| |
               

মূল পাতা ইসলাম যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক : ফযীলত ও করণীয়


যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক : ফযীলত ও করণীয়


ড. মুহাম্মদ হারুন আযিযী নদভী     19 June, 2023     12:59 PM    


সকল প্রশংসা নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য। হাজার হাজার দরূদ ও সালাম বর্ষিত হউক মানবজাতির শিক্ষক ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এবং তাঁর পরিবার পরিজন ও তাঁর ছাহাবীগণের উপরও। আম্মা বা’দ, বন্ধুগণ! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অশেষ মেহেরবানীতে নিজের বান্দাদের জন্য এমন কিছু মৌসুম নির্ধারণ করেছেন। যাতে তারা অনেক অনেক বেশী নেক আমল করার সুযোগ লাভ করে। এসব মৌসুম প্রতি বছর মানুষের জীবনে বারবার আসে আর যায়। এরূপ মৌসুমের মধ্যে অনেক বড় ও মহত্বপূর্ণ একটি মৌসুম হচ্ছে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক। নেক আমলে আগ্রহী একজন বান্দার জন্য এই দশকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দশকের ফযীলত ও মর্যাদা কুরআন ও হাদীসে অনেক বেশী।

১. আল্লাহ তাআলা এই দশ রাতের শপথ করেছেন, যিলহজ্জের প্রথম দশ তারিখের গুরুত্ব ও ফযীলতের জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা এ রাতগুলোর শপথ করেছেন। আল্লাহ  তাআলা এরূপ শপথ করে এগুলোর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। কেননা আল্লাহ তাআলা কোন কিছুর শপথ তখনই করেন যখন তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অধিক বেশী হয়। এরশাদ হয়েছে: “ফজরের শপথ, আরও শপথ দশ রাত্রির”। (আল ফজরঃ ১, ২)  অধিকাংশ তাফসীরকারদের মতে এখানে দশ রাত বলে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। 

২. আল্লাহর যিকিরের জন্য নির্দিষ্ট দিনসমূহ, কুরআন মজীদে এই দশ দিনে বেশী বেশী আল্লাহর যিকির করার আদেশ দিয়েছেনঃ “যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়”। (হজ্জ, ২৮)  অধিকাংশ মুফাসসির বলেন যে, এই আয়াতে “নির্দিষ্ট দিন গুলোতে” বলে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশককে বুঝানো হয়েছে।

৩. পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ দিনগুলো, হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ দিনগুলো হল, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। (বাযযার, ইবনু হিব্বান, সহীহ আল জামেঃ ১১৩৩) 

৪ . এই দিনগুলোর আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় : ইবন আব্বাস (রাজিঃ) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যিলহজ্জ মাসের দশদিনের নেক আমল অপেক্ষা অন্য কোন দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় নয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয় কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “জিহাদও নয়, তবে যে ব্যক্তি নিজের জান-মাল নিয়ে বের হয়েছে আর কিছু নিয়ে ফিরে আসে নি”। (অর্থাৎ শহীদ হয়ে গেছে) তার কথা ভিন্ন। (সহীহ বুখারী, হা/ঃ ৯২৬।) 

৫ . এই দিনগুলো তাসবীহ, তাহলীল ও তাহমীদের দিন : ইবন উমর (রাজিঃ) বলেনঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "অন্যান্য সময়ে কৃত যে কোন নেক কাজের চেয়ে এ দশ দিনে অনুষ্ঠিত নেক কাজ আল্লাহর কাছে অনেক বেশী মর্যাদাসম্পন্ন এবং বেশী প্রিয়। সুতরাং তোমরা এ দিনগুলোতে বেশী করে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ কর"। [আহমাদঃ ২/৭৫, ১৩১]।

৬ . আরাফার দিনের বিশেষ ফযীলত : এই দিনের ফযীলত অনেক বেশী। এই দিনে আল্লাহ তাআলা অগণিত বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং হাজীদের সব পাপ ক্ষমা করে দেন। যারা হজ্জ করতে যান নি তারা রোযা রাখলে আগের পরের দু’বছরের পাপ ক্ষমা করে দেন। (মুসলিম/ ২৬১৪)

৭ . কুরবানীর দিনের ফযীলত : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেনঃ " আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন হল কুরবানীর দিন, তারপর (মীনায়) অবস্থানের দিন"। [আবু দাউদঃ ১৭৬৫] কুরবানীর দিন হল দশ তারিখ, আর অবস্থানের দিন হল,  আইয়ামে তাশরীক তথা যিলহজ্জ মাসের এগার, বার এবং তের। আবুদাউদ শরীফে আরো বর্ণিত আছে, কুরবানীর দিনই হল, বড় হজ্জের দিন। (আবুদাউদঃ ৪২০) 

