| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ নবীন আলেমেদের মুফতি তাকী উসমানীর ৪টি অমূল্য নসিহত


নবীন আলেমেদের মুফতি তাকী উসমানীর ৪টি অমূল্য নসিহত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     16 February, 2022     07:20 PM    


সদ্য ফারেগিন নবীন আলেমেদের উদ্দেশ্যে সাবেক বিচারপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানী বলেছেন, আজ আপনাদের সা‌থে দরসদানের সূত্রে আমার শেষ মুলাকাত। এখন বিদায়ের সময়। কিছুকথা পেশ কর‌ছি। এগু‌লোকে মনের ম‌ধ্যে ভালোভা‌বে গেঁ‌থে নিবেন এবং জীবনের সা‌থে শক্তভা‌বে বেঁধে নিবেন। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের দারুল উলূম করাচি মাদরাসায় বুখারি শরিফের আখেরি দারসে তিনি এসব কথা বলেন।

এক. আপনারা প্রথাগত ছাত্রজীব‌ন সম্পন্ন করেছেন। আর যখনই কোনো ভালো কাজ সম্পন্ন করা হয়,‌ তখন দুটি কাজ অবশ্যই করা চাই। প্রথমত, আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করা এবং‌ ওই নেক কা‌জের কদর ও মূল্যায়ন করা। তি‌নি আপনাকে এ মহৎ কর্মের তাওফীক দিয়েছেন। ‌দ্বিতীয়ত, একাজে যে ত্রু‌টি‌-বিচ্যূ‌তি হয়েছে,‌ তজ্জন্যে ই‌স্তিগফার ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা। নবী কারীম সা.-এর নিয়ম ছিল,‌ যখনই তি‌নি নামায থেকে ফারেগ হতেন, তিনবার ‘আসতাগ‌ফিরুল্লাহ’ বলতেন। সুতরাং সমস্ত ইবাদত, নফল, তেলাওয়াত, রোযা, দরস-তাদরীস সবই যেহেতু আল্লাহর তাওফীকেই সম্পন্ন হ‌য়; সে‌হেতু তাঁর শোকর আদায় করা চাই। যে ত্রু‌টি-বিচ্যূ‌তি ও অবহেলা নিজের পক্ষ থে‌কে হয়েছে, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা চাই।

দুই. ‌নিজেকে কখনো ‘ফারেগুত্তাহসীল’ তথা ‘জ্ঞানার্জন থে‌কে‌ অবসর’ জ্ঞান করবেন না। আমার কাছে ‘ফারেগ’ শব্দ‌টি বড় অপছন্দনীয়‌। বরং নিজেকে সবসময় তা‌লিবে ইলম মনে করবেন। নি‌জে‌কে সর্বদা তা’লীম ও শিক্ষাদীক্ষার সা‌থে যুক্ত রাখবেন। দরসে নেজামীর উদ্দেশ্যই হ‌লো আপনার মা‌ঝে যেন এ যোগ্যতা সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে যায় যে, আপনি সহীহ অর্থে তা‌লি‌বে ইলম হতে পারেন। কাজেই ইল‌ম হা‌সিলের সাথে যেন আপনার সম্পর্ক ছিন্ন না হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের‌কে তা‌লিবে ইলম বা‌নিয়ে দিন, সর্বদা এ দুআই কবেন। কারণ ইলম তো মায়ের কোল থেকে কবর পর্যন্ত অর্জন করার বিষয়।

তিন. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, আপনারা যা কিছু পড়েছেন, যে যে ইলম ও মাযহাবী ইখ‌তিলাফ পড়েছেন, এসব কিছু ইলমে শরীয়ার দিকে আপনা‌কে নিয়ে যাওয়ার জন্যই। এটা কোনো মাকসাদ ও উদ্দেশ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য হলো ইলমের ওপর আমল করা এবং শরীয়তমতে জীবনযাপন করা। আপ‌নি সুন্নাহ মতে জীবন গড়লেন কি না, আপনার মধ্যে কী কী প‌রিবর্তন এলো, আপনার কার্যকলাপে কী প‌রিবর্তন এলো- এটা দেখবার ‌বিষয়। কিয়ামতের মাঠে আপনাকে জিজ্ঞাস করা হবে না, মু’তা‌জিলাদের মতবাদ কি ছিল? মাফঊল কেন মানসুব হয়? বরং জিজ্ঞাসা করা হ‌বে, আপনি ইলম মোতাবেক কতটুকু আমল করেছেন? কাজেই নিজের জীবনকে শরীয়ত মতে গড়ে তুলুন। সুন্নাতের সাঁ‌চে নির্মাণ করুন।

চার. ফারেগ হওয়ার পর সবচেয়ে বড় সমস্য‌া হলো জাগ‌তিক কোনো পেশা গ্রহণ করা। ‌দেখুন- আমার ভাইয়েরা- দু‌নিয়া প্রয়োজনীয় তা ঠিক আছে। কিন্তু তা কখনো জীবনের মাকসাদ নয়। এর উদাহরণ এভা‌বে বুঝুন, ঘ‌রের ম‌ধ্যে ‘বাইতুল খলা’ তথা ওয়াশরুমের প্রয়োজন আছে; কিন্তু ওয়াশরুম ঘরের আসল জায়গা নয়- আপ‌নি সেখানে গি‌য়ে সারা‌দিন বসে থাকবেন,‌ এবং সেটাকে সুন্দর থেকে সুন্দর করার চিন্তায় মগ্ন থাকবেন। জাগ‌তিক বিষয়গু‌লো এভাবে বুঝে নিন। এটা‌ প্রয়োজনীয় ঠিক,‌ কিন্তু জীবনের আসল উদ্দেশ্য নয়। কাজেই দুনিয়াকে জীবনের আসল উপার্জন বানাবেন না। সবসময় নিজের অধ্যয়নে আকা‌বির আসলা‌ফের কুরবানী ও আত্মত্যাগের কা‌হিনী এবং তাদের মালফুয ও উপদেশমালা সামনে রাখবেন। আর সব সময় আপনার উসতাযদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন এবং তাদের দিক‌নির্দেশনার অধীনে চলবেন। অনুবাদ : মুহাম্মাদ সাইফুদ্দীন গাজী