| |
               

মূল পাতা জাতীয় আইন-আদালত বিচারপতিরা শপথ নেয়ার পর রাজনীতি করতে পারেন না : হাইকোর্ট


বিচারপতিরা শপথ নেয়ার পর রাজনীতি করতে পারেন না : হাইকোর্ট


রহমত নিউজ ডেস্ক     17 August, 2023     12:53 PM    


শপথ নেয়ার পর কোনো বিচারপতি রাজনীতি করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (১৬ আগস্ট) নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালতে শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, মাই লর্ড, আমরা শঙ্কিত। তখন আদালত বলেন, কী হয়েছে বলুন?

এসময় আইনজীবী আদালতের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বিচারপতিরা কি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ? তখন হাইকোর্ট বলেন, বিচারপতি হওয়ার আগে আমরা রাজনীতি করতে পারি। কিন্তু শপথ নেয়ার পর বিচারপতিরা রাজনীতি করেন না। রাজনীতি করতে পারেন না।

এ পর্যায়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, বাজারে এসেছে, একজন বিচারপতি বলেছেন, বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ।

তখন হাইকোর্ট বলেন, বাইরে কে কি কোন প্রসঙ্গে বললেন সে বক্তব্য আদালতে বলে আমাদের মিসগাইড করবেন না। আমাদের প্রতি অনাস্থা থাকলে বলুন। তখন আইনজীবী বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে।

আদালত বলেন, আমরা (বিচারপতিরা) যদি প্রহসনের বিচার করি তাহলে আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন। তেমনি আপনারা আদালতের কাছে মিথ্যা সাবমিশন করলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন। অনেক সময় প্রহসনের বিচার হয়। পৃথিবীতে যুগে যুগে প্রহসনের বিচার হয়েছে। সক্রেটিস, গ্যালিলিও, সাদ্দাম হোসেন, রাজা নন্দ কুমার প্রহসনের বিচারের শিকার হয়েছেন। রাজা নন্দ কুমার জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংস ও তার বিচারপতি মিলে রাজা নন্দ কুমারকে প্রহসনের বিচার করে হত্যা করেছিলেন।

এরপর খালেদার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন। এসময় দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করেন।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) শোক দিবসের আলোচনায় ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, এই সংবিধান হলো আমাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর যে রাষ্ট্রদর্শন, রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন- সব দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে এই সংবিধানে।’ ইদানীং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত, এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গণতন্ত্র চাই। বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র কী? শুধু ভোট দেওয়াই একমাত্র গণতন্ত্র না। ভোট দিয়ে রাজা ও মন্ত্রীর পরিবর্তনই গণতন্ত্র না। যে গণতন্ত্র মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা, বেকারের চাকরির সংস্থান ও দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি ঘটাতে না পারে, বঙ্গবন্ধু সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত হবে না, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উন্মেষ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হবে না, শুধু ভোট দিয়েই এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। সংবিধান রক্ষার যে শপথ নিয়েছি, সে অবস্থায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আবহ ও প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সবকিছু মাথায় নিয়ে বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এ দিন শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ওই বক্তব্যের বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রসঙ্গটি তুলে ধরে তিনি আদালতে বলেন, খালেদা জিয়া একজন রাজনীতিবিদ। তিনি তার বিচার পাওয়া নিয়ে আশা ও শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। তখন আদালত বলেন, বিচারপতিরা রাজনীতিবিদ হবেন কেন? বিচারপতিরা হচ্ছেন বিচারক। উৎসাহী কেউ হয়তো এ কথা বলতে পারেন।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ওই বক্তব্য আদালতের নজরে এনেছি। এ কারণে যে বলা হয়েছে, বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় আমরা একজন বিচারপতির বক্তব্য দেখেছি যে তিনি বলেছেন, বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। আমরা যেহেতু একজন রাজনীতিবিদের মামলা নিয়ে সেই বিচারকের আদালতে গিয়েছি। সে কারণে আমরা বলেছি আমরা একজন রাজনীতিবিদের মামলা নিয়ে এসেছি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদের কাছে। আদালত আমাদের শুনেছেন। শুনে বলেছেন বিচারক কখনো রাজনীতিবিদ হতে পারেন না। বিচারক তো বিচার করবেন। শপথ নেওয়ার পর আর রাজনীতিবিদ হতে পারেন না।