৮ . আইয়ামে তাশরীকের ফযীলত :  হযরত উকবা ইবনু আমের রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আরাফার দিন, কুরবানীর দিন এবং তাশরীকের দিনসমূহ মুসলিমদের জন্য ঈদের দিন। (আবু দাউদ : ২৪১৯)। হযরত নুবাইশা হুযালী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আইয়ামে তাশরীক (যিলহজ্জের ১১, ১২, ১৩) হল, পানাহার ও আল্লাহর যিকিরের দিন।  (মুসলিম : ১১৪১)  ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যে সকল হাজীরা কুরবানী করতে পারেনি তারা ব্যতীত অন্য কারো জন্য আইয়ামে তাশরীকে রোযা রাখার অনুমতি নেই। (বুখারী : ১৮৯৪) ইবনে হাজার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ দশ দিনের এত ফযীলতের কারণ আমার কাছে যা স্পষ্ট হচ্ছে তা হলোঃ এ দিনগুলোতে যাবতীয় বড় বড় ইবাদতসমূহ একত্রিত হয়ে থাকে, যেমনঃ নামায, রোজা, ছদকা তথা দান খয়রাত এবং হজ্জ। এ দিনগুলো ছাড়া অন্য সময়ে এত ইবাদত একত্রে হয়না। [ফাতহুলবারীঃ ২/৫৩৪]

এই দিনগুলোতে আমাদের করণীয় 
এই দিনগুলোতে আমাদের করণীয় আছে অনেক বিষয়ঃ যথা; গুনাহ তেকে তাওবা করা, নফল নামায বেশী পড়া, ছদকা করা, রোযা রাখা, কুরআন তেলাওয়াত করা, যিকির করা, উমরা ও হজ্জ করা ইত্যাদি। নিম্নে কয়েকটি কাজের কথা উল্লেখ করা হল- 

১. নখ, চুল ও লোম কাটা থেকে বিরত থাকা। 
যারা কুরবানী করবে তারা যেন নখ, চুল ও লোম কাটা থেকে বিরত থাকে। হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখবে সে যেন কুরবানীর পশু জবেহ করার আগ পর্যন্ত নিজের চুল, নখ, লোম ইত্যাদি না কাটে। (মুসলিম, ৫০৯১)  

২. রোযা রাখা, বিশেষ করে আরাফার দিন রোযা রাখা
এই দশ দিনে যে যত পারে বেশী বেশী রোযা রাখবে। বিশেষ করে আরাফার দিন রোযা রাখবে। আবুকাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আরাফার দিনের রোযা আগের পরের দু’বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবে। (মুসলিম, হাঃ/২৬১৪।)  তবে আরাফার দিন রোযা রাখার বিধানটি হল, যারা হজ্জ করতে আসেন নি তাদের জন্য। সুতরাং আরাফায় অবস্থানকৃত হাজীরা এই রোযা পালন করবেন না।  

৩. তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ও যিকির করা। 
এই দিনগুলোতে বেশী বেশী যিকিরের কথা কুরআনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ৯ তারিখ ফজরের নামাযের পর থেকে ১৩ তারিখ আছরের নামায পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাযের পর নারী-পুরুষ সকলের জন্য তাকবীরে তাশরীক বলা জরুরী। তাকবীরে তাশরীকের শব্দাবলী- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। [ইবনু আবিশায়বাঃ ২/২/২, ইরওয়াউল গালীল : ৩/১২৫] 

৪. বেশী বেশী তাসবীহ তাহলীল করা 
এই দিনগুলোতে বেশী বেশী তাসবীহ, তাহলীল ও তাহমীদেও বলবেন। হযরত ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অন্যান্য সময়ে কৃত যে কোন নেক কাজের চেয়ে এ দশ দিনে অনুষ্ঠিত নেক কাজ আল্লাহর কাছে অনেক বেশী মর্যাদাসম্পন্ন এবং বেশী প্রিয়। সুতরাং তোমরা এ দিনগুলোতে বেশী করে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ কর’। [আহমাদঃ ২/৭৫, ১৩১]।

৫. হজ্জ ও উমরা আদায় করা 
যাদের উপর হজ্জ ফরজ তাদেরকে এই দিনগুলোতেই হজ্জ ও উমরা আদায় করতে হয়। হজ্জ ও উমরা আদায় করলে সারা জীবনের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়।  হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে এবং তাতে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি। সে হজ্জ থেকে নবজাত শিশুর ন্যায় নিস্পাপ হয়ে ফিরবে। [সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৪২২]  হযরত আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, আপনার হাত প্রসস্ত করুন, আমি আপনার হাতে বাইয়াত হতে চাই। তিনি হাত প্রসস্ত করলেন। কিন্তু আমি হাত গুঁটে নিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আমর! কি হল? আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কিছু শর্ত দিতে চাই। বললেন, কি শর্ত? আমি বললামঃ পূর্বের পাপসমুহ মুছে যাবার শর্ত। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি জান না, ইসলামে প্রবেশ করলে পূর্বের সমূহ পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। হিজরত করলে পূর্বের সমূহ পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। আর হজ্জ করলে পূর্বের সমূহ পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। [মুসলিম, হাদিস : ১২১] 

