| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ‘গুম হওয়াদের নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ’


‘গুম হওয়াদের নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ’


রহমত ডেস্ক     09 February, 2022     03:57 PM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মানুষ গুম' দুনিয়ার সবচেয়ে নির্মম, নিষ্ঠুর, অমানবিক, পাশবিক এবং চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ। কারণ গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজন এবং পরিবারের সদসদেরকে আমৃত্যু অসহনীয় মর্মন্তুদ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হয়-তারা জানেনা তাদের গুম হওয়া স্বজন বেঁচে আছে নাকি নেই। যার ভয়ংকর উদাহরণ বিএনপির সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু, বিএনপি নেতা হুমায়ুন পারভেজ ও ঢাকার নির্বাচিত কমিশনার চৌধুরী আলমসহ বিরোধী দলীয় সহস্রাধিক নেতা। বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আজও তাদের পরিবার জানেনা তারা কোথায় আছে কিভাবে আছে ? প্রতি মুহুর্ত পার হচ্ছে গুম হওয়া স্বজনদের অধীর প্রতিক্ষায়। স্বজনদের ফিরে পাওয়ার জন্য আর্তনাদ করছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে দুই মন্ত্রীর এই ধরনের উপহাস খুবই নিষ্ঠুর, অশালীন ও বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আজ (৯ ফেব্রুয়ারি) বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দেশে বিদেশের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর হিসেব মতে, ক্ষমতাসীন নিশিরাতের সরকার বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে গুম করেছে। অসংখ্য মানুষকে খুন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার করা হয়েছে। বাংলাদেশে অব্যাহত গুম খুনের ব্যাপারে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। এমনকি গুম বিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশে গুম অপহরণের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরের অনুমতি চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন জানিয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ এপ্রিলে বাংলাদেশকে সফরের অনুরোধ জানিয়েছে কিন্তু ওয়ার্কিং গ্রুপে কোনো আবেদনেই বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি।

তিনি বলেন, দেশে গুম অপহরণ বন্ধে বিএনপি বারবার সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে আসছিলো। কিন্তু ক্ষমতার লোভে নিশিরাতের সরকার গুম, খুন, অপহরণ বন্ধে দেশের কিংবা বিদেশের কারো কোন কথায় গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ক্ষমতা লিপ্সায় র‌্যাব-পুলিশকে গুম-খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে গুম বিষয়ক জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ১২৬তম বৈঠক। বৈঠক চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় বাংলাদেশসহ বিশ্বের হাতেগোনা আরো কয়েকটি দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপকর্ম গুমের অভিযোগ পর্যালোচনা। যেহেতু বর্তমান সরকার গুমের সাথে জড়িত, সেই কারণে তারা গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপিত অভিযোগ গায়ে মাখে না। কিন্তু কথায় বলে, চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। খুনিদের বিদেশে পালানোর পথ রুদ্ধ হয়ে আসতে থাকায় একইসঙ্গে দেশে জনরোষের ভয়ে নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রীরা উদ্ভট কথাবার্তা বকতে শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, বিরোধী শক্তিকে দমন করতে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, নির্যাতন, নিপীড়ণের কথা আজকে বিশ্ব দরবারে প্রমাণিত। তাই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারের মন্ত্রীরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এসব অবিবেচনা প্রসূত, ঘৃণ্য বক্তব্য দিচ্ছে। নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্ত্রীদের মতো গুম-খুন নিয়ে অবাস্তব, আজগুবি ও নিষ্ঠুর পরিহাসমুলক মন্তব্য করে আসছেন। আপনাদের স্মরণ আছে, ২০১৫ সালে ২০ দলীয় জোটের মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্বরত তৎকালীন বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব ও বর্তমানে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী জননেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে রাতের অন্ধকারে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গুম করার পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন-“সালাহউদ্দিনকে খালেদা জিয়া ময়লার বস্তায় ভরে পাচার করে দিয়েছে। ”অধিকাংশ বড় বড় গুম-খুনের পর সরকারের বক্তব্য চরম বিদ্রুপাত্মক। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ছাতার নীচে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গোটা জাতিকে গুম-খুনের নিষ্ঠুর নির্যাতনে ‘খাঁচাবন্দী’ করে রেখেছে।

রিজভী আরো বলেন, প্রশ্ন হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি মনে করেন, 'গুমের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত নয়' তাহলে তাকেই জবাব দিতে হবে গুমের সঙ্গে কারা জড়িত ? কে বা কারা একের পর এক মানুষ গুম খুন করছে ? গুমের তালিকায় থাকা কোন কোন ব্যক্তির ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে ? আমাদের দলের নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ শত মানুষকে ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার গুম করেছে। তাদের কার কার ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে এর জবাব বিনাভোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিতে হবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে, গুম হওয়া বা তার ভাষায় ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা তার কাছে আছে। অবিলম্বে সেই তালিকা প্রকাশ করা হোক। গুম-খুন-অপহরণ করে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে ধরা পড়ে কয়েকদিন আগে এই নিশিরাতের সরকার ঘোষণা দিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নাকি 'মানবাধিকার সেল' গঠন করা হবে। গুমের তালিকায় থাকা কোন কোন ব্যক্তির ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে এমন কথা বলে আবুল মোমেনা সাহেব ইতোমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের 'মানবাধিকার সেল' এর রিপোর্ট কি হবে।