| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ইসলামী দল ১৪ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে খেলাফত মজলিস


১৪ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে খেলাফত মজলিস


রহমত নিউজ ডেস্ক     09 September, 2023     02:58 PM    


চলমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ ৮দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঘোষিত আগামী ১৪ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে খেলাফত মজলিসের সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।

লিখিত বক্তব্যে ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, আমরা দেশ ও জাতির এক সংকটময় মুহূর্তে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বর্তমানে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও বিদেশে অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিদেশী ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গণের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের সাংষ্কৃতিক অস্তিত্ব হুমকীর মুখে। বেকার সমস্যা, মাদকাসক্তি, যুব সমাজের মাঝে হতাশা আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। মানুষের জান মাল ও ইজ্জতের ন্যূনতম গ্যারান্টি নেই।

ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের দমন-পীড়নে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থিতিশীল হচ্ছে। হত্যা-নির্যাতন, জেল-জুলুম, হামলা-মামলার মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রিত বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। বহু আলেম-ওলামাকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ঘষামাঝা করলেও পুরনো নিপীড়নমূলক ধারাগুলো এখনো রয়ে গেছে। এখনো এই আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। দেশের চলমান এই আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বিগত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত গণসমাবেশে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে ৮ দফা জাতীয় দাবী পেশ করা হয়।

খেলাফত মজলিসের ৮ দফা দাবী হলো — 

১. দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা : রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে নির্বাচনের তিন মাস পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

২. নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পেশীশক্তি ও অর্থশক্তি মুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

৩. দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমুহকে আস্থায় না নিয়ে নির্বাচন কমিশন বা সরকারের একক সিদ্ধান্তে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।

৪. গ্রেফতারকৃত আলেম উলামা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা: গ্রেফতারকৃত আলেম উলামা ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের উপর দায়েরকৃত সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৫. রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অবাধ সুযোগ নিশ্চিতকরণ : বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে সভা-সমাবেশ করার অবাধ সুযোগ দিতে হবে। বিরোধী দলসমুহের কর্মসূচিতে বাধাদান, হয়রানী, গ্রেফতার, মামলা, হামলা বন্ধ করতে হবে।

৬. পণ্যমূল্য কমিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব ও দুর্নীতি নির্মূল করা : জ্বালানী তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং খাদ্যদ্রব্য-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমিয়ে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতে হবে এবং সাথে সাথে অর্থ পাচার রোধ ও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনা-সহ সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. বেকার সমস্যা সমাধান ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ দান : দেশের বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি-সহ সর্বাত্মক ব্যবস্থা অবলম্বনের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সব ধরনের সরকারি চাকুরিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি বন্ধ ও বিতর্কিত পাঠ্যক্রম বাতিল করা : সাধারণ শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন নীতি বন্ধ করতে হবে এবং সকল বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মীয় বিষয়কে আবশ্যকীয় বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্তমান শিক্ষানীতির আলোকে প্রণীত স্কুল-মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামী চিন্তা-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক যাবতীয় বিষয় বাদ দিতে হবে। সমতা সৃষ্টির নামে সাধারণ পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে মাদ্রাসায় ইসলামী শিক্ষার মান ও পরিবেশ কোন ক্রমেই ক্ষুন্ন হতে দেয়া যাবে না।

এসব দাবী আদায়ের লক্ষ্যে খেলাফত মজলিস গত ফেব্রুয়ারি-২০২৩ থেকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মহানগরী, জেলা, উপজেলায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সভা-সমাবেশের কর্মসূচী পালন করছে। বিগত ১৩ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২৯ জুলাই-২০২৩ পর্যন্ত ঢাকা সহ সারারাদেশে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত আগস্ট-২০২৩ জুড়ে দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি পালিত হয়। সেপ্টেম্বর-২০২৩ ব্যাপী সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে গণ-সমাবেশের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এই দাবিতে সর্বশেষ আগামী ১৪ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

আমরা মনে করি চলমান আর্থ-সামজিক ও রাজনৈতিক সংকট সমাধানে খেলাফত মজলিস ঘোষিত ৮ দফা দাবী বাস্তবায়ন দেশ-জাতির মুক্তির জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহীমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ১৪ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে জাতির বিবেক সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড: মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মোঃ আবদুল জলিল, অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব আবু সালেহীন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব উদ্দিন আহমদ খন্দকার, মুফতি আবদুল হক আমিনী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, মহানগরী উত্তর সভাপতি সাইফ উদ্দিন আহমদ খন্দকার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য হাফেজ জিন্নাত আলী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, ঢাকা মহানগরী উত্তর সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা আজিজুল হক, শ্রমিক মজলিস সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আমির আলী হাওলাদার, ইসলামী যুব মজলিস যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা সোহাইল আহমদ প্রমুখ।