৬. ঈদের নামায আদায় করা :
ঈদের দিনে ভোরে ঈদগাহে গিয়ে বা মসজিদে গিয়ে মুসলমানদের সহিত ঈদের নামায আদায় করবে। এটি এই দিনের বড় ইবাদত। তারপর খুতবা শুনবে। 

৭. কুরবানী করা
এই দিনগুলোতে আরেকটি বড় ইবাদত হল, কুরবানী করা। এটি যিলহজ্জ মাসের ১০ম দিন থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত যে কোন একদিন করা যেতে পারে। তবে প্রথম দিন করাই উত্তম। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন’। (সুরা কাউসার : ২)  অন্যত্র বলেন, “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও”। (সুরা হজ্জ, ৩৪)  হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি সাদা-কালো বর্ণের (বড় শিং বিশিষ্ট) নর দুম্বা কুরবানী করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দু’টির গর্দানে পা রেখে বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বললেন। অতঃপর নিজ হাতে যবেহ করলেন। (বুখারী : ৫৫৫৮, মুসলিমঃ ১৯৬৬।)  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় দশ বছর পর্যন্ত কুরবানী করেছেন। (তিরমিযী : ৯৬)  বিদাই হজ্জে তিনি ১০০ টি উট কুরবানী করেছেন। হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর স্থানে এলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট নহর করলেন। (মুসলিম :১/৩৯৪।) 

৮. সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই কুরবানী করতে হবেঃ 
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়। অন্য বর্ণনায় আছে, নিকটবর্তী না হয়। (আহমদ : ২/৩২১, সহীহ তারগীব : ১০৮৭।)  এই হাদীস থেকে বুঝা যায়, সামর্থ্য থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব। এছাড়া সুরা কাউসারের আয়াত এবং মিখনাফ ইবনু সুলাইমের হাদীসটিও এর দলীল। এসকল দলীলের ভিত্তিতে মহিমান্বিত ইমামদের মধ্যে ইমাম আবু হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মালেকরাহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং এক বর্ণনা মতে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব বলেছেন।   

মোট কথা, হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, নেক আমল করার মৌসুম হিসেবে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক হল সকল দিবসসমূহের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। আর যা আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রিয় তা তাঁর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। কোন কোন হাদীসে আহাব্বু (প্রিয়) শব্দটি এসেছে আবার কোন কোন বর্ণনায় আফজালু (মর্যাদাসম্পন্ন) শব্দ এসেছে।’ অতএব এ সময়ে নেক আমল করা বছরের অন্য যে কোন সময়ে নেক আমল করার চেয়ে বেশী মর্যাদা ও ফজীলতের অধিকারী হবে।

৯. যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই তারা কি করবে? 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনস, ‘আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (উদযাপনের) আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তা এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ এক ব্যক্তি আরজ করলেন,‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি ‘মানীহা’ থাকে (অর্থাৎ যা আমাকে শুধু দুধ পানের জন্য দেওয়া হয়েছে) আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না। তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ ২/৩৮৫; সুনানে নাসায়ী ২/১৭৯ ‘মানীহা’ হচ্ছে, যে পশু কাউকে দুধ পান করার জন্য বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়।)  

১০. আইয়ামে তাশরীকে বেশী বেশী যিকির করা 
আইয়ামে তাশরীকে বেশী বেশী যিকির করবে। হযরত উকবা ইবনু আমের রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরাফার দিন, কুরবানীর দিন এবং তাশরীকের দিনসমূহ মুসলিমদের জন্য ঈদের দিন। (আবুদাউদ : ২৪১৯) হযরত নুবাইশা হুযালী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আইয়ামে তাশরীক (যিলহজ্জের ১১, ১২, ১৩) হল, পানাহার ও আল্লাহর যিকিরের দিন।  (মুসলিম : ১১৪১) 

মোটকথা, হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, নেক আমল করার মৌসুম হিসেবে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক হল সকল দিবসসমূহের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। আর যা আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রিয় তা তাঁর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। কোন কোন হাদীসে আহাব্বু (প্রিয়) শব্দটি এসেছে আবার কোন কোন বর্ণনায় আফজালু (মর্যাদাসম্পন্ন) শব্দ এসেছে।’ অতএব এ সময়ে নেক আমল করা বছরের অন্য যে কোন সময়ে নেক আমল করার চেয়ে বেশী মর্যাদা ও ফজীলতের অধিকারী হবে।  অতএব আসুন আমরা এই দিনগুলোকে আল্লাহর ইবাদত ও যিকির আযকার এবং দুআ ও তাসবীহ তাহলীলের মধ্যে কাটাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সদা ভাল কাজের তৌফীক দান করুন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর, চট্টগ্রাম