ফখরুলের অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী বিচার কার্যক্রমে কোন হস্তক্ষেপ করেননি বরং ভুক্তভোগী হিসেবে বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে দুইশোর বেশি মামলা নিয়ে ইতোমধ্যেই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষকে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

সরকারের অভিযোগ, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের মামলার বিচার ও ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীরা ওই সময় ‘যানবাহন ও বিভিন্ন ধরণের স্থাপনায় আগুন দিয়েছিলো’। তবে বিএনপি বরাবরই সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এসব ঘটনার জন্য উল্টো সরকারকেই দায়ী করে আসছে।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, এখন নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় বিচার বিভাগ বিরোধীদের দমনে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে বলেই তারা আশঙ্কা করছেন।

প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন?
ঢাকায় আইনজীবীদের ওই সমাবেশে আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৩ সালে যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে– সেগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। যেসব জেলায় আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। কেউ অন্যায় করবে আর বিচার হবে না, সেটা হতে পারে না। অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত, সেই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। এটাই আমার অনুরোধ এবং দাবি। বিএনপি আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২০১৪ সালে আগুন সন্ত্রাস করে বিএনপি বহু মানুষকে হত্যা করেছে। বাস, ট্রাক আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। যারাই এসব করেছে যেসব তাদের বিচার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা বরাবরই ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যানবাহনসহ নানা স্থাপনায় যেসব আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছিলো, সেজন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাদের দায়ী করে আসছে। বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের অনেককে নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়েছে, যার অনেকগুলোতেই প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত ছিলেন। তবে, বিএনপি ও তাদের জোটের সদস্য দলগুলোর নেতারা বরাবরই এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।

বিএনপি যা বলছে
সরকারের পক্ষ থেকে 'অগ্নিসন্ত্রাসের' অভিযোগ বিএনপি সব সময় প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান পাল্টা সরকারের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, সরকার বিভিন্ন সময় এ ধরণের (অগ্নিসন্ত্রাসের) ঘটনাগুলো ঘটিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করে আসছে।

রবিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্রের প্রধান মামলা মোকাদ্দমা বা আদালতের বিষয়ে এ ধরণের মন্তব্য করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার সরাসরি ফরমায়েশ করে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করছে। তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে এবং দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গায়েবি মামলায় আসামি করার পর, এখন তাদের সাজা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।১৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে তার দলের ১২ হাজার ৩৭০ জনের বিরুদ্ধে মোট ৪৭টি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় সাড়ে চারশোর মতো নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আমাদের কয়েকজন নেতাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তারা (সরকার) আদালতকে ব্যবহার করে এসব করছে।

বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকাতেই দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৮ হাজার মামলা আছে, যেগুলোর অনেকগুলোই ২০১৩-১৫ সময়কালের ঘটনার জের ধরে করা। তবে সম্প্রতি এসব মামলার কার্যক্রমে গতি বেড়েছে এবং ৯০ থেকে ৯৫ জন কর্মীর সাজাও হয়েছে কয়েকটি মামলায়। বিএনপির মামলাগুলো নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের হিসেবে দেশজুড়ে গত অগাস্টের শেষ পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজারে মতো এবং এসব মামলায় আসামির সংখ্যা আনুমানিক ৪০ লাখ নেতাকর্মী। ঢাকায় এরই মধ্যে বেশ কিছু নেতাকর্মীর মামলার রায়ে কারাদণ্ড হয়েছে এবং আরও ৩০টির মতো মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে আছে। এর বাইরে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে দেড়শরও মতো মামলা। বিএনপি মহাসচিব নিজেই বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, হাবিব উন নবী সোহেলসহ দলের প্রায় সব নেতার নামেই অসংখ্য মামলা আছে। এসব মামলার বেশ কয়েকটি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সময়কালে দায়ের করা হয়েছিলো।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, তার বিরুদ্ধেও ২৯টি মামলা দায়ের হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে এতো মামলা যে এগুলোর তালিকা করাও অসম্ভব। এখন প্রধানমন্ত্রী এক ধরণের ডিকটেট করলেন। আসলে সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে দমন পীড়নে বিচার বিভাগকে চাপ দিচ্ছেন তিনি। ওনার চাপে বিচার বিভাগ আরও আগ্রাসী হয়ে যাবে এবং দ্রুত রায় দিতে চাপ অনুভব করবে।

মামলা নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় যা করছে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যেই আইন কর্মকর্তাদের আগুন সন্ত্রাসের মামলাগুলোর যাতে দ্রুত বিচার হয় সেজন্য সক্রিয় হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কথার মানে হলো সবার মামলা যেন দ্রুত শেষ হয়। ২০১৩ ও ১৪ সালে কী ঘটেছিলো সবাই দেখেছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কীভাবে হামলা হয়েছিলো সবার জানা। কিন্তু এগুলোর এতদিনেও নিষ্পত্তি হয়নি। তাই এসব মামলার ত্বরিত বিচার ভুক্তভোগী হিসেবে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।বিচার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করার ইতিহাস বিএনপির আছে। আওয়ামী লীগের নেই। যে অপরাধ হয়েছে তার বিচার চাওয়ার অধিকার সবার আছে। আইন কর্মকর্তাদেরও আমি সেই নির্দেশনাই দিয়েছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এসব মামলা ফাস্ট ট্র্যাকে নেয়া বা দ্রুত বিচারের আওতায় আনার কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে নাই, সে ধরণের চিন্তা আমাদের নেই। আমরা চাই স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় দ্রুত অপরাধীদের বিচার হোক, সে যেই দলেরই হোন না কেনো।

প্রসঙ্গত, প্রতিটি আদালতে সরকার নিয়োজিত আইন কর্মকর্তারা (পিপি) রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।