রহমত নিউজ ডেস্ক 09 December, 2022 09:12 PM
রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠ প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি। আগামী ১৪ ডিসেম্বর এ মাঠ উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে বিএনপিকে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। এতে মাঠের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী- শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী- নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ করার কথা। কিন্তু নিরাপত্তা বিবেচনায় নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এ নিয়ে গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংর্ঘষ হয়। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নিহত হন। পুলিশসহ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও শতাধিক। এরপর বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ও শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) নয়াপল্টন এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তালা লাগানো।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দেড় যুগের বেশি সময় ধরে খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে ছিল গোলাপবাগ মাঠ। পরে স্থানীয়দের দাবিতে মাঠের চারপাশে সীমানাপ্রাচীর, গ্যালারিসহ ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট এবং স্কেটিংয়ের জায়গা করা হয়েছে। মাঠের একপাশে দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগারও তৈরি করা হয়েছে। এখন মাঠটি উদ্বোধনের আগে বিএনপি সমাবেশ করলে সব উন্নয়ন কাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঠটি উদ্বোধনের আগমূহূর্তে সেখানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ মাঠে সমাবেশ করার জন্য ডিএসসিসিতে লিখিত আবেদনও করেনি বিএনপি। এখন বিএনপি সমাবেশ করে মাঠের অবকাঠামো ক্ষতি করলে তার দায় সংগঠনটিকেই নিতে হবে।
জানা যায়, ২০০৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত এ মাঠ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয়। পরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গোলাপবাগ মাঠ সংস্কার কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। প্রায় সাড়ে চার একর আয়তনের মাঠে থাকবে একটি বাণিজ্যিক ভবন, ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট ও স্কেটিংয়ের জায়গা। এছাড়া মাঠের এক কোণে গ্রন্থাগার, ব্যামায়াগার, গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে। যদিও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারের গাফিলতিতে তা করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপির হাজারও নেতাকর্মী মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। তারা সেখানে দলীয় স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের চলাফেরায় মাঠের সবুজ ঘাস উঠে যাচ্ছে। ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবলের কোর্টও নষ্ট হওয়ার পথে। এছাড়া গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগার ও মাঠের সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য যে অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছিল, তার সামনে বসে পড়েছেন বিএনপিকর্মীরা। মাঠের দর্শক গ্যালারিতেও শত শত লোকজন বসে আছেন।
এদিকে, ডিএসসিসি গোলাপবাগ মাঠের মালিক হলেও তাদের কাছে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত সমাবেশের জন্য লিখিত আবেদন করেনি বিএনপি। ফলে ডিএসসিসিও এখনো সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বরাদ দিয়ে সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, গোলাপবাগ মাঠে রাজনৈতিক সমাবেশ আয়োজনে বিএনপির কাছ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন পায়নি। আবেদন পাওয়ার পরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। মাঠের উন্নয়নে প্রকল্পের কাজ চলমান, যা প্রায় সমাপ্তির পথে। শিগগির এ মাঠ উদ্বোধনে তারিখ নির্ধারণ করার পর্যায়ে রয়েছে। সুতরাং প্রকল্পের এ পর্যায়ে গোলাপবাগ খেলার মাঠে রাজনৈতিক সমাবেশ আয়োজন করা হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।