| |
               

মূল পাতা ইসলাম মাসায়েল রমযানের প্রয়োজনীয় মাসায়েল


রমযানের প্রয়োজনীয় মাসায়েল


মুফতী শাব্বীর আহমদ      04 April, 2022     01:17 PM    


রোযার বিধান:
প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক বালেগ মুসলিমের উপর রমযানের রোযা ফরয (অবশ্য পালনীয়) । -সূরা বাকারা : ১৮৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭২

রোজার নিয়ত:
হাদীস শরীফে আছে, "সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল" সহিহ বুখারী -১/২। রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ হচ্ছে অন্তরের সংকল্প। যেমন কেউ মনে মনে এই নিয়ত করলো, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখার  নিয়ত করলাম। এতটুকুই যথেষ্ট। মুখে বলাটা জরুরী নয়। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৯৫, বাদায়িউস সানায়ে-২/২২৫)

পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয় বরং প্রতিদিনের রোযার নিয়ত প্রতিদিন করতে হবে। রাতেই নিয়ত করা উত্তম। তবে রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলে পরার আগেই নিয়ত করতে হবে। এরচে বিলম্ব হলে রোযা সহিহ হবে না। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৯৫)

সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব, তবে এত দেরি করা মাকরূহ যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়। এবং বিলম্ব না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার  করা মুস্তাহাব। সাহাবায়ে কেরাম সময় হয়ে যাওয়ার পর তাড়াতাড়ি ইফতার করে নিতেন এবং  সাহরী সময়ের শেষ দিকে খেতেন।( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৭৫৯১)

হাদিছ শরিফে উল্লেখ রয়েছে-  ‘সকল নবিকে সময় হওয়ার পরপরই ইফতার তাড়াতাড়ি করতে এবং সাহরি শেষ সময়ে খেতে আদেশ করা হয়েছে।’ (আলমুজামুল আওসাত ২/৫২৬; মাজমাউজ জাওয়াইদ ৩/৩৬৮)। সাহরি খাওয়া সুন্নাত। এক ঢোক পানি খেলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার শুরু করবে।

যে সকল কারনে রোজা ভেঙ্গে যায়:
 রোজা রেখে রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় কোন কিছু খাওয়া বা পান করা। সহবাস করা, হস্তমৈথুন করা,হায়েজ নেফাস শুরু হওয়া, নাকে ড্রফ-পানি-তেল ইত্যাদি  দিয়ে ভেতরে টেনে নেওয়া, ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করা, কুলি করার সময় কোন ভাবে পানি গলার ভিতরে ঢুকে পড়া, দাঁতে আটকে পড়া খাদ্য রোযার সময় শুরু হওয়ার পর ছোলা পরিমাণ বা তার অধিক গিলে ফেলা, পান মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে পড়লে এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। ঘুমিয়ে পড়া, সূর্যাস্তের পূর্বে সূর্য অস্তমিত হয়েছে ভেবে ইফতার করা,সুবহে সাদিক হওয়ার পর সাহরীর সময় আছে মনে করে পানাহার বা সঙ্গম করা,আগরবাতি ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃত গলার ভেতর প্রবেশ করানো। (সহিহ বুখারি ৬৭০৯; জামে তিরমিযি ৭২৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭৪৫৭; মুসনাদে আহমদ ২/২৪১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৫
সুনানে দারাকুতনি ২/১৯১, মাবসুত, সারাখসি ৩/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬., ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৫, রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৬৮, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২/১৩০।)

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না:
ভুলে পানাহার বা স্ত্রী সঙ্গম করা, নিজ মুখের থুথু কফ গিলে ফেলা, ঠান্ডার জন্য গোসল করা, স্বপ্নদোষ হওয়া, মিসওয়াক করা, অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া, চোখে ওষুধ ব্যবহার করা, মাথায় বা শরীরে তেল লোশন ব্যবহার করা, চোখের একদি ফোটা পানি মুখের ভিতর চলে যাওয়া, ইনজেকশন নেওয়া,  অনিচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া বা  ধুলাবালি অথবা গলায় মশা প্রবেশ করা, আতর সুগন্ধি ব্যবহার করা,কামভাবের কারণে রতিক্রিয়া ছাড়াই বীর্যপাত হওয়া, সুস্থ্য অবস্থায় রোজার নিয়ত করার পর দিনের বেলায় হঠাৎ অজ্ঞান অচেতন  হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩ সুনান তিরমিযি, হাদিস : ৭৮৫, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭৩৮০।মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস ৯৮৪৪-৯৮৪৭; ফাতাওয়া শামি ২/৪০১)

