নিজস্ব প্রতিনিধি 09 April, 2022 08:09 PM
কারাবন্দী আলেমদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। শনিবার (০৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিল পূর্ব আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।
আলোচনা সভায় জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, জমিয়ত নেতৃবৃন্দসহ আলেম-উলামা এবং ইসলামী নেতৃবৃন্দকে জেলেবন্দী করে অন্যায় ও জুলুম করা হচ্ছে। যা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলায় আলেমদের ভূমিকা অপরিসীম। আলেমদের অন্যায়ভাবে নিপীড়ন দেশের জনগণ সহ্য করবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে কারাবন্দী সকল ইসলামী নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘দেশে একটা কষ্টকর সময় চলছে। বিশেষ করে আমাদের সাধারণ মানুষের যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চাল-ডাল-তেল-লবন এগুলোর মূল্য এতো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মানুষের জীবন প্রায় দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। শুধু জিনিসপত্রের দামই বেড়েছে তা নয়, সেই সঙ্গে দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম, গ্যাসের দাম, পানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ ‘তিন মাসের মধ্যে তিন বার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এসবের মূলে যেটা রয়েছে তা হচ্ছে সরকারের জনগণের সমস্যা অনুধাবনে ব্যর্থতা।দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে নিয়ে আসার জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক এর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিল পূর্ব আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, মহাসচিব আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী,অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোছাইন কাসেমী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আফজাল হোসাইন রহমানী,শিক্ষা সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি জাবের কাসেমী, অফিস সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গফফার ছয়ঘরী, যুব বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা বশিরুল হাসান খাদিমানী,ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মাহবুবুল আলম, সহঅর্থ সম্পাদক মাওলানা আবুল বাশার,মহানগর সহসভাপতি মাওলানা তাফাজ্জুল হক প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর সহসভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া,মাওলানা গোলাম মাওলা, মাওলানা সলিমুল্লাহ,মাওলানা নূর আলম, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা এখলাছুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ হুজাইফা ইবনে ওমর প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জমিয়তের এর সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন,করোনা পরিস্থিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। কারণ এসব পরিবারের লোকজন মুখ খুলে কাউকে বলতেও পারেননি কিংবা হাত পাততে পারেননি। সেই লকডাউন পরিস্থিতি কাটিয়ে গত কয়েক মাসে সাধারণ জীবনে ফিরে আসার চেষ্টায় থাকা এসব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি।এটা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং সরকার যতদ্রুত দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরবে ততো দ্রুত জাতীয় এ সমস্যার সমাধান হবে। তাতে সরকার ও জনগণ সকলের মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
জমিয়তের সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন,' মানুষ আজ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। অভাব আর দারিদ্র্যের কশাঘাতে আজকের জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্ণ। মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোটক। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্যে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্বাধীন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বলগাছাড়া অবস্থা দরিদ্র ব্যক্তিদের পক্ষে বজ্রাঘাততুল্য। বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। সরকারকে কঠোর হাতে অতিলোভী অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে।
জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন,'আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ একসময় বিভিন্ন কারণে বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি লাভ করেছিল। কিন্তু সেদিনের সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলায় ভরপুর বাংলাদেশ আজ শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। অধিকাংশ মানুষের ভেতরেই অসৎ উপায়ে স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার প্রবণতা বর্তমানে অধিক হারে দেখা যাচ্ছে।কিছু অসাধু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা আজ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আগুণছড়িয়ে দিয়েছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ী যে দলেরই হোকনা কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে, সাথে সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টাঙানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ মানুষের আরও একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে।