| |
               

মূল পাতা জাতীয় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী


প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     24 April, 2022     08:31 PM    


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্প কলকারখানাসহ প্রতিটি ভবন, যেখানে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। আমাদেরকে জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন এলাকায় যে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেখানেও অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থাটা থাকতে হবে। যারা আমাদের উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ এবং যারা স্থাপত্যবিদ বা প্রকৌশলী যারা ডিজাইন বা সবকিছু করেন তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে সেখানে অগ্নিনির্বাপনের আধুনিক ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করতে হবে পাশাপাশি কখনও আগুন লেগে গেলে সেটা নির্বাপনে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, জলাধারগুলো সংরক্ষন করতে হবে।

আজ (২৪ এপ্রিল) শনিবার সকালে রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ভবনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে ভাচ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। উদ্বোধন হওয়া ৫টি বিভাগের ২৫টি জেলার ৩৯টি উপজেলার ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনও ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.সাজ্জাদ হোসাইন সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে দমকল বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়। এদিন দেশের ৫টি বিভাগের, ২৫টি জেলার, ৩৯টি উপজেলার ৪০টি ফায়ার স্টেশনের কার্যক্রম নতুন করে চালু হলো। সারাদেশে প্রত্যেক উপজেলা ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ফায়ার স্টেশন নির্মাণে তিনটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। চলমান ৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ফায়ার স্টেশনের মোট সংখ্যা হবে ৫৪৪টি।

জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করাটা ঠিক নয়, ২০০৯ সালে বসুন্ধরা শপিং মলের টাওয়ার অংশে লাগা অগ্নিকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় এই পাস্থপথের পুরো এলাকাটাই বিল ছিল, যেখানে বস্ন্ধুরা শপিং মল তৈরি হয়েছে। আজকে সেখানকার জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করে পুরো এলাকার জলাধার বিলীন করে ফেলায় সেদিনের অগ্নিকান্ডে আগুন নেভানোর জন্য হোটেল সোনারগাঁও’র সুইমিং পুল থেকে দমকল কর্মীদের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়েছে। দুর্গত এলাকায় যেন দমকল বাহিনীর গাড়ি পৌঁছতে পারে, সেজন্য রাস্তার প্রশস্ততার পাশাপাশি পানির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি। আমাদের দমকল বাহিনীর এখন ২০ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপন সক্ষমতা রয়েছে এবং ক্রমেই এই সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বহুতল ভবন নির্মাণের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে উদ্ধার পাবার সম্ভাবনা সম্পর্কে সকলকে নিশ্চিত হয়েই নির্মাণ পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন। এজন্য নিয়মিত অগ্নি নির্বাপন মহড়ার আয়োজন এবং বহুতল ভবনে খোলা বারান্দা রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রকল্প গ্রহণকালে বাণিজ্যিক চিন্তা-ভাবনার জন্য মানুষের জীবন যাতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করার এবং মানুষের চলাচলের জন্য ফুটপাত যেন উন্মুক্ত থাকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ছাড়াও অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করা, দেশে-বিদেশে ফায়ার ফাইটারদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সিদ্ধান্তই দিয়েছিলাম আমাদের প্রতি উপজেলায় অন্তত একটি করে ফায়ার ষ্টেশন হতে হবে এবং দেশের জনগণকে আরো সচেতন করে তুলতে হবে। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা যাতে আধুনিক প্রশিক্ষিত হয় এবং আন্তর্জাতিক মানের হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। অত্যাধুনিক ও দক্ষ ফায়ার সার্ভিস সেবা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দেশের অগ্নি ঝুঁঁকি ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলার পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বাহিনী আমাদের প্রয়োজন। বিভিন্ন ঘটনায় অগ্নিনির্বাপন কাজে ফায়ার ফাইটারদের দক্ষতা ও ত্যাগের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী ফায়ার স্টেশন এবং এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে সংরক্ষণেরও নির্দেশ প্রদান করেন।ফায়ার স্টেশনগুলি এবং এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি জনগণের সম্পত্তি। এগুলির যথাযথ যত্ন নিবেন। সর্বোচ্চ পরিমাণ সেবা যাতে আমরা পেতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। পাশাপাশি অগ্নিকান্ডস্থলে দমকল বাহিনীর গাড়ির ওপর হামলার অতীত নজীর দেশে থাকার উল্লেখ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ঘটনায় জড়িতদের আইনানুগ ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।

অগ্নিকাণ্ডে যাতে না ঘটে সে জন্য দেশের জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি যেকোন প্রকার মজুদদারির বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহনেরও নির্দেশ প্রদান করেন। উৎপাদন বৃদ্ধির এবং দেশের সকল জমি আবাদের আওতায় আনার ফের আহবান জানান। তিনি বলেন, যারা হোল্ডিং করবে বা যারা মানুষের এই প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোন রকমের খেলা খেলতে যাবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক উন্নত দেশ সেখানে এখন খাদ্যের জন্য হাহাকার। অনেক ইউরোপিয়ান দেশে ৭,৮,৯ পার্সেন্ট ইনফ্লেশন রেট। তারপরও আমরা কিন্তু আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এই যুদ্ধের কারণে বিদেশ থেকে যে সমস্ত জিনিস আমরা আমদানি করি সেগুলো আনা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে, পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দেশ তাদের উৎপাদিত পন্য আর রপ্তানি করছে না বা তারাও বিপদে আছে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে আমাদের যে মাটি, মানুষ আছে সেটাই ব্যবহার করে আমাদের নিজেদেরকে স্বয়ং সম্পূর্ন হতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। যেখানে যার যতটুকু আছে তা আবাদ করবেন। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেরা উৎপাদন করে নিজেদের ব্যবহার করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন কারো মুখাপেক্ষি হয়ে আমাদের থাকতে না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।