আধুনিক মাসায়েল:
রোযা অবস্থায় করোনার ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। অক্সিজেন নেওয়া যাবে। পুরুষ বা মহিলার পেশাবের রাস্তায় কোন ধরনের ঔষধ বা ক্যাথেটার অথবা  পরীক্ষার জন্য কোন যন্ত্র ইত্যাদি প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। মলদ্বার দিয়ে কোন ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। রোযা অবস্থায় রক্ত দেয়া নেয়া উভয়টাই জায়েজ।

ইনজেকশন: ইনজেকশনের কারণে রোযা ভাঙ্গে না।তবে যেসব ইনজেকশন খাদ্যের কাজ করে, মারাত্মক ওজর ছাড়া তা নিলে রোযা মাকরূহ হবে। 

ইনসুলিন:  রোযাদার ইফতারের আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে।এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।

ইনহেলার: ইনহেলার ব্যবহারের দ্বারা রোজা ভেঙ্গে যাবে।

যাদের জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে:
কিছু মানুষের জন্য সাময়িক ওযরের কারণে রমজানের রোজা না রাখার সুযোগ আছে। তবে অবশ্যই পরে তা কাযা করে নিতে হবে।

মুসাফির: মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে বেশি কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম।(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-৯০৫৭)

অসুস্থ ব্যক্তি: রোযার কারণে যদি রোগ বৃদ্ধি অথবা সুস্থতা বিলম্বিত হয়,অভিজ্ঞ দীনদান ডাক্তারের পরামর্শক্রম।( আদ্দুররুল মুখতার-২/৪২২)

গর্ভবতী: রোজার কারণে যদি গর্ভবতী মহিলা অথবা গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকা  হয়। ( জামে তিরমিজি -১/১৫২)

দুগ্ধ দানকারিণী: দুগ্ধদানকারীনি মা রোজা রাখলে যদি সন্তানের মৃত্যুর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির আশংকা হয়।(রাদ্দুল মুহতার -২/৪২২)

অতিশয় দূর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তি:  বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে সক্ষম না হলে রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে এমন ব্যক্তির রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া দিতে হবে।সুরা বাকারা -১৮৪

কাফফারা: রমজান মাসে রোজা রেখে যদি কেউ বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃতভাবে যেকোনো ভাবে তা ভেঙ্গে ফেলে, তাহলে তাকে কাযার পাশাপাশি কাফফারাও দিতে হবে। অর্থাৎ ধারাবাহিক দুই মাস ৬০ টি রোজা রাখতে হবে। এটাকে কাফফারা বলে।

ফিদিয়া: অতিশয় বার্ধক্য বা জটিল কোনো রোগের কারণে -যেই রোগ পরবর্তীতে বাহ্যত যা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই- এমন ব্যক্তির জন্য রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া দিতে হবে। ফিদিয়া হলো, একজন মিসকিনকে দুবেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ানো বা এর সমমূল্য প্রদান করা।(সূরা বাকারা-১৮৪)। একটি রোযার জন্য একটি ফিদিয়া দিতে হবে। (রাদ্দুল মুখতার -২/৪২৬)। ফিদিয়া দেওয়ার পর যদি ব্যক্তি আবার সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং রোজা রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে রোজাগুলো কাজা করে নিতে হবে এবং আগের দেওয়া ফিদিয়ার জন্য সে সদকার সওয়াব পাবে।( রাদ্দুল মুখতার-২/৪২৭)। পূর্বে ছুটে যাওয়া রোজার কাজা সম্ভব না হলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদিয়া দেওয়ার ওসিয়ত করে যাওয়া জরুরি। (রদ্দুল মুহতার ২/৪২৪-৪২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭)

তারাবিহ: রমজান মাসে ইশার নামাজের পর বিশ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া নারী-পুরুষ সবার জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এবং তারাবিতে অন্তত এক খতম কোরআন মাজিদ পড়া সুন্নত। (রদ্দুল মুহতার -২/৪৮,আল বাহরুর রায়েক-২/৬৯)

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া শায়খ যাকারিয়া কাঁচকুড়া, উত্তরখান, ঢাকা-১২৩০